
আবারও মহাসড়কে চলন্ত বাসে ডাকাতি ও নারী নিপীড়ন হয়েছে। সম্প্রতি টাঙ্গাইলে একটি যাত্রীবাহী বাসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ডাকাত দল যাত্রীদের সবকিছু লুটে নেয়। এ সময় নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানির ঘটনাও ঘটে। এবারের ঘটনার বিবরণ থেকে বোঝা যাচ্ছে ইতোপূর্বে মহাসড়কে সংঘটিত ডাকাতি ও নারীর শ্লীলতাহানির ঘটনার সঙ্গে যথেষ্ট মিল রয়েছে। দেখা যাচ্ছে একইভাবে যাত্রীবেশী ডাকাত দল ছুরি, চাপাতিসহ দেশীয় অস্ত্রের মুখে চালকের কাছ থেকে বাসটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। পরে তারা যাত্রী, বাসের চালকসহ সবার চোখ-মুখ বেঁধে ফেলে। চলাচলের সময় প্রত্যেক যাত্রীকে তল্লাশি করে মুঠোফোন, নগদ টাকা, সোনা ও অন্য মালামাল লুটে নেয়।
ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি ও দুই নারী যাত্রীকে শ্লীলতাহানির এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। মামলার পর ডাকাত দলকে চিহ্নিত করতে পুলিশ কাজ শুরু করেছে। তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে পুলিশের একাধিক দল কাজ করছে। আমরা আশা করব স্বল্প সময়ের মধ্যেই ডাকাতদল ধরা পড়বে। মাত্র তিন মাস আগে একইভাবে টাঙ্গাইলে মহাসড়কে ‘ইউনিক রয়েলস’ নামের বাসে ডাকাতি ও নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটেছিল। ওই ঘটনায় করা মামলায় সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ।
নৈশ বাসে ডাকাতির ঘটনা আগেও অনেক ঘটেছে, মাঝে অনেকটাই কমে এসেছিল। তবে কি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল ও নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বর্তমানে দুর্বলতা রয়েছে? সাধারণত ডাকাতি শেষে দ্রুততম সময়ের মধ্যেই বাস থেকে নেমে যেত ডাকাতরা। এখন তার বড় ধরনের ব্যতিক্রমে কয়েকটি বিষয় সামনে চলে এসেছে। প্রথমত, ডাকাতদের আত্মবিশ^াস বেড়ে গেছে, কিংবা বলা চলে তাদের প্রতিরোধের মুখে পড়ার কিংবা ধরা পড়ার ঝুঁকি কমে এসেছে। পূর্বাপর প্রস্তুতি ও ব্যবস্থা গ্রহণে তারা এগিয়ে গেছে। একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, দেশব্যাপীই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দৃশ্যমান উন্নতি নেই। দ্বিতীয়ত, চলন্ত বাসকে দীর্ঘ সময় ডাকাত দল নিয়ন্ত্রণে রেখেছে এবং ধীরেসুস্থে নারী নিপীড়ন করেছে। এ থেকে স্পষ্ট হয়ে উঠছে ডাকাতরা শুধু লুণ্ঠনকারীই নয়, তারা একেকজন হয়ে উঠছে নারী নির্যাতনকারী। ফলে নারীদের কাছে এমন বার্তা যাওয়া স্বাভাবিক যে রাতের দূরপাল্লার বাসে তারা অধিকতর অনিরাপদ। ধর্ষণের শিকার হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এটিই এখন সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
সড়ক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে যেসব বিষয় নিয়ে বেশি আলোচনা হয় তার ভেতর লুণ্ঠনের ব্যাপারটি সেভাবে এখন আর আসে না। তাই বিষয়টি বিশেষভাবে আমলে নিয়ে আগামী দিনগুলোয় প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করা চাই। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সড়ক নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ও নিরাপত্তা বাহিনী সিসি ক্যামেরা স্থাপনের পদক্ষেপ গ্রহণ করছে, যা আশ্বস্ত হওয়ার মতোই। যদিও আমরা এই সম্পাদকীয় স্তম্ভে আগে বলেছি, অপরাধী শনাক্তে সিসিটিভি ক্যামেরা তখনই কার্যকর হতে পারে যখন পর্যাপ্ত জনবল থাকবে। সেইসঙ্গে পুলিশের সদিচ্ছা, সক্রিয়তা এবং গতিময়তাও জরুরি। আমরা আশা করেছিলাম, মহাসড়কের অপরাধ দমনে আগামী দিনগুলোয় কর্তৃপক্ষ আরও সফলতার পরিচয় দেবে। অথচ স্বল্প কয়েক মাসের ব্যবধানে আবারও মহাসড়কে ডাকাতি ও শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটল, যা শঙ্কাজনক।
প্যানেল