ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৩ মে ২০২৫, ২০ বৈশাখ ১৪৩২

ক্ষয়ক্ষতির হিসাব-নিকাশ

-

প্রকাশিত: ২০:৩৪, ৩০ জুলাই ২০২৪

ক্ষয়ক্ষতির হিসাব-নিকাশ

সম্পাদকীয়

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে গত কয়েকদিনে রাজধানীসহ সারাদেশে যে ব্যাপক ভাঙচুর, লুটপাট, ধ্বংসযজ্ঞ ও অগ্নিসন্ত্রাস সংঘটিত হয়েছে তার খবরাখবর বেরিয়ে আসছে ক্রমশ। রাজধানীসহ সারাদেশের তথ্য-পরিসংখ্যান এখনো পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। এসব ক্ষয়ক্ষতির হিসাব-নিকাশ করতেও সময় লাগবে। তবে প্রাথমিকভাবে কমপক্ষে দেড় লাখ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে সংশ্লিষ্ট মহল থেকে।

মনে রাখতে হবে যে, এখন পর্যন্ত জনজীবন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এলেও তা  পুরোপুরি সচল হয়নি। এটি গতিশীল ও স্বাভাবিক হতে আরও সময়ের প্রয়োজন। কার্ফু সীমিত সময়ের জন্য শিথিল করা হয়েছে। যানবাহন চলাচলও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসেনি। রাজধানীতে মেট্রোরেল সেবা বন্ধ রয়েছে। মেট্রো কর্তৃপক্ষ বলেছে, যে তিনটি স্টেশনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে তা মেরামত করতে কমপক্ষে এক বছর সময় লাগবে। রেল চলাচলও বন্ধ। ফলে রাজধানীর সঙ্গে সারাদেশের যোগাযোগ এবং আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্য ও অভ্যন্তরীণ ব্যবসা-বাণিজ্য, লেনদেন প্রায় বন্ধ।

বিমান চলাচল পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকার কারণে। প্রবাসী আয় আসাসহ আন্তর্জাতিক লেনদেনও কমে এসেছে। রপ্তানিতে শীর্ষস্থান দখলকারী তৈরি পোশাক খাত একদিন বন্ধ থাকলে প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার ৮শ’ কোটি টাকা ক্ষতি হয় বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত। তদুপরি ক্রয়াদেশ বাতিলের ঝুঁকি তো রয়েছেই। দোকান মালিক সমিতির সভাপতির ভাষ্যে জানা যায়, সারাদেশে দোকানপাট বন্ধ থাকলে ২ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয় প্রতিদিন।
কোটা আন্দোলন দেশের সচল অর্থনীতিতে করোনা মহামারি চলাকালীন লকডাউনের চেয়েও বড় ধাক্কা দিয়েছে। যা সামাল দিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে অর্থ বরাদ্দসহ অনেক সময়ের প্রয়োজন। অর্থনীতিতে গতি ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সবকিছু সচল ও স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসার জন্য সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে দলমত নির্বিশেষ সর্বশক্তি নিয়োগ করা আবশ্যক। তা না হলে ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে থাকবে প্রতিদিন, যা শেষ পর্যন্ত ছাড়িয়ে যেতে পারে কয়েক লাখ কোটি টাকা। তবে সবকিছু ছাপিয়ে যে প্রশ্নটি উঠে এসেছে তা হলো- এতো বিপুল পরিমাণের ধ্বংযজ্ঞ ও অগ্নিসন্ত্রাসের দায় নেবে কে বা কারা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতিধারা থামিয়ে দিতে পরিকল্পিতভাবে দেশব্যাপী চালানো হয়েছে এতো ব্যাপক-বিস্তৃত সহিসংতা ও ধ্বংযজ্ঞ। যে কারণে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি, যা পূরণ করতে সময় লাগবে। 
তবে এর জন্য সর্বাগ্রে চাই সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনা, যা জনজীবন সচল ও স্বাভাবিক রাখার জন্য অপরিহার্য। সেজন্য আপাতত সব পক্ষকে একযোগে কাজ করতে হবে। গত কয়েকদিনের কোটা আন্দোলন এবং পরবর্তীতে এটি সহিংস ও সংঘাতপূর্ণ হয়ে ওঠায় সবচেয়ে কষ্ট ও দুর্ভোগে পড়েছেন খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গরিব ও খেটে খাওয়া মানুষের প্রতি সাহায্য-সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের প্রতি।

তবে সরকারের একার পক্ষে সব সম্ভব নয়। এর জন্য সমাজের বিত্তবান শ্রেণিসহ উদ্যোক্তাদেরও এগিয়ে আসা আবশ্যক। দ্রুত আইনশৃঙ্খলাসহ সর্বত্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক। তবেই দেশবাসীর মধ্যে ফিরে আসবে শান্তি ও স্বস্তির সুবাতাস।

×