ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৬ জুন ২০২৪, ২ আষাঢ় ১৪৩১

শিক্ষা-শিক্ষক এবং প্রসঙ্গ কথা

ড. মো. আইনুল ইসলাম

প্রকাশিত: ২০:৫৬, ২৩ মে ২০২৪

শিক্ষা-শিক্ষক এবং প্রসঙ্গ কথা

প্রাথমিক কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় যেখানেই হোক শিক্ষকদের অবস্থান

প্রাথমিক কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় যেখানেই হোক শিক্ষকদের অবস্থান, মর্যাদা ও বেতনের করুণ দশা এখনো পরাধীনকালের মতোই আছে। একটা সময় শিক্ষক বলতে বোঝাত জীর্ণশীর্ণ চেহারা, কলারে ময়লা মলিন জামা, পায়ে ছেঁড়া জুতা, হাতে তালি দেওয়া ছাতা। আজও শিক্ষকদের সেই একই দশা আছে

যদিও ‘গড়’ দিয়ে সামগ্রিক বিচার করা যায় না, পরিসংখ্যানের উপাত্ত ও সূচকেও অনেক গোঁজামিল থাকে, তবু নানা পরিসংখ্যান ও তথ্য তুলে ধরে অর্থনীতি বিষয়ে দেওয়া বক্তব্যের যৌক্তিকতা প্রমাণ করাই এখন অনেকটা রীতি। গড় দিয়ে সামগ্রিক অবস্থা তুলে ধরার এই রীতির সঙ্গে বাস্তব অবস্থার কতটা মিল আছে সে প্রশ্ন তুললে গাণিতিক নানা বিষয় তুলে ধরে উত্তর দেওয়া হয়।

গণিত কম জানলে প্রশ্নকারী দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে চুপ হয়ে যান। এই যেমন মাথাপিছু আয় দিয়ে দেশের সব মানুষের আর্থিক অবস্থা বোঝানো হয়। তবে এ সময় বলা হয় না যে, জাতীয় সম্পদের কত শতাংশ ধনীর আছে, কত শতাংশ দরিদ্রের; কিংবা পথের ধারে-ল্যাম্পপোস্টের নিচে সকাল-সন্ধ্যা বসে থেকে ভিক্ষে করে দরিদ্র মানুষটি কত পেল, আর নয়টার অফিস বারোটায় ঢুকে লালফিতায় আটকে রাখা ফাইলে কলমের এক খোঁচাতেই কত পেল বড় কর্তাটি। কেউ যদি এ দুজনের অর্জিত অর্থ যোগ করে গড় আয় সমান বলেন তাহলে তা নিশ্চিতভাবেই ডাহা মিথ্যা হবে।

আর এজন্যই আধুনিক পরিসংখ্যান বিজ্ঞানের জনক স্যার রোনাল্ড এলমার ফিশার বলেছেন, ‘পৃথিবীতে তিন ধরনের মিথ্যা আছে- সাধারণ মিথ্যা, ডাহা মিথ্যা এবং পরিসংখ্যান।’ ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে মহাকাশ বিজ্ঞান, গণিত, ফিজিক্স ও জেনেটিকস শাস্ত্রে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করে সেখানেই অধ্যাপনা করা এলমার ফিশারের উক্তি নিশ্চয়ই হেলাফেলার নয়। তার ওপর তিনি আধুনিক পরিসংখ্যান শাস্ত্রের জনক।

সে যাই হোক, পরিসংখ্যানের কথা তুলেছি, কারণ বাংলাদেশে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য জাতীয় বাজেট পেশের সময় এসেছে। নতুন অর্থমন্ত্রী কেমন বাজেট দেবেন তা নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হচ্ছে। অনেকের মতে, জাতীয় বাজেট পেশ আসলে বছরব্যাপী কোনো শ্রেণির জন্য ভোগ-উপভোগ আর কোনো শ্রেণির দুর্ভোগের নতুন পর্ব।

