ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৯ মে ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বিমান: অযোগ্যতা দায়িত্বহীনতা

প্রকাশিত: ১৯:১৬, ১৮ মে ২০২৫

বিমান: অযোগ্যতা দায়িত্বহীনতা

কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশ বিমানের একটি ড্যাশ ৮-৪০০ মডেলের উড়োজাহাজ নারী-শিশুসহ মোট ৭১ জন যাত্রী নিয়ে আকাশে উড্ডয়নের পরপরই একটি চাকা খুলে পড়ে যায়। অবশ্য তেমন বড় কোনো দুর্ঘটনা হয়নি। পাইলট ও কো-পাইলটের দক্ষতায় বিমানটি শেষ পর্যন্ত ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করতে সক্ষম হয়। ফলে বেঁচে যান যাত্রীরা। এই ঘটনায় বিমানের ফেসবুক পেজে চালকদের প্রশংসা করা হলেও অনেকেই মন্তব্য করেছেন, এটি যান্ত্রিক ত্রুটি নয়, বরং বিমান কর্তৃপক্ষের চূড়ান্ত অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার নিদর্শন। যা বাংলাদেশ বিমানের ক্ষেত্রে আগেও ঘটেছে বহুবার।
ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের হ্যাঙ্গারে দণ্ডায়মান অবস্থায় একাধিক বিমানের পারস্পরিক সংঘর্ষ, বিমানের রানওয়েতে অজ্ঞাত বস্তুর পড়ে থাকা যা বিমানের খুলে যাওয়া অংশ বলে প্রতীয়মান হয়েছে, ভিআইপি যাত্রী নিয়ে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে বিমানের ত্রুটি, পাইলট নিয়োগে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ অযোগ্য বিমানচালক নিয়োগ, সর্বোপরি অব্যাহত লোকসান- এ সবই বারবার ঘটেছে বাংলাদেশ বিমানে। বিমানের সেই অদক্ষতা ও অপকর্মের নিদর্শন অদ্যাবধি চলমান। আরও যা দুঃখজনক তা হলো, কয়েকমাস আগে বাংলাদেশ বিমানের প্রকৌশলীদের চাকরির বয়সসীমা ও সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। ফলে যেখানে তাদের বিমানের রক্ষণাবেক্ষণে আরও দক্ষতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে করার কথা, উল্টো তাদের চরম ব্যর্থতার কারণে আকাশ থেকে খুলে পড়েছে বিমানের চাকা। বারবার এ ধরনের ঘটনা বিমানের ভাবমূর্তিতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ৫ আগস্টের পর দেশের অনেক ক্ষেত্রে সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ এবং দৃশ্যমান অগ্রগতি পরিলক্ষিত হলেও বাংলাদেশ বিমানের ক্ষেত্রে ঘাটতি নিরসনের আদৌ কোনো লক্ষণ দেখা যায় না বললেই চলে।
ইতোপূর্বে ‘আকাশে শান্তির নীড়’ বার্তাবহ বাংলাদেশ বিমানকে একটি অথর্ব প্রতিষ্ঠান বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। সম্প্রতি আগারগাঁওয়ে এনইসি সম্মেলন কক্ষে অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ বিষয়ক টাস্কফোর্স কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। প্রতিবেদনে বাংলাদেশ বিমান পুনর্গঠন নিয়ে উত্থাপিত প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রয়োজনে একটি নতুন এয়ারলাইন্স প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করা যেতে পারে। নতুন এয়ারলাইন্সটির সম্ভাব্য নাম হতে পারে ‘বাংলাদেশ এয়ারওয়েজ’। এটি পরিচালনা করা হবে একটি স্বাধীন বিশ্বমানের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ গঠনের মাধ্যমে। এর জন্য প্রয়োজনে বিদেশ থেকে কোনো পেশাদার বিশেষজ্ঞ ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ করা যেতে পারে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সেবার মান অর্জন ও বাজার ধরে রাখতে ব্যর্থ হলে সংস্থাটি বাজার থেকে অপসারণের পরিকল্পনাও রয়েছে।
অপ্রিয় হলেও সত্য যে, বিমানকে সঠিক নেতৃত্ব দিয়ে লাভজনক করে তোলার মতো দক্ষ ও গতিশীল নেতৃত্বসহ ব্যবস্থাপনা বর্তমানে বাংলাদেশ বিমানে প্রায় নেই। টিকিট বিক্রির টাকা লোপাট থেকে শুরু করে সেবার মান, বিমানবন্দরের নিরাপত্তা, পাইলটের অদক্ষতা ও দুর্নীতি প্রায় সবই ওপেন সিক্রেট। এ অবস্থায় খোল-নলচে পাল্টে ফেলতে হবে বিমানের। বর্তমানে বাংলাদেশ বিমানে উড়োজাহাজের সংখ্যা ২১টি। এর মধ্যে তিনটি লিজকৃত। তবে বিমানের লাভ-লোকসান নিয়ে বিতর্ক দীর্ঘদিনের। এর অবসান হওয়া জরুরি। এর পাশাপাশি বিমান এবং বিমানবন্দরের সার্বিক সেবার মান ও নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক।

প্যানেল

×