ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১

শেখ কামাল ও জেন জি

ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল

প্রকাশিত: ২০:৫১, ৪ আগস্ট ২০২৪; আপডেট: ২০:৫৮, ৪ আগস্ট ২০২৪

শেখ কামাল ও জেন জি

.

শুরুতেই স্বীকার করে নেই আজকের উত্তাল বাংলাদেশেবাংলাদেশকে যখন নতুন করে চিনছি, তখন শিখছি অনেক নতুন নতুন টারমিনোলজিও- যেমন জেন জিহলফ করে বলছি গত শতাব্দীর শেষার্ধ্বে যে সময়টায় আমার জন্ম, সেই সময়টায় বেড়ে উঠতে গিয়ে টাইপরাইটার দেখেই আমরা অবাক হতাম, কম্পিউটারতো ছিল চিন্তারও বাইরেবলাকা সিনামা হলে ঢাকা কলেজ থেকে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ছবি দেখা ছিল আমাদের জমানার বিরাট এডভেঞ্চারাস বিলাসিতাআজকের মতো নেটফ্লিক্সে চ্যানেল টিপে মুহূর্তে হাজারো সিনেমা থেকে পছন্দেরটি বেছে নেওয়া আমাদের সেই জমানায় ছিল স্বপ্নেরও অতীত

কাজেই ঘটমান এই দিনগুলোতে যতই বুঝতে পারছি যে, জেন জিকে চেনাতো দূরে থাক, এই শব্দটাই আমার অনেক অচেনা আর চেষ্টা করেছি নতুন এই জেনারেশনকে আরেকটু ভালোভাবে চেনার-বোঝার, তখনই ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টিয়ে সমাগত আরেকটি পাঁচ আগাস্ট, শেখ কামালের আরও একটি জন্মদিনআর দিনটি নিয়ে লিখতে বসে হঠাই উপলব্ধিটা হলোজেন জির ভাষা বুঝে উঠতে আমাদের  দেরিটার সুযোগে যেমন ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের সুযোগ করে নিয়েছে কিছু অশুভ শক্তি, ঠিক তেমনি আমরা শেখ কামালের মতো ক্ষণজন্মা মানুষটিকে কখনোই ঠিক-ঠাক বুঝে উঠতে পারিনি বলেই তাকে নিয়ে আমাদের কতই না বিভ্রান্তিএতে তার কি ক্ষতি হয়েছে জানি না, কিন্তু দেশের ক্ষতি হয়ে গেছে অনেক অনেক বেশি

ক্ষনজন্মা একজন মানুষ ছিলেন শেখ কামালছিলেন তার সময়ের চেয়ে অনেক বেশি এগিয়েপৃথিবীতে তিনটি দশকও পুরো করতে পারেননি, কিন্তু এর মধ্যেইতো করে গেছেন কত কিছুইএদেশের ক্রীড়াঙ্গনে আধুনিকতার জনক তিনিতার প্রতিষ্ঠিত আবাহনী ক্রীড়া চক্রের হাত ধরেই হাতে সেলাই করা ফুটবল আর গেঞ্জি-হাফপ্যান্ট সরিয়ে এদেশে আধুনিক জার্সি পরা ফুটবলারদের পায়ে গড়িয়েছে আধুনিক ফুটবলআবার এই ফুটবলকে তিনি কাজে লাগিয়েছিলেন অন্য জায়গাতেওকামাল স্পোর্টিং ক্লাব আর ইস্ট অ্যান্ড স্পোর্টিং ক্লাবের মাধ্যমে তিনি পুরনো ঢাকার মানুষকে শুধু ক্রীড়ামনস্কই করে তোলেননি, তাদের তিনি তুলেছিলেন আওয়ামী লীগের নৌকায়ওযার সুফল এখনো ভোগ করছে আওয়ামী লীগ তার মৃত্যুর প্রায় পাঁচটি দশক পরও

আজকের জেন জি গেম অব থ্রোনস জাতীয় যেসব সিরিজের অনুরক্ত, এ জাতিকে তাও চিনিয়েছিলেন এই শেখ কামালইসেই জমানায় বাংলাদেশের একমাত্র টিভি চ্যানেল বাংলাদেশ টেলিভিশনের তিন পর্বের প্রথম টিভি সিরিয়ালটি যাত্রা তার হাতেইঠিক তেমনি ঢাকা জেলা পরিষদ মিলনায়তনে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম মঞ্চনাটক মঞ্চায়নের কারিগরও শেখ কামালইনিজে যেমন খেলতেন ক্রিকেট, বাস্কেটবল আর ফুটবল, তেমনি বাজাতেনও নানা ধরনের বাদ্যযন্ত্রছিলেন যেমন সফল ক্রীড়া সংগঠক, তেমনি সংগঠিত করেছিলেন ব্যান্ড সংগীত দলওসত্যি বলতে কি, স্বাধীন বাংলাদেশে ব্যান্ড সংগীতের পুনঃজাগরণ শেখ কামালের হাত ধরেই

একাত্তরে শেখ কামাল যোগ দিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধেভারতে কমিশনপ্রাপ্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রথম ব্যাচের কর্মকর্তা ছিলেন শেখ কামালপাসিং আউটের মেধা তালিকায় তার স্থান ছিল পঞ্চমমুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওসমানীর এডিসির দায়িত্ব পালন করেছিলেন শেখ কামালতারপর স্বাধীন বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর চাকরি ছেড়ে ফিরে এসেছিলেন প্রাণের ঢাকার বিশ্ববিদ্যালয়েছাত্রলীগের সভাপতিত্ব নেননি কখনইকিন্তু ছাত্র সমাজকে সংগঠিত করায় রেখেছিলেন দারুণ ভূমিকাঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি কেন্দ্রিক নাট্য আর সংস্কৃতিচর্চার কেন্দ্রেও ছিলেন শেখ কামাল

অথচ এই শেখ কামালকেই আমরা চিনে উঠতে পারিনিপঁচাত্তরের পর তাকে নানা রঙের কালিতে থেকে যে বিকৃত উপস্থাপনা জাতির সামনে, তাতে পার্থিব মায়া কাটিয়ে সাত আসমানের ওপারে শেখ কামালের যায় আসে না কিছুইকিন্তু আমাদের তো এসে গেছে কত কিছুইএই যে, আমাদের জেন জিদের কথা আর কাজ আমাদের এত বেশি অচেনা, তাদের এখন যতই আরও ভালোভাবে ক্রমাগত বোঝার চেষ্টা করছি, শুধুই মনে হচ্ছে যদি শেখ রেহানার মতো শেখ কামালও বড় বোন শেখ হাসিনার সঙ্গে জার্মানি চলে যেতেন! গত শতাব্দীর শেষ ভাগে এসে যিনি আজকের জেন জির ভাষায় কথা বলছিলেন আর করে দেখাচ্ছিলেন, তার সময়ের চেয়ে বহু দশক এগিয়ে থাকা এই মানুষটির সঙ্গে যদি এই জাতি আরও বেশি সময় পেত, আজকে অশুভ শক্তি বোধ করি কখনোই আজকের মতো এভাবে এই দেশটাকে নিয়ে খেলার সুযোগ পেত নাভালো থাকুন শেখ কামাল, জন্মদিনের শুভেচ্ছা নিন! অসময়ে আপনাকে হারিয়ে আপনার বাংলাদেশ ভালো নেই।      

লেখক : ডিভিশন প্রধান

ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশন

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ও

সদস্য সচিব, সম্প্রীতি বাংলাদেশ

 

×