বাজেটে সামষ্টিক অর্থনীতির কোন খাত কী পেয়েছে এবং কী প্রয়োজন ছিল তা নিয়ে অনেক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ হবে। পরিসংখ্যান-তথ্য-উপাত্ত-ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ দিয়েই যে বাজেটের বিশেষ কোনো খাতের কথা বলতে হবে তেমনটা নয়। শিক্ষা-শিক্ষক ও সারমেয় বা কুকুরের আর্থ-সামাজিক অবস্থানের অন্তর্নিহিত চরিত্র ও যোগসূত্র দিয়েও আমাদের জাতীয় বাজেটে অতিগুরুত্বপূর্ণ খাতের বাস্তবতা তুলে ধরা যায়। সেটাই এই লেখার লক্ষ্য।
দিনকয়েক আগে রিক্সায় করে যাচ্ছিলাম। যে মানুষটি আমাকে নিয়ে যাচ্ছিল সে একেবারে বিজ্ঞাপনের মডেল মুখশ্রীর সুঠামদেহী এক তরুণ, বয়স বড়জোর ৩২। যেতে যেতে পেছন থেকে চুলের ছাঁট, পেশি আর উচ্চতা দেখে ভাবছিলাম, ছেলেটি হয়তো নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য, গোয়েন্দা বা অন্য কোনো কাজে রিক্সা চালাচ্ছে।

হঠাৎ ছেলেটি গান গেয়ে উঠল, ‘আমি পারি না আর পারি না আমি কেন মরি না, আজরাইল কি চিনে না আমারে রে।’ কিছুক্ষণ থেমে আবারও গানের নতুন কলি শুরু করল। আমি পেছন থেকে জিজ্ঞেস করলাম, কী ব্যাপার, এই বয়সে এই গান গাইছো? ছেলেটি গান থামিয়ে বলল, ‘আগে বাবার হোটেলে খাইতাম। এখন বড় ছেলে আমি, সংসারের হাল ধরছি।’

কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে বললাম, ‘পড়াশোনা কতদূর করেছ।’ বলল, ‘ক্লাস সিক্স। বাবার অঢেল ছিল। ঘুরছি আর খাইছি। মা-বাপ চইলা গেল। সব শেষ হয়া গেল। বাপ কইতো, ‘বুঝবি বুঝবি। না থাকলে বুঝবি।’ এখন বুঝি।’ আমি আর কথা বাড়াতে চাইলাম না। তবুও বললাম, ‘বিয়ে তো করোনি। ছেলেমেয়ে হলে লেখাপড়া শেখাবে, যত কষ্টই হোক। লেখাপড়া আলাদা একটা শক্তি।’ ছেলেটি বলল, ‘বিয়া করছি। ১১ বছরের একটা মেয়ে আছে।’

জিজ্ঞেস করলাম, স্কুলে যায়? ‘হ যায়, ক্লাস থ্রিতে মনে হয়।’ বললাম, ভালো। মেয়েদের লেখাপড়া করা জরুরি, কষ্ট হলেও পড়াবে। ছেলেটি বলল, ‘প্রতি মাসে তিন হাজার টাকা পাঠাই ওর পড়ালেখার জন্য।’ বললাম, ঢাকায়? ‘না, নীলফামারী শহরে। বাড়ি সাত-আট মাইল দূরে। প্রতিদিন দল বাইন্ধা অটোতে স্কুলে যায়।’ জিজ্ঞেস করলাম, কেন বাড়ির কাছে স্কুল নেই? ‘আছে, সরকারি প্রাইমারি স্কুল। সেইখানে মাস্টার ক্লাসে ঢুইকা পোলাপানরে কয়, ‘এই তোরা পড়। তারপর চেয়ারে পা তুইলা ঘুমাই পড়ে।’ 
আমি শিক্ষক মানুষ। শিক্ষকের ‘বদনাম’ শুনে ভালো লাগল না। আর কথা বাড়ালাম না, একেবারে চুপ হয়ে গেলাম। তবে যেতে যেতে মনে পড়ল ছোটবেলায় স্কুলের পাঠ্যবইয়ে পড়া সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘পাদটীকা’ গল্পটির কথা। সমকালীন সমাজ ও মানুষের জীবনগাথাকে উপজীব্য করে লেখা ওই গল্পটি স্বাধীন বাংলাদেশের পাঠ্যবইয়ে মুক্তিযুদ্ধের দুই-আড়াই দশক পড়েও ছাত্রদের জন্য অবশ্যপাঠ্য ছিল।

আমাদের শিক্ষা নীতিনির্ধারকরা হয়তো গল্পের পটভূমি পরাধীনকালের বিবেচনায় সেটি বই থেকে ছেঁটে দিয়েছেন। কিন্তু ওই গল্পে চিত্রিত শিক্ষা ব্যবস্থার দৈন্য, শাসকশ্রেণির বৈষম্যনির্ভর মানসিকতা, বড় কর্তাদের বিলাস-ব্যসন এবং শিক্ষক সমাজের দারিদ্র্য-অসহায়ত্বের বিষয়বস্তুগুলোকে ছেঁটে ফেলতে পারেননি। স্বাধীন বাংলাদেশের পাঠ্যবইয়ে দুই-আড়াই দশক ‘পাদটীকা’ গল্পটি টিকে ছিল।

পরে মার্কিন ক্রীতদাস বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের সবকিছু বাজারের হাতে ছেড়ে দেওয়ার ‘সুপরামর্শের’ জোয়ারে সেটি ‘বস্তাপচা’ হয়ে নি¤œমাধ্যমিকের পাঠ্যবই থেকে উঠে গেছে। নব্বই দশকপরবর্তী প্রজন্মগুলো হয়তো গল্পটির নামই শোনেনি। যেমন- তারা শোনেনি কবি কাজী কাদের নেওয়াজের মুঘল বাদশাহ আলমগীরের রাজকুমার ও তার শিক্ষককে নিয়ে লেখা ‘শিক্ষাগুরুর মর্যাদা’ কবিতার কথা।

নতুন প্রজন্ম দূরে থাক, বয়োজ্যেষ্ঠ অনেকেই জানে না শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়ের (১৯০১-১৯৭৬) ‘আমাদের সেকেন্ড প-িত’ গল্পে বহু বছর আগে উঠে আসা অযোগ্য শিক্ষকের বিদ্যাস্বল্পতা ও টাকার প্রতি অধিক ঝোঁক, নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষকের আর্থিক অসচ্ছলতা আর শিক্ষককে সম্মান ও সম্মানী দিতে সমাজ ও রাষ্ট্রের অসীম কার্পণ্যের কথা। এসব ভাবতে ভাবতেই আমি গন্তব্যে চলে এলাম।

তরতাজা রিক্সাচালক তরুণটিকে কটা টাকা বেশি দিয়ে রিক্সা থেকে নেমে যেতে যেতে বললাম, মেয়েটিকে পড়াশোনা করিও। কাজের ব্যস্ততায় বিষয়টি মাথা থেকে চলে গেলেও রাতে বিছানায় ঘুমাতে যাওয়ার আগে আবারও মনে পড়ল। 
একজন শিক্ষক হিসেবে বলছি না, সবকিছু বিচার-বিশ্লেষণের পর নির্মোহ যে কোনো মানুষই বলবেন যে, ঊনবিংশ শতকের পটভূমিতে বিংশ শতকে প্রকাশিত (১৯৫২, চাচা কাহিনী) ‘পাদটীকা’ কিংবা কিছু সময় পরে লেখা ‘শিক্ষাগুরুর মর্যাদা’, ‘আমাদের সেকেন্ড প-িত’ গল্প-কবিতার প্রাসঙ্গিকতা, গল্পের চরিত্র ও সমাজবাস্তবতা এখনো অটুট আছে। স্থান-কালটা শুধু বদলেছে। এই যেমন- পাদটীকা গল্পে কেন্দ্রীয় চরিত্র দুটি।

