
স্বাধীনতার পর ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লুটেরা সরকারের (২০০৯-২০২৪) শাসনামলে ২৮ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে, যা গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়। বিদেশে পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারে বাংলাদেশ ব্যাংক পারস্পরিক আইনি সহায়তার মাধ্যমে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। জব্দ হওয়া সম্পদ কীভাবে প্রস্তাবিত ফান্ডে স্থানান্তর এবং স্বচ্ছতার সঙ্গে ব্যবস্থাপনা করা যায়, তা নিয়েও কাজ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অর্থ উদ্ধারের সার্বিক অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা এবং আইনি বাধা দূর ও সম্ভাব্য কৌশল প্রণয়নে প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অর্থ লোপাটকারীদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া অর্থ ও জব্দ করা সম্পদ ব্যবহারের জন্য সরকার একটি পৃথক তহবিল ব্যবস্থাপনা চালু করবে। শীঘ্রই আনুষ্ঠানিকভাবে তহবিল গঠন করা হবে। এটি ভবিষ্যতে প্রশাসনের জব্দ করা সম্পদ ও অর্থের ব্যবহারের ধারাবাহিকতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করবে। লুটেরাদের অর্থ দিয়ে ফান্ড তৈরি করা হবে, যা দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাংকগুলোর পুনর্বাসন ও জনকল্যাণমূলক কাজ করা হবে। দেশের সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে সহায়তা করতেও এই তহবিল আশার আলো দেখাবে, যদি তা যথাযথ প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করা যায়। সাধারণ আমানতকারী ও দরিদ্রদের ক্ষতিপূরণ দিতে অর্থ আত্মসাৎ ও অর্থপাচারে অভিযুক্তদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া অর্থ ও সম্পত্তি দিয়ে একটি তহবিল গঠন করবে সরকার, যা অত্যন্ত ইতিবাচক উদ্যোগ।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, এই ফান্ড বিশেষ করে আর্থিক অনিয়মে ক্ষতিগ্রস্ত ও জনস্বার্থে আমানতকারীদের পুনর্বাসনে ব্যবহার করা হবে। ইতোমধ্যে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক তদন্ত বা বিচারাধীন ব্যক্তিদের বিভিন্ন ব্যাংকে গচ্ছিত বিপুল পরিমাণ অর্থ জব্দ করেছে। যার পরিমাণ ১ লাখ ৩০ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা। আর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ১৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার এবং ৪২ হাজার ৬১৪ কোটি টাকার অস্থাবর সম্পত্তি জব্দ অবস্থায় রয়েছে। যারা পালিয়ে গেছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে এবং তাদের শেয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, লুটের টাকা দিয়ে ম্যানেজমেন্ট ফান্ড করা হবে। সেই ফান্ড থেকে ডিপোজিটর ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে দেওয়া হবে। আইনের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে ‘এই লুটের টাকা’ দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে দেওয়া হবে এবং তাতে কোনো আইনের ‘ব্যত্যয় ঘটবে না’ এমনটিই আশা করে দেশবাসী। দেশের প্রচলিত আইনে যদি এ রকম কোনো বিধান না থাকে, তবে আইনের কিছু ধারা সংশোধন করা যেতে পারে। মনে রাখতে হবে, লাখো শহীদের তাজা রক্তের বিনিময়ে অর্জিত দেশটা কারও পৈতৃক সম্পদ নয়। এ দেশ ১৮ কোটি মানুষের সম্পদ। লুটেরাদের স্বার্থে কোনো আইনের সংশোধন নয়, আমজনতার স্বার্থেই রাষ্ট্রের সকল কল্যাণকর সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
দেশের প্রায় ৫ লাখ কোটি টাকার অপ্রদত্ত ঋণের একটি বড় অংশই পাচার হয়েছে। অবশিষ্ট অর্থ পাচার না হলেও এখনো আদায় করা যায়নি। এই অর্থ আদায়ের জন্য অর্থঋণ আদালতের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। অর্থপাচারে যদি বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তার জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া যায়, তবে অবশ্যই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নিতে হবে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে। তবে শুধু অনুমান বা অভিযোগের ভিত্তিতে কোনো নিরীহ-নিরপরাধ ব্যক্তি যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হন। দুদক ও রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে সততার সঙ্গে, জবাবদিহির অনুভূতি নিয়ে কাজ করতে হবে রাষ্ট্রের কল্যাণে।
প্যানেল