
বেগম খালেদা জিয়া
চার মাস পর লন্ডন থেকে দেশে ফিরছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। কাতারের আমিরের পাঠানো এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ফিরছেন তিনি। তাকে স্বাগত জানাতে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও আশপাশের এলাকায় ব্যাপক শোডাউন করবে বিএনপি। ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড, জাতীয় পতাকা ও ফুল হাতে নিয়ে বিমানবন্দর থেকে গুলশানের বাসা পর্যন্ত রাস্তায় সরব থাকবেন নেতাকর্মীরা।
এ জন্য প্রস্তুতি জোরদার করতে শনিবার সন্ধ্যায় বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে মির্জা ফখরুল জানান, বিমানে নয় তিনি ফিরছেন কাতারের আমিরের পাঠানো এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে অবতরণের পর বিএনপি মহাসচিবসহ দলের সিনিয়র নেতারা উপস্থিত থেকে খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাবেন। বিমান বন্দর থেকে গাড়িতে করে ৮ নম্বর গেট দিয়ে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর গুলশানের উদ্দেশ্যে রওনা হবে।
খালেদা জিয়ার সঙ্গে আসছেন তার দুই পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান ও সৈয়দা শর্মিলা রহমান। এছাড়া খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এজেডএম জাহিদ হোসেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এনামুল হক চৌধুরী, এপিএস মাসুদুর রহমান ও দুই গৃহকর্মী ফাতেমা বেগম ও রূপা হকও তার সঙ্গে আসছেন।
এদিকে বাংলাদেশ বিমানের নিয়মিত একটি ফ্লাইটে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দেশে ফিরবেন বলে দলের পক্ষ থেকে আগে জানানো হলেও শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয়েছে। কাতার আমিরের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করেই ৫ মে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ঢাকায় ফিরবেন বলে দলের যৌথসভা শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, সময় চূড়ান্ত হবার পর জানানো হবে।
ফখরুল জানান, বিএনপি চেয়ারপারসনকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে এক হাতে দলীয়, অন্য হাতে জাতীয় পতাকা নিয়ে দলের কর্মীরা উপস্থিত থাকবেন। তবে কেউ সড়কে মাঝখানে অবস্থান নেবেন না। সড়কের দুই পাশে অবস্থান করবেন। সাধারণ যাত্রীদের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারের অনুরোধ জানান মির্জা ফখরুল।
৭ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে লন্ডনের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন খালেদা জিয়া। ৮ জানুয়ারি লন্ডনে পৌঁছেই তিনি লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি হন। টানা ১৭ দিন লন্ডন ক্লিনিকে অবস্থান করে ওই হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক প্যাট্রিক কেনেডি ও অধ্যাপক জেনিফার ক্রসের তত্ত্বাবধায়নে চিকিৎসা নেন।
এরপর ২৫ জানুয়ারি খালেদা জিয়াকে ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাসায় নেওয়া হয়। বাসায় থেকেও অধ্যাপক প্যাট্রিক কেনেডি ও অধ্যাপক জেনিফার ক্রসের তত্ত্বাবধায়নে তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন। অর্ধযুগের বেশি সময় পর এবারই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ উদ্যাপন করেন খালেদা জিয়া।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ২০১৮ সালে দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ছিলেন। ২০২০ সালে করোনা মহামারির সময় সরকার তাকে বিশেষ বিবেচনায় মুক্তি দেয়। এর পর থেকে তিনি বাসায় থাকলেও করোনায় আক্রান্ত হওয়াসহ বিভিন্ন জটিল রোগের চিকিৎসার জন্য বেশ ক’বার রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন।
গতবছর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতির আদেশে খালেদা জিয়া স্থায়ীভাবে মুক্তি পান। এরপর দুর্নীতির যে দু’টি মামলায় তিনি কারাবন্দি ছিলেন, সেগুলোর রায় বাতিল করেন আদালত।
সাড়ে ৭৯ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস ও চোখের সমস্যাসহ নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন।