মানবতার দেয়াল একধরনের সাহায্য মাধ্যম, যার মাধ্যমে অসহায় সহায়সম্বলহীন নিঃস্ব মানুষেরা সেবা পেয়ে থাকে।যেখানে দাতা এবং দান গ্রহীতার পরিচয় অজানা থাকে। সোসাল মিডিয়ায় দানের যে প্রচার-প্রচারণা বহর থাকে, ছবি তোলা- সাহায্যকারী লোক শোরগোলের অস্বস্তিকর পরিস্থিতি বিরাজ করে সাধারণ নি¤œ মধ্যবিত্ত, মিসকিন, ছিন্নমূল মানুষ অস্বস্তি বোধ করেন।
প্রকাশ মাধ্যমে হয়তো করতে পারেন না নিজ অপারগতার কারণে। সেখানে মানবতার দেয়াল নিঃশব্দে চুপিচুপি মহৎ কাজটি করে ফেলে। নিঃসংকোচে সাহায্য গ্রহন করে করতে পারে অসহায় মানুষ, হীনমন্যতা কাজ করে না। দাতা ও গ্রহীতা কেউ কাউকে জানতেই পারে, চিনতে পারে না - সমাজিক সম্পর্কে অদৃশ্য ভালোবাসার সৌহার্দ্যপূর্ণ সেতু তৈরি হয়।
মানবতার দেয়াল মানুষকে মানবিক হতে শেখায়। ব্যবহার উপযোগী জিনিসপত্র নষ্ট হচ্ছে না, বরং অন্য কেউ ব্যবহার করে উপকৃত হচ্ছে। একজনের নিকট অপ্রয়োজনীয়,ফেলে রাখা অব্যবহৃত মালামাল, অন্যের নিকট প্রয়োজনীয় হতে পারে। ব্যাক্তি কর্তৃক ব্যবহৃত পুরাতন অর্ধপুরাতন সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত হয় মানবতার দেয়ালে ।
অসহায় মানুষের কথা বিবেচনা করে সামর্থ্যবানরা নিজের পুরাতন কাপড়চোপড়, বই, আসবাবপত্র একটি নিদিষ্ট দেয়ালের সামনে রেখে দেয়। যাদের এই জিনিসগুলো প্রয়োজন তারা সেখান থেকে নিজেদের জন্য সংগ্রহ করতে পারে। আমরা যখন বৈষম্যবিহীন, আর্দশ সমাজ নির্মাণ করতে চাই তখন সমাজের সকল স্তরে নজর দেওয়ার প্রয়োজন হয়।
প্রতিটি স্তরের সাথে কানেকশন তৈরি করার প্রয়োজন পড়ে। সামাজিক অসমতা যত দ্রæত কমানো যায়, সমাজে পরস্পরে মনোভাব পরিবর্তন আসা শুরু করে। মানবতার দেয়াল মূলত মানুষকে দান করতে উদ্ভদ্ধ করে এবং স্বেচ্ছাসেবার জন্য অনুপ্রেরণা জাগায়।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মানবতার দেয়াল একান্ত জরুরি জনমানুষের জন্য। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে পরিচিত হলেও এদেশের জনসাধারণ মধ্যবিত্ত, নি¤œ মধ্যবিত্ত, অস্বচ্ছল এবং দরিদ্র্যর সাথে যুদ্ধ করে যাচ্ছে। জীবনযাত্রার মান সচলায়তনের জন্য প্রতিটি দিন তাদের সংগ্রামের। আয়ের স্বল্পতায় স্বাভাবিক চাহিদা পূরণে হিমশিম খায়। শহরাঞ্চলের বস্তিবাসী ও ছিন্নমূল মানুষের সংখ্যাটা কম না।
অর্থনৈতিক ভাবে দূর্বল এই মানুষগুলোর কাছে সাহায্যে হাত বাড়ানোর আর্দশ ব্যবস্থা হলো মানবতার দেয়াল। প্রয়োজনীয় কাপড়চোপড়, জিনিসপত্র সংগ্রহ করে নিজের প্রয়োজন মেটাতে পারবে তারা। ইতিমধ্যে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের এলাকাগুলোতে মানবিক কাজের নির্দশন হিসাবে মানবতার দেয়াল গড়ে উঠতে শুরু করছে। রাজধানী মিরপুর, মোহাম্মদপুর, লালবাগ, খিলগাঁও,বাসাবো, বনশ্রী সহ এবং গ্রাম এলাকায় মানবতার দেয়াল বাড়ছে।
সম্ভাবনাময় তরুণরা সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবকমূলক এই কাজের মাধ্যমে সমাজের প্রতিটি স্তরে পৌছে গিয়ে অন্ধকার অপসারণের চেষ্টা চালাচ্ছে। একাজে তাঁরা সাড়া ফেলতে মানুষের মাঝে সচেতনতার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। প্রয়োজনীয় কাপড়চোপড় দেয়ালগুলোতে ঝুলিয়ে দিচ্ছে লোকজন। সেখান থেকে ছিন্নমূল, বস্তিবাসী সহ দুঃস্থ মানুষ নিজের পছন্দ মত কাপড় নিতে পারছে। বর্তমানে শীতের তৎপরতায় তরুণরা আরো সক্রিয়ভাবে কার্যক্রম চালানোর জন্য এগিয়ে আসছে।
মানবতার দেয়াল থেকে সাহায্য ও স্বেচ্ছাসেবার শিকড় পৌঁছে যাচ্ছে তৃণমূল পর্যায়ে। সমাজের সাথে আমাদের মানবিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করবে মানবতার দেয়াল। মানুষের মাঝে অসমতা দূর করতে চাই কার্যকরী পদক্ষেপ। কেননা যেকোনো জাতীয় সমস্যা মোকাবিলায় ব্যক্তির অংশগ্রহণ জরুরি। ব্যক্তি যখন সংগঠিত হয় তখন বড় বড় সমস্যা সহজেই উতরে যাওয়া সম্ভব হয়। তরুণ্যের আদম্যশক্তিতে মানবতার দেয়াল সবখানে ছড়িয়ে পড়ুক।
শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ
কুতুব