
মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
পূর্ব ঘোষণা অনুসারে জাতীয় শোক দিবসে খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালন না করে একদিন পর দোয়া মাহফিল কর্মসূচী পালনের মাধ্যমে তার ৭৮তম জন্মদিন পালনে করেছে বিএনপি। মঙ্গলবার দুপুরে নয়াপল্টন দলীয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত এ কর্মসূচীতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা গৃহবন্দী খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করছি। এ ছাড়া দেশে গুম-খুনের ঘটনাসহ মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধায়নে তদন্ত দাবি করছি।
ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়াকে ভিত্তিহীন মামলায় সাজা দেয়া হয়েছে। আমাদের দলের ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে, ৬ শতাধিক নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে, সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া সবসময় গণতন্ত্র চর্চা করেছেন। তাকে অগণতান্ত্রিকভাবে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে। তাকে অবশ্যই মুক্তি দিতে হবে। জন্মদিনে আমরা তার দীর্ঘ জীবন কামনা করছি, আমরা দোয়া করছি তিনি যেন সুস্থ হয়ে আবার আমাদের মাঝে ফিরে আসেন এবং আমাদের দলের নেতৃত্ব দেন।
ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়া একজন সাধারণ নেত্রী নন। ‘তিনি একটি প্রতিষ্ঠান, একটি ইনস্টিটিউশন’। তিনি তার সারাটা জীবন গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন, তার জীবনকে গড়ে তুলেছেন গণতান্ত্রিকভাবে। জীবনের সকল সুখ জলাঞ্জলি দিয়ে দেশের মানুষকে একটা সমাজ উপহার দেয়ার জন্য, মানুষকে মুক্ত করবার জন্য তিনি লড়াই করেছেন। তিনি দেশের রাজনীতির ইতিহাসের অংশ। বিএনপি মহাসচিব বলেন, খালেদা জিয়া ও গণতন্ত্র এই দুটো অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত- এটাকে আলাদা করা যাবে না।
তিনি একজন গৃহবধূ ছিলেন, জাতির প্রয়োজনে, যুগের প্রয়োজনে, মানুষের প্রয়োজনে সেই গৃহবধূ দেশের গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করার জন্য সামনে এসে দাঁড়ান। সারাটা জীবন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করার জন্য, গণতন্ত্র চর্চা করবার জন্যে তিনি সংগ্রাম করেছেন। কিন্তু এখন সরকার তাকে গৃহে অন্তরীণ করে রেখেছেন।
সরকারকে উদ্দেশ করে ফখরুল বলেন, আমাদের ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে যে মামলা আছে সেই মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। এই সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে, পদত্যাগ করে একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। সেই সঙ্গে সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে এবং নতুন একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করে সেই কমিশনের মাধ্যমে একটা জনগণের সরকার ও সংসদ গঠন করতে হবে।
তিনি বলেন, এ সরকারের পায়ের নিচে মাটি না থাকলেও সহজে যাবে না। সেজন্য আমরা জনগণকে সংগঠিত করে সকল রাজনৈতিক শক্তিকে সংগঠিত করে এ সরকারকে সরিয়ে সত্যিকার অর্থে একটা জনগণের সরকারকে ক্ষমতায় নিয়ে আসতে চাই।
ফখরুল বলেন, বর্তমান সরকার দেশের মানুষের সকল আশা-আকাক্সক্ষাগুলোকে ধুলিসাত করেছে, ধ্বংস করে দিয়েছে। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে তারা তাদের শাসন টিকিয়ে রাখতে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করেছে। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের মাধ্যমে ত্রাস সৃষ্টি করে ক্ষমতায় টিকে আছে। এই তো সেদিন ভোলাতে কিভাবে আমাদের ছাত্র দলের নেতা নুরে আলম ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আবদুর রহিমকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
ফখরুল বলেন, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম নেত্রনিউজের প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর এ্যামনেস্টি ইন্টারনেশনাল স্টেটমেন্ট দিয়েছে যে বাংলাদেশে ভয়ঙ্কর মানবাধিকারের যে চিত্র, এই চিত্র অবশ্যই নিন্দনীয়, এটা জঘন্যতম একটা ঘটনা। এই ঘটনাগুলো ঘটার কারণে বাংলাদেশে অবস্থানরত জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস কমিশনের যে হাইকমিশনার তাকে তারা বলেছেন যে, আপনি এটার নিন্দা করেন এবং এর সম্পর্কে নিরপেক্ষ তদন্ত করেন।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে খালেদা জিয়ার জন্মদিন উপলক্ষে দোয়া মাহফিলপূর্ব আলোচনায় আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম, দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু প্রমুখ।