
দক্ষিণ এশিয়ায় পানের প্রচলন শুরু হয়েছে হাজার বছর আগে। মোগল সাম্রাজ্যের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অন্যতম সাক্ষী পান। ইতিহাস বলে, ভারত উপমহাদেশের রাজা-বাদশারা নিয়ম করে পান চাবাতেন। সম্রাট জাহাঙ্গীরের প্রিয়তমা স্ত্রীরও ছিল পান চিবানোর অভ্যাস। সম্রাট আকবরের আমল থেকে পানের সঙ্গে সুগন্ধি জর্দার ব্যবহারও শুরু হয়।
তবে এবার চমকে দেওয়ার মতো তথ্য চট্টগ্রামে এক খিলি পান খেতে গুনতে হয় ৫ হাজার টাকা!
কী এমন আছে এই বিলাসবহুল পানে?
চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালি থানাধীন লাভলেইন এলাকার ‘পারভীন স্টোর বেনারসি পান ঘর’ নামক ঐতিহ্যবাহী একটি দোকানে বিক্রি হয় এই পাঁচ হাজার টাকার দামি পান। প্রায় ৭০ বছরের পুরোনো এই দোকানটি বাপ-দাদার আমল থেকে শুধুমাত্র পান বিক্রির মাধ্যমেই সংসার চালিয়ে আসছে।
পান দোকানি রাব্বি জানান, এই দামের পানে ব্যবহার হয় ‘কচতুরী’ নামের এক মূল্যবান মসলা। কচতুরী মূলত গর্ভবতী হরিণের নাভির নিচের অংশ থেকে সংগ্রহ করা হয় এবং এটি কয়েকশো বছর পর্যন্ত সংরক্ষণযোগ্য। সামান্য এক টুকরো কচতুরীর মূল্য প্রায় ৪ লক্ষ টাকা। ৫ হাজার টাকার পানে কচতুরী মাত্র জর্দার সমপরিমাণ মিশিয়ে দেওয়া হয়। এতেই প্রায় এক কিলোমিটার দূর থেকেও এই পানের ঘ্রাণ টের পাওয়া যায়।
মূলত এই সুগন্ধির কারণেই সামর্থ্যবান রসিকরা একসময় এই পান খেতেন। তবে বর্তমানে ৫ হাজার টাকার সেই পান বিক্রি হয় না বলে জানান রাব্বি।
এখানে এখনো পাওয়া যায় শাহী পান, জাফরানী পান, অরেঞ্জ পান, এলাচি পান, চকলেট পানসহ প্রায় ১০ ধরনের পান। স্বাদে যেমন ভিন্নতা, তেমনি দামে—১০ টাকা থেকে শুরু করে ৩০০ টাকার পান পাওয়া যায় এখানে।
স্থানীয় বাসিন্দা ফয়সাল জানান, “এই দোকানটি অনেক পুরোনো। মাঝে মাঝে এখান থেকে পান কিনি। মিষ্টি পানের জন্য পারভীন স্টোর বিখ্যাত।”
প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত খোলা থাকে দোকানটি। দিনে কিছুটা কম বেচাকেনা হলেও রাতে জমজমাট থাকে পরিবেশ। শুধু শহরের নয়, ভাটিয়ারী, সীতাকুণ্ডসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা থেকেও পানরসিকরা এখানে ছুটে আসেন এক খিলি মিষ্টি পান খেতে।
এছাড়াও বিয়ে, সামাজিক অনুষ্ঠান, বিভিন্ন ইভেন্টে শাহী মিষ্টি পানের অর্ডার সরবরাহ করে থাকেন এই দোকান মালিকেরা।
মিমিয়া