ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মালিকপক্ষ মেনে নিক চা শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি

কামরুন নাহার

প্রকাশিত: ১৫:২৭, ১৫ আগস্ট ২০২২; আপডেট: ১৬:১৫, ১৯ আগস্ট ২০২২

মালিকপক্ষ মেনে নিক চা শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি

চা বাগানে কাজ করছেন নারী শ্রমিকরা

আমার ঘুরে বেড়ানো যে জেলার দৃশ্যট মানসপটে ভেসে ওঠে তা হলো সবুজময় সিলেট জেলা। পাহাড় ও টিলার কারণে এখানকার মেঠোপথ আঁকাবাকা। রাস্তাগুলো উঁচুনিচু। অন্য জেলার তুলনায় সিলেটের আবহাওয়াটাও বেশ সুন্দর।

রবিবার (১৪ আগস্ট) সকালে গণমাধ্যমে দেখলাম, চা-বাগান শ্রমিকরা তাদের বেতন বৃদ্ধির জন্য আন্দোলনে নেমেছে। অথাৎ শ্রমিকরা ১২০ টাকা দৈনিক মজুরি থেকে ৩০০ টাকা দাবি করছেন। সংবাদটি চোখে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে মনে হলো, তিনশ টাকা থেকে একশ বিশ টাকা বাদ দিলে মাত্র ১৮০ টাকা দাবি নিয়ে মাঠে নামলো তারা? আশ্চর্য হলাম বেশ!

বর্তমান ঊর্ধগতির দ্রব্যমূল্যে বাজার দরে তা খুব বেশি টাকা নয়। তাহলে কেন মেনে নিচ্ছেন না মালিকপক্ষ! তাদের দাবিটাও তো অযৌক্তিক নয়।

বর্তমান বাস্তবতায় যেখানে সিলেটে'ই সাত রংয়ের প্রতি কাপ চা খেয়ে এসেছি অথবা বিক্রি হচ্ছে ১০০-২০০ টাকায়। সেখানে একজন চা-শ্রমিকের দৈনিক বেতন কি-না ১২০ টাকা! চতুর বৃটিশ বুদ্ধিজীবিরা অত্যন্ত সুদূর প্রসারী চিন্তায় এদেশে চায়ের ব্যবসা তুঙ্গে তুলতে প্রথমে এদেশের মানুষকে চা পান করানোর কৌশল শেখায়।  বিনামূল্যে বাস স্টপ, লঞ্চ ঘাট এমন কী ট্রেনে চা-পান করানো শুরু করে। 

ধীরে ধীরে বাঙালিরা চা পানে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন। এদিকে বৃটিশদের চা ব্যবসাও সফল।এখন খুব কম বাসাবাড়িতেই চায়ের ধোঁয়া ওঠা সকাল-সন্ধ্যা অনুপস্থিত। চায়ে চুমুক না দিয়ে যেনো আমাদের সকালটা সকালই লাগে না। আবার আকাশ সংস্কৃতির এ যুগে বিজ্ঞাপনের বেড-টি অথাৎ ঘুম ভাঙ্গা চায়ের বিজ্ঞাপন দেখলে তো আমার মতো চা-প্রেমীদের বেসামাল পিপাসা অনুভূত হয়।

শহরের নামি-দামি রেস্তোরাঁ না হয় বাদই দিলাম, যেখানে কম করে হলেও ১০ রকমের বাহারি চায়ের তালিকা ক্রেতার সামনে ম্যানু বুক আকারে রাখা হয়। যা বাবদ কম করে হলেও ৮০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত খরচ করতে হয়।বাস জার্নি, ট্রেন জার্নি কিংবা লঞ্চে সকাল-দুপুর হোক না মধ্যরাত, যাত্রা বিরতি কিংবা চলন্ত অবস্থায় বয়স্ক চাচার চা গরম, চা গরম অথবা সদ্য শিশু বয়স পেরুনো কোন কিশোর যখন বলে ওঠে, চা লাগবোনি চা, গরম চা, সত্যি করে বলুন তো চায়ের ধোঁয়া ওঠা গন্ধ তখন কেমন লাগে? মনে মনে একটা তৃষ্ঞার ভাব চলে আসে।

এবার শীতের কোন এক আটপৌরে সকলের কথা ভাবুন তো! ভারি ভারি কাপড়ের ভেতর থেকে হাত দুটো বের করে যখন চায়ের পেয়ালাটায় হাতের থরথরানি থামানোর চেষ্টা করি আর কুয়াশায় ঢাকা দিনের বাকি কাজগুলো শেষ করার তাগাদা অনুভব করি। তখন কিন্তু চায়ে চুমুক দিতেই হয়! চা পান তো বাঙালির এক ধরনের বিলাসিতা। অতএব বিলাসী অনূভুতির যোগান দাতার দৈনিক মজুরি যদি হয় ১২০ টাকা হয় তখন চায়ের গরম ভাপ আমাদের মনে ফোসকা ফেলে না এতটুকুও! 

প্রতি অর্থ বছরে চায়ের দেশীয়-আন্তর্জাতিক বাজার মূল্য নেহাৎ সস্তা নয়। হিসেব নিলে হয়তো চা বাগান মালিকরা চা-শ্রমিকের দৈনিক ১৪-৪৫ কেজি 'দুটি কুঁড়ি-একটি পাতা' তোলা হাতের স্পর্শ অনুভব করতেন। প্রতি বছর বাজেটের একটা বড় অংশ যেখানে শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যয় হয়, সেখানে চা-শ্রমিকের সন্তানেরা চা-বাগান কেন্দ্রিক বিদ্যালয়ের গন্ডিই পেরুতে পারে না। 

এছাড়া দেশীয় পণ্যের উর্ধ্বগতির মূল্য তালিকার বাহিরে নিশ্চয় চা-শ্রমিকরা জীবনযাপন করে না!। চা-শ্রমিকের  মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলন সময়ের দাবি মাত্র।ছোট্ট একটি দাস প্রথা যেনো এখনো জিইয়ে আছে চা-বাগানে কাজ করার জন্য। চা শ্রমিকরা মজুরি, শিক্ষা আর স্বাস্থ্যসহ নানা ধরনের বৈষম্যের শিকার। চায়ের ধোঁয়ায় মিলিয়ে যাক তাদের মজুরি বৈষম্য। মেনে নিক মালিকপক্ষ শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি।

এসআর

×