ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

৯ ও ১২ ফেব্রুয়ারি কর্মসূচি

রাজধানীতে ফের বিএনপির দু’দিন পদযাত্রা

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:৫৮, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

রাজধানীতে ফের বিএনপির দু’দিন পদযাত্রা

তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে রাজধানী ঢাকায় ফের দুইদিন পদযাত্রা

তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে রাজধানী ঢাকায় ফের দুইদিন পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। মঙ্গলবার দুপুরে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ৯ ও ১২ ফেব্রুয়ারি পদযাত্রা কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন। উল্লেখ্য, এর আগে ৩০ জানুয়ারি থেকে ঢাকায় ৪ দিনের পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। 
মির্জা ফখরুল জানান, ৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আয়োজনে গোপীবাগ ব্রাদার্স ক্লাব মাঠ থেকে জাতীয় প্রেসক্লাব পর্যন্ত পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। আর ১২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আয়োজনে শ্যামলী ক্লাব মাঠ থেকে রিংরোড, শিয়ামসজিদ, তাজমহল রোড, নূরজাহান রোড, মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড হয়ে বসিলা পর্যন্ত পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে।
ফখরুল বলেন, আমরা সমমনা দলগুলোকে নিয়ে ১১ ফেব্রুয়ারি সারাদেশের ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে আমরা আবারও রাজপথে কর্মসূচি দেব। বিএনপির প্রতিটি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে ফখরুল বলেন, আপনারা পাল্টা কর্মসূচি থেকে সরে আসুন। 
ফখরুল বলেন, আমরা ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা কর্মসূচি দিয়েছি। আমাদের কর্মসূচি ঘোষণার পর আওয়ামী লীগও ইউনিয়ন পর্যায়ে পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এতে করে আওয়ামী লীগের যে চরিত্র সেটা উন্মোচিত হচ্ছে। এখন এটা বলতে আর দ্বিধা নেই যে, আওয়ামী লীগ ত্রাস সৃষ্টি করা, ভয় দেখানো, আক্রমণ করা, হামলা করার কাজে অত্যন্ত পারদর্শী। তিনি বলেন, পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে, দেশের স্থিতিশীলতাকে নষ্ট করার চেষ্টা করছে। এভাবে তারা দেশকে একটা অনিশ্চয়তার দিকে নিয়ে যেতে চায়। তবে আমরা অনুরোধ করছি ১১ ফেব্রুয়ারি আমাদের কর্মসূচির দিনে আওয়ামী লীগ যেন তাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে। 
সামনে হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি থাকবে কিনা এমন এক প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, এখন পর্যন্ত নেই। তবে ভবিষ্যতে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি আসবে কিনা এটা বলতে পারব না। প্রয়োজনই বলে দেবে, ভবিষ্যতে কি কর্মসূচি আসবে। দেশের জনগণ যদি বলে যে, এখন হরতাল বা চাকা বন্ধ কর্মসূচি দেন তখন তাই হবে। তবে আমরা এখন একেবারে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছি। 
অপর এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আন্দোলন মানে শুধু হরতাল নয়। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে দেখেন, সেখানে কয়টি হরতাল হয়? হরতাল হয় না। তবে আন্দোলন হয়। রাস্তায় লোক নামে। লাখ লাখ লোক হেটে যায় তাতেই আন্দোলন হয়ে যায়। ভারতজুড়ে ১৪৯ দিন ধরে, হাটলো কংগ্রেস, এটাই তো আন্দোলন। তাই আমরা যে পদযাত্রা কর্মসূচি দিয়েছে তা কি আন্দোলন নয়। এই আন্দোলনের মাধ্যমে একদিন দেখবেন জনমত এমন জায়গায় আসবে যে, তখন হরতাল দিতে হবে না। এ সরকার এমনিতেই বিদায় হয়ে চলে যাবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা হরতাল দেই না, সরকারি দলই অলিখিতভাবে, অঘোষিতভাবে হরতাল দেয়। আমরা যখন বিভাগীয় সমাবেশ করছিলাম তখন তারা তিনদিন আগে থেকে হরতাল দিয়েছে, রাস্তাঘাট, বাস-ট্রাক-লঞ্চসহ সবকিছু বন্ধ করে দিয়েছে। বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর ১০ দফার চলমান আন্দোলন কোন পথে যাবে কোন পর্যায় যাবে এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তা ভবিষ্যৎ বলে দেবে।

