ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২২ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

মব জাস্টিস ॥ আইন লঙ্ঘনের ভয়ানক রূপ

খাজিদাতুল কবরা মীম

প্রকাশিত: ১৯:৫৭, ২২ মে ২০২৫; আপডেট: ২০:০১, ২২ মে ২০২৫

মব জাস্টিস ॥ আইন লঙ্ঘনের ভয়ানক রূপ

মব জাস্টিস অর্থা জনতার হাতে আইন তুলে নেওয়া- এটি আদতে কোনো ন্যায়বিচার নয়। বরং আইন মানবাধিকারের এক ভয়াবহ লঙ্ঘন। ধরনেরবিচারহয় মূলত গুজব, আবেগ, ক্ষণিকের উত্তেজনা ভ্রান্ত ধারণার ওপর ভিত্তি করে। অভিযুক্ত ব্যক্তি অপরাধী কি না, সে বিষয়ে কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়াই জনতা নিজেরাই বিচারকের ভূমিকা পালন করে। রকম ঘটনায় দেখা যায়- কখনও চোর, ধর্ষণকারী, অপহরণকারী বা ডাকাত সন্দেহে কাউকে ধরে মারধর করা হয়। যদিও অনেক ক্ষেত্রেই অভিযুক্ত ব্যক্তি নিরপরাধ প্রমাণিত হন কিন্তু তখন আর তাদের প্রাণ ফেরানো সম্ভব হয় না।

এটি 'Crowd Psychology’ বা গণ-মানসিকতার একটি ভয়ানক প্রতিফলন। যেখানে ব্যক্তিগত যুক্তি সহানুভূতি হারিয়ে যায় এবং উত্তেজিত জনতা আইন নিজের হাতে তুলে নেয়। প্রশ্ন জাগে, জনতারবিচারকি সত্যিই ন্যায়বিচার? উত্তর হলো না। এতে নেই কোনো তদন্ত, প্রমাণ বা আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ। বিচার হয় শুধু আবেগ আর ভয়ের বশবর্তী হয়ে। মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি জানায়, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত দেশে অন্তত ১১৪টি মব জাস্টিসের ঘটনায় ১১৯ জন নিহত এবং ৭৪ জন আহত হয়েছেন।

* জানুয়ারিতে নিহত: ১৬ জন

* ফেব্রুয়ারিতে: জন

* মার্চের প্রথম দিনে: জন

সবচেয়ে বেশি ঘটনা ঘটেছে ঢাকায়। বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে রীতিমতো যা আজও মনে গেতে গেছে জনগণের।

২০২৪ সালে মব জাস্টিসে নিহত হয়েছিলেন ৫১ জন। আর ২০২৩ সালে এই সংখ্যা ছিল ১২৮ জন। স্পষ্টতই দেখা যাচ্ছে, প্রবণতা দিন দিন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে।

 

মব জাস্টিসের কতিপয় উল্লেখযোগ্য কারণ-

* আইন বিচারব্যবস্থার প্রতি মানুষের অনাস্থা।

* দীর্ঘসূত্রতা বিচারপ্রক্রিয়ার ধীরগতি।

* গুজব ভুয়া তথ্যের বিস্তার।

* সামাজিক অস্থিরতা রাজনৈতিক উত্তেজনা।

* একত্রিত জনতার মনস্তাত্ত্বিক চাপ।

এসব কারণে নিরপরাধ মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন, আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হচ্ছে এবং সমাজে ভয়, আতঙ্ক বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ছে। সবচেয়ে বিপজ্জনক দিক হলো এটি সমাজে একটি অন্ধ বিচারের সংস্কৃতি গড়ে তুলছে। যেখানে সত্য-মিথ্যা যাচাই না করেই মানুষ বিচার করতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে।

এর থেকে পরিএাণের উপায় হতে পারে-

. আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা। প্রতিটি অভিযোগ আদালতের মাধ্যমেই বিচার করা।

. প্রশাসনের দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করা।

. গুজব প্রতিরোধে গণসচেতনতা বাড়ানো।

. পরিবার, বিদ্যালয় সমাজে সহনশীলতা মানবাধিকার শিক্ষা দেওয়া।

. মব জাস্টিসে অংশগ্রহণকারী নেতৃত্বদানকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা।

আজ যাকে অপরাধী ভেবে হত্যা করা হলো, কাল তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হতে পারেন। একজন মানুষের প্রাণের মূল্য কখনই গুজব, সন্দেহ বা আবেগ দিয়ে নির্ধারণ করা যায় না। তাই, জনতার হাতে বিচার নয়, সুশৃঙ্খল প্রাতিষ্ঠানিক বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমেই ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হওয়া উচিত।

আমরা যদি এখনই সচেতন না হই, তবে ভবিষ্যতে পুরো সমাজই অন্ধ বিচার সহিংসতার গহ্বরে নিমজ্জিত হবে। কাজেই আইন, মানবিকতা সচেতনতা- এই তিনটি দিকেই আমাদের জোর দিতে হবে। তবেই আমরা একটি ন্যায়ভিত্তিক মানবিক সমাজ গড়ে তুলতে পারব।

 

লেখক : শিক্ষার্থী, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়

[email protected]

 

প্যানেল

×