একদিকে সংস্কৃত ভাষার একজন প-িত, অন্যদিকে সাদা চামড়ার লাট সাহেব এক শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে স্কুল ভিজিটে আসা ট্রেনের চাকায় পা কাটা পড়া তিন ঠ্যাঙ্গা এক কুকুর। কাহিনীকাল ১৯১০-১৯১৫, তৎকালীন শ্রীহট্ট (বর্তমানে সিলেট) জেলার করিমগঞ্জ। আর বর্তমানকালের গল্পে একদিকে আছে নীলফামারী জেলার কোনো এক গ্রামের প্রাথমিক স্কুলের একজন শিক্ষক, যিনি ক্লাসে ঢুকে কোমলমতি শিশুদের ‘এই তোরা পড়’ বলে চেয়ারে পা তুলে ঘুমিয়ে পড়েন। আর অন্যদিকে আছে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধাপ্রাপ্ত সারমেয় বাহিনীর (ডগ স্কোয়াড) এক সদস্য।

ইংরেজরা চলে গেছে ৭৭ বছর হলো, পাকিস্তানিদেরও আমরা তাড়িয়ে দিয়েছি সেই ৫৩ বছর আগে। কিন্তু নির্মোহ দৃষ্টিতে বিশাল ব্যাপ্তির দুই সময়কালের গল্পে উঠে আসা মানুষের জীবন ও সমাজ বাস্তবতা বিচার-বিশ্লেষণ করলে নিরাশ হতে হয়ে। কারণ, প-িত (এখন বলা হয় শিক্ষক) আর রাষ্ট্রের বাদামি চামড়ার লাট সাহেব ও সারমেয় অবস্থান এখনো অটুট আছে; নাম-উপাধি-দৃশ্য ও পরিবেশনের ধরন হয়তো কিছুটা বদলেছে।

একটি অনুষ্ঠানে গিয়েছি, যেখানে আর কিছু সময় পরেই রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ের লোকজন অতিথি হয়ে আসবেন। চারদিকে কড়া নিরাপত্তা। ডগ স্কোয়াডের কুকুর আঁতিপাঁতি করে খুঁজে দেখছে কোথাও কিছু আছে কিনা। এক সময় খোঁজাখুঁজি শেষে একজন নিরাপত্তা সদস্য গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে কুকুর হাতে অপেক্ষা করছেন। দু-চারটি কথা হলো। আমি সদস্যটির সঙ্গে থাকা ভয়াল দর্শন কুকুরটিকে দেখছি।

আধ হাত লম্বা জিহ্বা আর দেড়-দুই ইঞ্চি লম্বা দাঁত বের করে শিকারের জন্য অস্থিরভাবে পায়চারি করছে, মুখ থেকে লালা ঝরছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কী খায় কুকুরটি। বলল, ‘প্রতিদিন এক কেজি গরুর মাংস, দুধ, ডিম আরও অনেক কিছু।’ পরে আমি মোটামুটি হিসাব করে দেখলাম খাদ্য, আবাসন, চিকিৎসা, দেখভালকারী, পরিবহন খরচসহ সব মিলিয়ে কুকুরটির পেছনে দৈনিক কমপক্ষে ৪ হাজার টাকা করে ব্যয় হয়।

অর্থাৎ মাসে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। ওই ডগ স্কোয়াডে এ ধরনের আরও অনেক কুকুর আছে। নীলফামারী বা দেশের অজপাড়া গাঁয়ের প্রাথমিক স্কুলের একজন শিক্ষকের বেতন কত? চাকরির একদম শুরুতে প্রাইমারি স্কুলের সহকারী শিক্ষকের মোট বেতন হয় ঢাকা সিটি এলাকায় ১৯ হাজার ৫০০ টাকা। অন্যান্য সিটি এবং সাভার পৌর এলাকায় মোট ১৮ হাজার ৫০০ টাকা। এর বাইরের শিক্ষকদের মোট বেতন ১৭ হাজার ৯৫০ টাকা।

