ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৩ মে ২০২৫, ২০ বৈশাখ ১৪৩২

ক্ষমতায় গেলে শরিয়া আইন কার্যকর করবে হেফাজত, এএফপিকে জানালেন মামুনুল হক

প্রকাশিত: ০০:৪১, ৩ মে ২০২৫

ক্ষমতায় গেলে শরিয়া আইন কার্যকর করবে হেফাজত, এএফপিকে জানালেন মামুনুল হক

ছবি: এএফপি

এক বছরের বেশি সময় আগে গণআন্দোলনের মুখে সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে ইসলামপন্থী দলগুলো। দীর্ঘদিন ধরে দমন-পীড়নের শিকার হয়ে কোণঠাসা থাকা এসব সংগঠন এবার নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনীতিতে প্রত্যাবর্তনের লক্ষ্যে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ও খিলাফত মজলিস দলের নেতা মুহাম্মদ মামুনুল হক জানান, তারা আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে পার্লামেন্টে প্রবেশের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী।

তিনি বলেন, "আমরা শরিয়া আইন বাস্তবায়ন করব। আমাদের লক্ষ্য একটি ইসলামিক কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, যেখানে কোরআনের নির্দেশনা অনুযায়ী সবাইকে ন্যায়বিচার দেওয়া হবে।"

হেফাজতে ইসলাম, দেশের কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক একটি প্রভাবশালী ইসলামি জোট, আগামী শনিবার ঢাকায় একটি বিশাল সমাবেশের আয়োজন করছে। এটি সাম্প্রতিক সময়ে তাদের অন্যতম বৃহৎ শক্তি প্রদর্শন হতে যাচ্ছে, যার মাধ্যমে তারা ধর্মীয় আবেগকে কাজে লাগিয়ে জনসমর্থন অর্জনের চেষ্টা করছে।

৫২ বছর বয়সী মামুনুল হক দাবি করেন, হেফাজতের অধীনে থাকা হাজার হাজার মাদ্রাসা এবং তাদের পাঁচ লক্ষাধিক সদস্য যদি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়, তবে ভোটে তারা ভালো ফল করবে।

হেফাজতের প্রভাব রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন নয়। ১৫ বছরেরও কম সময়ে দলটি একাধিকবার বিভিন্ন সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

বর্তমানে বাংলাদেশের নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা না হলেও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান, নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুস জানিয়েছেন, ২০২৬ সালের জুনের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

২০১৪ সাল থেকে টানা ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনার সরকার ২০২৪ সালের জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বিরোধীদের বর্জন ও দমন-পীড়নের মুখে পড়ে। তার দীর্ঘ শাসনামলে ইসলামপন্থীদের ওপর কঠোর দমন চালানো হয়। মামুনুল হক নিজেও ২০২১ সালে গ্রেপ্তার হয়ে তিন বছর কারাগারে ছিলেন।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতায় ইসলামপন্থীরা বিক্ষোভ করলে মামুনুলসহ অনেকেই মামলার মুখোমুখি হন। ২০২4 সালের আগস্টে বিক্ষুব্ধ জনতা শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবনে হামলা চালালে তিনি ভারত পালিয়ে যান এবং এখনও সেখানে স্বেচ্ছা নির্বাসনে রয়েছেন।

বর্তমানে ইসলামপন্থীরা ফের সংগঠিত হয়ে রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে শুরু করেছে। তবে তাদের উত্থানে দেশের সুফি মুসলমান, হিন্দু সংখ্যালঘু ও নারী সমাজের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

ইসলামপন্থীরা বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড যেমন গান, নাটক, নারী ফুটবল, ঘুড়ি উৎসব ইত্যাদিকে 'ইসলামবিরোধী' আখ্যা দিয়ে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছে। তারা বিভিন্ন সুফি দরগায় হামলা চালিয়েছে এবং সম্প্রতি খিলাফত মজলিসের সমর্থকেরা একটি পাবলিক লাইব্রেরিতে ঢুকে শত শত বই নিয়ে যায়, যার মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলামের বইও ছিল।

এ বিষয়ে খিলাফত মজলিসের যুবনেতা গোলাম রাব্বানী বলেন, “আমরা সেইসব বই সরিয়েছিলাম যেগুলো নাস্তিকতা ছড়ায়।”

মামুনুল হক বলেন, তারা সরকারি মহিলা কমিশনের বিরোধিতা করে এবং নারী-পুরুষের সমান উত্তরাধিকারের প্রস্তাবসহ যেকোনো ‘বৈষম্য বিলোপকারী’ সুপারিশ প্রত্যাখ্যান করে।

তার দাবি, “কমিশন ইসলামি পারিবারিক মূল্যবোধ ধ্বংস করছে এবং পশ্চিমা আদর্শ চাপিয়ে দিচ্ছে।”

বাংলাদেশের সংবিধান জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে মানলেও হেফাজতের দাবি, দেশের মানুষ ইসলামি আইন চায়।

মামুনুল হক বলেন, “ইসলাম অবমাননার জন্য মৃত্যুদণ্ড বাধ্যতামূলক করা হবে। আল্লাহর বিরুদ্ধে কথা বলা, রাসূলের মর্যাদাহানি ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত — এসব অপরাধে কোনো আপস চলবে না।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা শরিয়া বাস্তবায়ন করব — তবে ন্যায়সঙ্গতভাবে। আমাদের ইসলামিক রাষ্ট্রে ধর্ম নির্বিশেষে সবাই ন্যায়বিচার পাবে।”

সূত্র: এএফপি

এম.কে.

×