
শুক্রবার তপ্ত দুপুরে ঢাকার মানিক মিয়া এভিনিউয়ে নারীসমাজের উদ্যোগে এক ব্যতিক্রমী সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। নারীর অংশগ্রহণে এমন রঙিন, বৈচিত্র্যপূর্ণ ও বৃহৎ সমাবেশ বাংলাদেশে এর আগে খুব বেশি হয়নি। তবে এই আয়োজনে বহু পুরুষও যোগ দেন। ধর্ষণ, নিপীড়ন, অসমতা, অন্যায্যতা, পিতৃতন্ত্র, শ্রমের অবমূল্যায়ন, উগ্রবাদের বিরুদ্ধে সম্মিলিত কণ্ঠে আওয়াজ তুলেছেন নারী-পুরুষ সবাই। ‘নারীর ডাকে মৈত্রীযাত্রা’ ব্যানারে স্লোগানে, গানে, পদযাত্রায় এ আওয়াজ ওঠে। ঘোষণাপত্রে নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা ও বৈষম্য চালিয়ে যাওয়ার অপচেষ্টাকে মেনে না নেওয়ার স্পষ্ট অবস্থানের কথা জানানো হয়। লড়াই অব্যাহত রাখার কথা জানিয়ে ঘোষণাপত্রে বলা হয়, ‘আমরা সরকার ও প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নারীবিষয়ক অবস্থানকে নজরদারিতে রাখব। যে ক্ষমতাকাঠামো জুলুমবাজি জিইয়ে রাখে, সেই কাঠামো ভাঙব। আমরা চুপ করব না, হুমকির মুখে নত হব না। অধিকার আদায়ের দাবিতে অটল থাকব। ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশের স্বপ্ন ও তা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে হাল ছাড়ব না।’
বলা দরকার, সম্প্রতি নারী অধিকার সংক্রান্ত সংস্কার-উদ্যোগের অংশ হিসেবে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। এ কমিশন শ্রমজীবী নারী, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নারী ও অর্থনৈতিকভাবে পশ্চাৎপদ নারীর জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে ৪৩৩টি সুপারিশ পেশ করে। রিপোর্ট প্রকাশের পর থেকেই বিষয়টি নিয়ে নানা ধরনের অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। দেশবাসীর সামনে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ভ্রান্ত ব্যাখ্যাও উপস্থাপন করা হচ্ছে। পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, কমিশনের সদস্যদের নানাভাবে অসম্মান করা হচ্ছে। শুক্রবারের সমাবেশের নেপথ্যে এসব বাস্তবতাও কাজ করেছে।
নারীসমাজ ঘোষণায় তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়ে বলেছে- ‘অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়েও নারীসহ অন্যান্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অগ্রযাত্রায় নানান প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে চলেছে প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী ও পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা। নারীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রার ক্ষেত্রেও তারা বাধা তৈরি করছে। ব্যক্তিগত আক্রমণ, সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাধা এবং অনলাইনে হয়রানি করে রাজনৈতিক পরিসরে নারীর অংশগ্রহণ নিরুৎসাহিত করার তৎপরতা দিবালোকের মতো স্পষ্ট। বিভিন্ন স্থানে অতর্কিত হামলা, আন্দোলনে বাধা, পরিকল্পিত মব-আক্রমণ, মোরাল পুলিশিং, যৌন নিপীড়ন, ধর্ষণ ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, প্রকাশ্যে মারধর এবং নানা ধরনের হুমকি প্রদান অব্যাহত রয়েছে।’
‘নারীর ডাকে মৈত্রীযাত্রা’ আয়োজনের আগে এবং পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে বিরূপ মন্তব্য ও কটাক্ষ করা হচ্ছে। এসব থেকে সমাজে নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। নারীসমাজকে বঞ্চনা, বৈষম্য ও বিভেদের বেড়াজালে আটকে রেখে সমাজ কিছুতেই সামনের দিকে এগোতে পারবে না। সমাজের সুস্থতার জন্যই নারী-পুরুষের সমতা, সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য জরুরি। ধর্মের দোহাই তুলে, নারীর অধিকার হরণ করে, নারীকে তার প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করে দেশের সার্বিক উন্নতি সম্ভব নয়। এমন সমাজই প্রত্যাশিত যেখানে নারীর সম্মান ও নিরাপত্তা সমুন্নত থাকবে। আজকের দিনে নিজ অধিকার আদায়ের জন্য নারীর পথে নামা গোটা সমাজের জন্যই লজ্জার।
প্যানেল