সম্পাদকীয়
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) প্রতিবছর নভেম্বর মাসে কর মেলার আয়োজন করে আয়কর প্রদানে জনগণকে উৎসাহিত করার জন্য। তবে করোনার জন্য ২০২০ সাল থেকে এ মেলার আয়োজন করা হয় না। এবারও হবে না আয়কর মেলা। তবে করদাতাদের জন্য সুখবর হলো, অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমার সেবা উন্মুক্ত করেছে এনবিআর।
এখন যেকোনো করদাতা চাইলে অনলাইনে নিবন্ধন করে ঘরে বসেই তার আয়-ব্যয়ের তথ্য জানিয়ে এ বছরের আয়কর রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। গত ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪-২৫ করবর্ষের রিটার্ন দাখিলের জন্য এ ব্যবস্থা চালু করেছে এনবিআর। এ বিষয়ে এনবিআরের স্লোগান হচ্ছে, ‘না দাঁড়িয়ে লাইনে, রিটার্ন দিন অনলাইনে’।
প্রতিবছর ১ জুলাই থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত করদাতারা আয়কর রিটার্ন জমা দিতে পারেন। চলতি অক্টোবর মাসের গত সপ্তাহে অনলাইনে বা ই-রিটার্ন জমাকারীর সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়ে গেছে। অনলাইনে করদাতাদের প্রবল আগ্রহ দেখে এনবিআর আশা করছে, চলতি অর্থবছরে অনলাইনে অন্তত ১৫ লাখ রিটার্ন জমা পড়বে।
গত সপ্তাহে কয়েকটি খাতের পেশাজীবীদের অনলাইনে রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যেমন- চার সিটি করপোরেশনে অবস্থিত আয়কর সার্কেলের অধিভুক্ত সরকারি কর্মচারী, সারা দেশের তফসিলি ব্যাংকের কর্মকর্তা, মোবাইল প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা এবং ইউনিলিভার বাংলাদেশ, ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি, ম্যারিকো বাংলাদেশ, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ, বাটা শু কোম্পানি (বাংলাদেশ) ও নেস্লে বাংলাদেশের কর্মীদের।
এর আগেও অনলাইনে রিটার্ন জমার ব্যবস্থা করেছিল এনবিআর। তখন করদাতাদের তেমন একটা উৎসাহ দেখা যায়নি। ২০১৬ সালে ৫১ কোটি টাকা খরচ করে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার ব্যবস্থাটি চালু করা হয়েছিল, যা চার বছর চালু থাকে। পরে ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে এনবিআরের আয়কর বিভাগের একটি বিশেষ দল মাত্র দুই কোটি টাকা খরচ করে নতুন অনলাইন ব্যবস্থা চালু করে। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দুই লাখের বেশি করদাতা অনলাইনে রিটার্ন জমা দেন। সরকারি-বেসরকারি সেবা পেতে এখন আয়কর রিটার্ন জমার রসিদ লাগে। এসব সেবা পেতে আয়কর দেওয়া অত্যাবশ্যকীয়। এ ছাড়া বিনিয়োগ করে কর রেয়াতের সুযোগও নিতে পারেন করদাতারা।
দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের কর-জিডিপির অনুপাত সবচেয়ে কম। এখনো ১০ শতাংশের নিচে। এই হার প্রতিবেশী দেশ নেপালের অর্ধেকের চেয়ে কম। এমনকি বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান বা পাকিস্তানও। এ ছাড়াও বাংলাদেশে সামগ্রিক রাজস্বে প্রত্যক্ষ করের চেয়ে পরোক্ষ করের অনুপাত বেশি। তাই ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের কাছ থেকে বেশি কর আদায় করতে হবে। এতে প্রত্যক্ষ করের অনুপাত বাড়বে। তবে কর প্রদানে মানুষের একধরনের অনীহা রয়েছে।
দুঃখজনক বিষয় হলো, প্রায় ১৮ কোটি মানুষের বসবাস এ দেশে, অথচ করদাতা রয়েছে মাত্র ১০ লাখ। দেশের উন্নয়নে করের জাল বিস্তার করা একান্ত প্রয়োজন। প্রতিটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সঠিকভাবে তদারকি দরকার। বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে কর প্রদানে মানুষের উৎসাহ বাড়াতে হবে। নিরীক্ষার নামে করদাতাদের হয়রানি বন্ধ চান দেশের ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) কর্মকর্তারা। এ বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনাসহ সম্পূর্ণ স্বচ্ছ হতে হবে নিরীক্ষা কার্যক্রম।