ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আওয়ামী লীগের সমাবেশে কাদের

বিএনপি এখন দিশাহারা

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২২:৫৪, ২৫ জানুয়ারি ২০২৩

বিএনপি এখন দিশাহারা

ওবায়দুল কাদের

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের সমালোচনা করে বলেছেন, বাকশালটা কী, ব্যাখ্যা করেন। বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগ। বাকশাল কিন্তু একদল নয়। বাকশাল হচ্ছে জাতীয় দল। সব দলকে নিয়ে, সব মতকে নিয়েই বাকশাল। মিথ্যা বলেন লজ্জা করে না? জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর কাছে দরখাস্ত করে বাকশালের সদস্য হয়েছিলেন। প্রমাণ আছে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা (জিয়া) দরখাস্ত করে যে বাকশালে যোগ দেন, সে বাকশালকে আপনি একদলীয় বলছেন?

বুধবার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, কৃষক-শ্রমিক আন্দোলন করেছিল, তাদের আপনারা গুলি করে হত্যা করেছিলেন। কৃষক-শ্রমিককে বিএনপির পছন্দ নয়। কৃষক-শ্রমিকদের কোনো প্রতিষ্ঠান আপনাদের পছন্দ নয়। এই নাম শুনলেই আপনাদের অন্তর্জ্বালা। অন্তর্জ্বালায় মরে মির্জা ফখরুল।

খেলা পুরোদমে শুরু হলে বিএনপির গণজোয়ার হারিয়ে যাবে দাবি করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি এখন পথহারা পথিকের মতো দিশেহারা। খেলা তো এখনো শুরু করিনি। মাত্র সূচনা। খেলা যখন হবে, কোথায় যাবে এই গণজোয়ার? এখন নেতাকর্মীরা আছে, জনগণ নাই। এখন জনগণের কথা নাই। জনগণ ভালো আছে তাতে বিএনপির মন খারাপ। বিএনপির আন্দোলনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, হায়রে আন্দোলন! যত নেতা বাড়ে, যত জোট বাড়ে।

বাড়তে বাড়তে ৫৪। জোয়ার যেটুকু ছিল, ঢেউ এসেছিল কিছু। সেই ঢেউ জোয়ার থেকে এখন ভাটা নেমে গেছে। আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান, সরকার পতন, জোট গঠন সবই ভুয়া। সব ভুয়া মিলে ভুয়া। বিএনপি ভুয়া। তাদের কথা লোক আর বিশ্বাস করে না।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের জলিল ভাইয়ের (আব্দুল জলিল) ট্রাম্পকার্ড দেখেছিলাম। ৩০ এপ্রিল (২০০৪)। ফখরুল মনে করেছিলেন, আমি একটা লালকার্ড দেখাইয়া দিই। আমাদের জলিল সাহেবের ট্রাম্পকার্ডের পরিণতি কী, আমরাও জানি। তখন আপনাদের আমল। ট্রাম্পকার্ডের পরে (বিএনপির) লাল কার্ড। ফলাফল শূন্য। ভুয়া। লাল কার্ড, সরকারের পতন, ৫৪ দল, ১০ দফা, তত্ত্বাবধায়ক সরকার, সবই ভুয়া। এরা ভুয়া নিয়েই আছে।

বিএনপির গণঅভ্যুত্থানের ডাকের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এই ভূখ-ে গণঅভ্যুত্থান একটিই হয়েছিল। ঊনসত্তর সালে। নব্বইয়ের আন্দোলনকে আমি বলব- গণআন্দোলন। ওটাও গণঅভ্যুত্থান ছিল না।
অনুষ্ঠানে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের থানা-ওয়ার্ড কমিটিগুলো দ্রুত দিয়ে দেওয়ার জন্য তাগিদ দেন ওবায়দুল কাদের। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে এক জায়গায় বসার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, একজন বসবেন, আরেকজন না থাকলে অসুস্থ হয়ে যাবেন। এটা হবে না। দুজন বসে কমিটিগুলো করেন। সামনে নির্বাচন। গণসংযোগ করতে হবে। সদস্য সংগ্রহ অভিযান করতে হবে। তাই এ বিষয়ে নজর দিতে হবে।
সভাপতিম-লীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম বলেন, আওয়ামী লীগ এখনো মাঠে নামে নাই, কেবল মহড়া দিচ্ছি মাত্র, তাতেই বিএনপিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আওয়ামী লীগ মাঠে নামলে বিএনপির কী হবে? গণঅভ্যুত্থান করতে মানুষ লাগে। কিন্তু বিএনপির কোনো জনসম্পৃক্ততা নেই। সভাপতিম-লীর আরেক সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে পারবে না বলেই বিএনপি ষড়যন্ত্রের পথে হাঁটছে। তিনি বলেন, বিএনপিকে দিয়ে দেশে গণঅভ্যুত্থান সম্ভব না। আওয়ামী লীগকে গণঅভ্যুত্থানের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই।
আগামী নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা করা হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মাঠে থাকবে বলে জানান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ। তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে বিএনপি আবারও ষড়যন্ত্র করছে, কারণ, তারা জানে এ নির্বাচনে তারা হেরে যাবে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফির সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবিরের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, সদস্য সানজিদা খানম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নুরুল আমিন রুহুল এমপি, ডা. দিলীপ রায়, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন মহি, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আশরাফ তালুকদার, আকতার হোসেন, দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ প্রমুখ।
নাকে খত দিয়ে বিএনপি নির্বাচনে আসে কি না দেখার অপেক্ষায় আছি ॥ বিকেলে রাজধানীর বনানী মডেল স্কুল মাঠে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ আয়োজিত শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে যোগ দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, সংবিধানের বাইরে তত্ত্বাবধায়কের নামে কোনো অস্বাভাবিক সরকার আওয়ামী লীগ মানে না, মানবে না। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন যথাসময়ে নির্বাচন কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে। সময় কারও জন্য অপেক্ষা করে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, নাকে খত দিয়ে বিএনপি নির্বাচনে আসে কি না তা দেখার অপেক্ষায় আছি।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলসহ বিএনপি নেতাদের উদ্দেশ করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, সরকারের পতন নয়, আন্দোলন ও নির্বাচনে ব্যর্থ আপনাদেরই পদত্যাগ দাবি করবে আপনাদের নেতাকর্মীরা। তিনি বলেন, সারাদেশে আওয়ামী লীগ সুসংগঠিত, কিন্তু আমরা নেত্রীর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। কারণ এ বীরের দেশে বিশ্বাসঘাতকের অভাব নেই। আজকে বিএনপি ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু করেছে। বিশ্বাসঘাতকদের যোগসাজশ না থাকলে তারা কোনো দিন সফল হবে না, হতে পারে না।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি। বক্তব্য রাখেন সহ-সভাপতি ওয়াকিল উদ্দিন, মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শবনম জাহান, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাগর আহমেদ শামীম প্রমুখ।

×