ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

ফেসবুকে মির্জা ফখরুলের মেয়ের আবেগঘন পোস্ট

প্রকাশিত: ০৭:৩৮, ৩ ডিসেম্বর ২০২৪

ফেসবুকে মির্জা ফখরুলের মেয়ের আবেগঘন পোস্ট

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: সংগৃহীত

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মেয়ে শামারুহ মির্জার আবেগঘন ফেসবুক পোস্টে ভাইরাল নেটদুনিয়া। গত ১৫ বছরে দেশের জন্য মির্জা ফখরুল ইসলাম ও পরিবারকে যে ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে, তাই-ই ফুটে উঠেছে তাঁর লেখায়। কখনো জেলের অন্ধকার জীবন, কখনো আদালতের দ্বারে দ্বারে ধর্না, আবার কখনো অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে কাটানো বাবার দুঃসহ দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করেছেন ফখরুল-কন্যা শামারুহ মির্জা।

 

বাবা কারাগারে, মায়ের গুরুতর রোগ শনাক্ত,সেই সব দিনের কথা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি আবেগঘন পোস্ট দিয়েছেন মির্জা ফখরুলের মেয়ে শামারুহ মির্জা। তার পোস্টে রয়েছে আক্ষেপের কথাও।

অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী শামারুহ লিখেছেন, ‘ফোনটা আব্বু করেছিল ২০২২ এ, ৫/৬ ডিসেম্বর। আমাকে বলল আম্মুর ডায়াগনোসিসের কথা। আব্বু বলল `চিন্তা করো না মা, ১০ তারিখে সার্জারি করা হচ্ছে, তারপর ফেব্রুয়ারিতে কেমো (কেমোথেরাপি) শুরু।'

‘৮/৯ তারিখে ভোর ৩/৪টার দিকে আম্মু কল করল। আব্বুকে গভীর রাতে ডিবি পুলিশ এসে নিয়ে গেল। পাগলের মতো হয়ে গেলাম।’ লিখেছেন শামারুহ।

২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় ছিল বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ। তার আগে পুলিশ বিশেষ অভিযান শুরু করে। ঢাকায় প্রবেশমুখে করা হয় তল্লাশি। গণহারে গ্রেপ্তার করা হয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের। 

৮ ডিসেম্বর ২০২২ দিবাগত মধ্যরাতে মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসকে বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায় ডিবি। পরে তাদের একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

ওদিকে মির্জা ফখরুলের স্ত্রীর অস্ত্রোপচার দুদিন পরেই। শামারুহ মির্জা লিখেছেন, ‘ডিসেম্বর মাস। টিকিট পাচ্ছি না। যেটা পেলাম, আকাশচুম্বী দাম। আমার তো যেতে হবেই। চলে গেলাম ঢাকা। আব্বুর সঙ্গে দেখা করতে ভীষণ কড়াকড়ি। সুযোগ পেলাম। আব্বুর চোখভরা পানি- ‘মা, তুমি দেখো তোমার মায়ের ব্যাপারটা।’

শামারুহ জানান, তিনি পরে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেন। চিকিৎসক জরুরি ভিত্তিতে তাঁর মায়ের অস্ত্রোপচারের তাগিদ দেন। দিন নির্ধারিত হয়। কিন্তু বেঁকে বসেন তার মা।

তিনি (শামারুহ) লিখেছেন, ‘আম্মু বলল, ‘তোমার আব্বুকে ছাড়া [অস্ত্রোপচার] করব না’। অনেক বোঝালাম। রাজি হলো। সেদিন পুরো হাসপাতালে আমরা দুই বোন। ইউনুস ভাই। আর জাহিদ চাচা। জাহিদ চাচার কথা কি বলব! নিজের চাচার থেকেও বেশি।’

শামারুহ জানান, অস্ত্রোপচারের পুরোটা সময় দুই বোনের সঙ্গে হাসপাতালে ছিলেন এ জেড এম জাহিদ হোসেন। সে সময় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ফোন করেছেন। তার স্ত্রী জুবাইদা রহমান কথা বলেছেন। অনেকেই এসেছেন।

নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে তারেক রহমানকে একজন অসাধারণ মানুষ হিসেবে উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুলের মেয়ে।দুদিন পরে মির্জা ফখরুল জামিন পান।

সিঙ্গাপুরে মির্জা ফখরুলও চিকিৎসকের কাছে যান। সেই ঘটনা উল্লেখ করে শামারুহ লিখেছেন, ‘আব্বুর অসুখ তো আর কমে না। ডক্টর বলল, স্ট্রেস ছাড়েন। তাইলে শরীর ঠিক হবে।’ অন্যদিকে চিকিৎসক রাহাত আরা বেগমকে এক বছর পরে আসার পরামর্শ দেন।

২০২৩ সালের অক্টোবরে মির্জা ফখরুলকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। সেই ঘটনা উল্লেখ করে শামারুহ লেখেন, ‘আব্বুকে আবার জেলে নিয়ে গেল! আর ভাললাগে না। আমি দেশে গেলাম আবার। তারপরের ঘটনা নিয়ে আরেকটি চ্যাপটার (অধ্যায়) লেখা যাবে।’

শামারুহ আরও লিখেছেন, ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালান। সেপ্টেম্বরে তার মাকে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসককে দেখানোর জন্য নির্ধারিত সময় ছিল। ১ সেপ্টেম্বর মির্জা ফখরুল সিঙ্গাপুরে যান। তিনিও সেখানে গিয়েছিলেন।

 

 

 

তাবিব

×