ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৩ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জরিপ

চার-পাঁচ হাত বদলে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি পায়

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:১০, ২২ মে ২০২৫

চার-পাঁচ হাত বদলে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি পায়

পণ্যের দাম বাড়ার প্রাথমিক কারণ সরবরাহের ঘাটতি

পণ্যের দাম বাড়ার প্রাথমিক কারণ সরবরাহের ঘাটতি। তবে মধ্যস্বত্বভোগীদের অতি মুনাফার কারণেও পণ্যের দাম উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়ে যায়। কৃষকের মাঠ থেকে উৎপাদিত প্রতিটি পণ্য চার পাঁচ হাত ঘুরে ক্রেতার হাতে পৌঁছায়। যদিও পণ্যের দামের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন কৃষক বা উৎপাদকরা। অর্থাৎ লাভ কিংবা লোকসান দুটিরই বড় হিস্যা যায় কৃষকের ঘাড়ে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক এক জরিপ্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সংস্থাটি চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে দেশের ১৪টি জেলায় অত্যাবশ্যকীয় পাঁচটি কৃষিপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধান করতে জরিপটি করেছে। যে পাঁচটি পণ্যের ওপর জরিপ করা হয় সেগুলো হচ্ছে-চাল, আলু, পেঁয়াজ, ডিম ও ব্রয়লার মুরগি।
জরিপে উঠে আসে বছরের যে সময়ে ধান, আলু ও পেঁয়াজের মতো পণ্যের উৎপাদন মৌসুম থাকে না, ওই মাসগুলোতে এসব পণ্যের দাম বেশি বাড়ে। এ জন্য মৌসুম ছাড়া অন্য সময়ে এসব পণ্য আমদানি উৎসাহিত করার পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক কমানোরও সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রতিবেদনে বলা হয়, মানুষের  দৈনন্দিন খাদ্যের পেছনে যে খরচ হয়, তার প্রায় চার ভাগের এক ভাগ যায় চাল কিনতে। উৎপাদন পর্যায় (কৃষক) থেকে অন্তত পাঁচ-ছয় হাত ঘুরে ক্রেতার কাছে চাল বিক্রি হয়। এ কারণে একজন ক্রেতাকে উৎপাদন ব্যয়ের দ্বিগুণ বা তার বেশি দামে চাল কিনতে হয়।

জরিপে বলা হয়েছে, এক কেজি মোটা চালের (ধান) উৎপাদন ব্যয় প্রায় ৩৪ টাকা, সেই চাল খুচরায় ক্রেতারা কেনেন ৬২-৬৩ টাকায়। বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, গত বছর দেশে বন্যা ও অতিরিক্ত পোকার আক্রমণে আমন ধানের উৎপাদন কম হয়েছিল। এতে বাজারে চালের ঘাটতি দেখা দেয়। এ ছাড়া ডলার সংকটের কারণে প্রয়োজনীয় চাল আমদানিও সম্ভব হয়নি। এ কারণে চালের দাম বাড়তি ছিল। এ ছাড়া ধান চাষের কৃষিজমি কমে যাওয়া, বিদ্যুৎ, সার, ডিজেল, শ্রমিকের মজুরি ও সুদহার বৃদ্ধি প্রভৃতি কারণও চালের মূল্যবৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রেখেছে।
এ ছাড়া প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে গত অর্থবছরে ১ কোটি ৬ লাখ টন আলু উৎপাদন হয়েছিল। আর দেশে আলুর চাহিদা বছরে আনুমানিক ৯০ লাখ টন। তার পরও গত বছরের নভেম্বরে আলুর অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল। কারণ, চাহিদা ও উৎপাদনের তথ্যে বেশ গরমিল ছিল। এ সুযোগে আলুর সরবরাহ ব্যবস্থায় থাকা মধ্যস্বত্বভোগীরা দাম বাড়াতে ভূমিকা রেখেছে। গত বছর প্রতি কেজি আলু উৎপাদনে কৃষকের ব্যয় হয় ১৭ টাকা, যা তাঁরা ১৮ থেকে ৩৫ টাকা দরে বিক্রি করেন।

সেই আলু বাজার থেকে খুচরায় ক্রেতারা কিনেছেন ৪০ থেকে ৯০ টাকা দরে। চালের মতো আলুও চার-পাঁচ হাত ঘুরে ক্রেতার কাছে পৌঁছায়। এর মধ্যে হিমাগার থেকে আলু ছাড়ের সময় দামে বড় পার্থক্য  তৈরি হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, দাম স্থিতিশীল রাখতে আলুর সঠিক চাহিদা ও উৎপাদনের তথ্য জানা জরুরি। সে আলোকে হিমাগার থেকে ধাপে ধাপে আলু ছাড়ের ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

×