প্রতিবছর বেতন বৃদ্ধি পায় ৫ শতাংশ বা ৫৫০ টাকা করে। এছাড়া বছরে মূল বেতনের সমপরিমাণ দুটি উৎসব ভাতা। এই লেখায় উঠে আসা নীলফামারী জেলার আলোচ্য শিক্ষকের বেতন ধরে নিই ২৫ হাজার টাকা। তাহলে ওই শিক্ষক ডগ স্কোয়াডের সদস্য কুকুরটির কত পায়ের সমান? কঠিন অংক। আসলে তিনি কুকুরটির লেজের সমান।

ওই শিক্ষক মূল্যস্ফীতির এই যুগে পরিবারের টানাপোড়েন আর অশান্তি সহ্য করে যদি শ্রেণিকক্ষে একটু ঘুমিয়ে পড়েন তাহলে তাকে কতটা দোষ দেওয়া যায়। প্রাথমিক কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় যেখানেই হোক শিক্ষকদের অবস্থান, মর্যাদা ও বেতনের করুণ দশা এখনো পরাধীনকালের মতোই আছে। একটা সময় শিক্ষক বলতে বোঝাত জীর্ণশীর্ণ চেহারা, কলারে ময়লা মলিন জামা, পায়ে ছেঁড়া জুতা, হাতে তালি দেওয়া ছাতা।

আজও শিক্ষকদের সেই একই দশা আছে। উপরন্তু রাজপথে তাদের এখন বেতনের দাবিতে নেমে মারও খেতে হয়। ‘শিক্ষক জাতির মেরুদ-’ এখন শুধু ছোটদের বইয়েই শোভা পায়। এক সময় এই বাক্যটিও পাদটীকা, শিক্ষাগুরুর মর্যাদা, আমাদের সেকেন্ড মাস্টার গল্প-কবিতার মতোই মুছে যাবে। কিন্তু কেউ ভাবছে না শিক্ষা ও শিক্ষক নিয়ে শিক্ষার নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টিভঙ্গি না পাল্টালে কিভাবে বাংলাদেশ উন্নত হবে। 

বিগত এক-দেড় দশকে শিক্ষা নিয়ে অনেক কাজ হয়েছে। সরকারের কর্ণধার চেষ্টা করছেন, সেটি অনস্বীকার্য। তবে যারা সরকারের হয়ে বাজেট প্রণয়নে লিপ্ত তাদের মধ্যে যে ব্রিটিশ-পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক মানসিকতা এখনো অটুট আছে সে কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়। তা না হলে কিভাবে তারা বছর বছর শিক্ষা খাতে বাজেট কমিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ ছিল ৮৮ হাজার ১৬৩ কোটি টাকা।

এতে টাকার অঙ্ক বাড়লেও জিডিপির তুলনায় বরাদ্দ বরং বিগত অর্থবছরের তুলনায় কমেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ছিল জিডিপির মাত্র ১.৭৬ শতাংশ, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ছিল ১.৮৩ শতাংশ। যেখানে জিডিপির অন্তত ৪ শতাংশ প্রয়োজন সেখানে বাজেট কমিয়ে দেওয়া কোন যুক্তিতে সম্ভব সেটি অনেকের মাথায় আসে না।

অথচ দামি গাড়ি হাঁকিয়ে, সুশোভন সরকারি বাসভবনে থেকে, নানা সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে যারা সরকারকে বাজেট প্রণয়নে সহায়তা করছেন তারা কিন্তু বাংলাদেশেরই কোনো স্কুল-কলেজের কোনো না কোনো শিক্ষকেরই ছাত্র ছিলেন। কুকুর বা সারমেয়দের সঙ্গে শিক্ষা ও শিক্ষকদের তুলনা করলে তাদের কি একটুও খারাপ লাগবে না? 

লেখক : অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা; সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদশে অর্থনীতি সমিতি

×