আওয়ামী লীগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য ১৭৩ দিন হরতাল করেছিল, কিভাবে ভাংচুর করেছিল সেটা সবাই জানেন। তবে আমরা বিশ্বাস করি যে, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমেই এ সরকারকে পরাজিত করতে পারব। ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ প্রথমদিক থেকেই চেষ্টা করছে আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দিতে। তবে আমরা সেই সংঘাতকে এড়িয়ে চলছি। বিএনপির আন্দোলনে জনগণের সাড়া দেখতে পেয়ে আওয়ামী লীগ ভীতসন্ত্রস্ত। তাই তারা নিজেদের রক্ষা করার জন্য বিভিন্নভাবে আবার ক্ষমতায় থাকতে চায়। তবে আমরা 
অত্যন্ত সচেতনভাবে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, খালেদা জিয়ার মুক্তি, বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্তির লক্ষ্যে আন্দোলন শুরু করেছি। আমাদের আন্দোলন অহিংস। কিন্তু আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর আক্রমণ করা হয়েছে, গুলি করা হয়েছে। এ কারণে ১০ ডিসেম্বরের বিভাগীয় সমাবেশের আগে আমাদের একজনকে হত্যা করা হয়েছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় অফিস থেকে ৪৩৬ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমাকে এবং মির্জা আব্বাসকেও গ্রেপ্তার করা হয়, তারপরও আমরা উস্কানিতে পা দেইনি। তবে সরকার চেয়েছে উস্কানি দিয়ে একটি সাংঘর্ষিক অবস্থা তৈরি করতে। 
ফখরুল বলেন, দেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দল চাইছে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হোক। তাই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারকে দাবি মানতে বাধ্য করা হবে। জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে আন্দোলনের মাধ্যমে বিএনপি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বাধ্য করবে। 
ফখরুল জানান, সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিভিন্ন ঘটনায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন (এইচআরডাব্লিউ) বিবৃতি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সরকারের বেআইনিভাবে ব্যবহার এবং ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গায় দুষ্কৃতিকারীদের ১৪টি মন্দিরে প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনার নিন্দা জানানো হয়।

মন্দির ও প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ দায়ী ব্যক্তিদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়। একইসঙ্গে সম্প্রতি ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস আয়োজিত আলোচনা সভায় খসড়া ‘তথ্য সংরক্ষণ আইন’ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের উদ্বেগ প্রকাশের বিষয়টি নিয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়। সভা মনে করে প্রস্তাবিত আইন স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও মুক্ত ব্যবসার পরিপন্থি। সরকার ক্ষমতা কুক্ষিগত করার লক্ষ্যে একের পর এক নির্যাতনমূলক আইন প্রণয়নের মাধ্যমে দেশকে পুরোপুরি ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রে পরিণত করছে।
এছাড়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভা মনে করে, চলতি বছরে জ¦ালানি পণ্যে সব ধরনের ভর্তুকি প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্তে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম এক লাফে ২৬৬ টাকা বৃদ্ধির ঘোষণা, ১২ কেজি গ্যাসের সিলিন্ডারের বাজার মূল্য ১ হাজার ৫৫০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা, এক মাস পার হওয়ার আগেই আবারও খুচরা এবং পাইকারি বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। এ বিষয়ে অতিদ্রুত সংশ্লিষ্ট তথ্য সংগ্রহ করে সংবাদ সম্মেলন, সেমিনার এবং দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতিবাদ জানানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। 
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, দলের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, দলের নেতা নাজিমুদ্দিন আলাম, কামরুজ্জামান রতন, আমিনুল হক, বিএনপি চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এ বি এম আব্দুস সাত্তার প্রমুখ। 
পদযাত্রা কর্মসূচি করতে ডিএমপিতে বিএনপির চিঠি ॥ ১০ দফা দাবি আদায়ে রাজধানীতে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করতে অনুমতি চেয়ে ডিএমপিতে (ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ) চিঠি দিয়েছে বিএনপি। মঙ্গলবার ডিএমপিতে দেওয়া চিঠিতে পদযাত্রা কর্মসূচি পালনে পুলিশের সহযোগিতা চায় বিএনপি। 

×