
বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ, যার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেমন অনবদ্য তেমনি এখানকার প্রাকৃতিক দুর্যোগও কখনো কখনো মানুষের জীবনে ভয়ানক বিপর্যয় বয়ে আনে। তার মধ্যে বন্যা অন্যতম একটি দুর্যোগ, যা প্রতি বছর আমাদের দেশে নানাভাবে আঘাত হানে। গ্রামগঞ্জ শহর পাহাড় নদী কোনো এলাকাই বন্যার হাত থেকে রক্ষা পায় না। এতে করে মানুষের ঘরবাড়ি, ফসল এবং নানা ধরনের অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে যায়। এমনকি অনেক সময় মানুষ ও পশুপাখির প্রাণহানিও ঘটে। তাই এই দুর্যোগ থেকে বাঁচতে আমাদের আগে থেকেই কিছু কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে এবং বন্যাপূর্ব প্রস্তুতি সচেতনতা ও রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনার সমন্বয়ের মাধ্যমেই সম্ভব একটি নিরাপদ ভবিষ্যতের পথে অগ্রসর হওয়া।
প্রথমত, প্রয়োজন সচেতনতা এবং শিক্ষার প্রসার। কারণ মানুষ যত সচেতন হবে তত সহজে তারা দুর্যোগের মোকাবিলা করতে পারবে। গ্রামের মানুষদের মধ্যে দুর্যোগকালীন নিরাপদ আশ্রয়ের ধারণা দিতে হবে। শিশু বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় রেখে গড়ে তুলতে হবে দুর্যোগ সহনশীল অবকাঠামো। এই অবকাঠামোগুলো হতে হবে পাকা শক্ত এবং নদীর পাড় থেকে কিছুটা দূরে যেন বন্যার পানি সহজে প্রবেশ করতে না পারে।
দ্বিতীয়ত, স্থানীয় পর্যায়ে বাঁধ নির্মাণ ও নদী খননের উদ্যোগ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। কারণ নদীর গতি স্বাভাবিক না থাকলে তা সহজেই ভাঙন ও প্লাবনের সৃষ্টি করে। ফলে মানুষ সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসে তাই সময়মতো নদী ড্রেজিং করে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি গাইড বাঁধ ও কংক্রিটের সুরক্ষাবর্ত নির্মাণ করে পানি নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা উচিত। যাতে বড় ধরনের প্লাবন প্রতিরোধ করা যায়।
তৃতীয়ত, প্রযুক্তির সাহায্যে আগাম সতর্কতা পৌঁছে দেওয়া জরুরি। কারণ অনেক সময় মানুষ জানেই না কখন কোথায় পানি বাড়বে। ফলে হঠাৎ করে তারা ক্ষতির সম্মুখীন হয়। তাই আধুনিক আবহাওয়াবিদ্যা এবং স্যাটেলাইট প্রযুক্তির মাধ্যমে সঠিক পূর্বাভাস দিয়ে টেলিভিশন রেডিও মোবাইল মেসেজিং এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মাধ্যমে তা দ্রুত ছড়িয়ে দিতে হবে যেন সবাই আগে থেকেই নিরাপদ স্থানে সরে যেতে পারে।
চতুর্থত, বন্যা ব্যবস্থাপনায় সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয় থাকা আবশ্যক। দুর্যোগকালীন সময়ে সেনাবাহিনী, রেডক্রস, স্কাউট, স্বেচ্ছাসেবক সংস্থা ও স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বয়ে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে নৌকা ট্রলার ও মেডিকেল টিম পাঠিয়ে ত্রাণ বিতরণ ও চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হবে। যেন ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ হয় এবং তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারে। এছাড়াও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দুর্যোগ সহনশীল কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। বন্যা সহনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন করে কৃষকদের মাঝে বিতরণ করতে হবে। যাতে তারা প্রতি বছর একই ক্ষতির মুখে না পড়ে একইভাবে গবাদিপশু রক্ষায় উঁচু প্ল্যাটফর্ম ও অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করা যেতে পারে যাতে প্রাণীগুলো পানিতে ভেসে না যায়।
সবশেষে বলতে হয়, বন্যা একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলেও এর প্রভাব হ্রাস করা সম্ভব যদি আমাদের মধ্যে সচেতনতা থাকে। রাষ্ট্র যদি সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং জনগণ যদি সহযোগিতামূলক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসে তাহলেই আমরা বন্যার ভয়াবহতা রোধ করে সুন্দর ও নিরাপদ একটি সমাজ গড়ে তুলতে পারব। যেখানে জীবন হবে শান্তিময় এবং আশাব্যঞ্জক।
লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ
প্যানেল