
সম্পাদকীয়
স্বার্থান্বেষী একটি গোষ্ঠী সম্প্রতি নতুন শিক্ষাক্রম সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য পরিবেশন ও ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে জনমনে বিরূপ মনোভাব সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এতে আঘাত লাগে সাধারণ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে। একই সঙ্গে জাতীয় সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের পরিপন্থি কাজকে শিক্ষাক্রমের অংশ বলে প্রচার করা হচ্ছে। কিছু লোক ব্যাঙের লাফ বা হাঁসের ডাক দিচ্ছেÑ এমন ভিডিও আপলোড করে জানানো হচ্ছে এটি নতুন শিক্ষাক্রমের শিক্ষক প্রশিক্ষণের অংশ, যা সম্পূর্ণ মিথ্যাচার। নতুন শিক্ষাক্রমে সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শনের কথা বলা হয়েছে। বাঙালির ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতিকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে বিকশিত করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
মিথ্যা অপপ্রচারের মাধ্যমে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করার প্রচেষ্টা যারা করছে, তাদের এরূপ কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য সতর্ক করেছে এনসিটিবি। একই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ধরনের গুজব আপলোড, শেয়ার ও মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকার জন্যও অনুরোধ করেছে। শিক্ষাক্রম নিয়ে অপপ্রচার করলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও বলেছে এনসিটিবি।
শিক্ষা ব্যবস্থায় সর্বপ্রথম বড় ধরনের পরিবর্তন আসে ২০০১ সালে। তখন মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার ফল প্রকাশের ক্ষেত্রে বিভাগ মূল্যায়ন পদ্ধতির পরিবর্তে আসে জিপিএ পদ্ধতি। ২০০৩ সালে এটি উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) স্তরে চালু করা হয়। কয়েক বছর লেগেছিল শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের এর ফল পদ্ধতি বুঝতে। ২০০৮ সালে মুখস্থনির্ভর পড়াশোনার পরিবর্তে শিক্ষার্থীদের প্রকৃত মেধা যাচাই করার লক্ষ্যে সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতি চালু হয়েছিল। এটি চালু করার উদ্দেশ্য ছিল নোট-গাইড বইয়ের ব্যবহার বন্ধ এবং শিক্ষার্থীদের কোচিং-প্রাইভেট থেকে বিরত রাখা। তবে আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়নি। শিক্ষকরা বিষয়টি ভালোভাবে না বোঝায় শিক্ষার্থীদের কোচিং-প্রাইভেট বা সহায়ক বইয়ের দ্বারস্থ হতে হয়েছে আগের চেয়ে বেশি। অভিভাবকদেরও পড়তে হয়েছে ভোগান্তিতে। শিক্ষা ব্যবস্থায় যে কোনো পরিবর্তনে আলোড়ন তৈরি হবে দেশজুড়ে, এটাই স্বাভাবিক।
চলতি বছরে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হওয়ায় অভিভাবকরা সবচেয়ে বেশি বিচলিত। কেননা, এতদিন মুখস্থবিদ্যার ওপর নির্ভরশীল সন্তানদের হঠাৎ করে বাসায় কোনো পড়ালেখার চাপ নেই, শুধু ব্যবহারিক কাজ ছাড়া। এসবের সঙ্গে মানিয়ে নিতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। এছাড়াও আলাদা খাতায় লেখার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। বইয়ে আছে নানা ছক, যেগুলো সঠিকভাবে পূরণ করার মধ্যেই আছে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন। মাঝে মধ্যে অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করার সময় প্রযুক্তির সাহায্য নিতে হয়। এই শিখন পদ্ধতি দেশের মানুষের কাছে একেবারেই নতুন।
তাই এ শিক্ষার ইতিবাচক দিকগুলো সরকারি সম্প্রচার মাধ্যমে নিয়মিত প্রচার করা উচিত। চলতি ডিসেম্বরে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণে এনসিটিবির আয়োজন বছরের শুরুতেই ব্যাপকভাবে তা করার প্রয়োজন ছিল। তাহলে নানাবিধ সমালোচনা কম হতো। তবে অভিভাবকদের যেসব বিষয়ে ঘোর আপত্তি রয়েছে, সেগুলো মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) কর্তৃপক্ষ মূল্যায়ন করবে বলেই প্রত্যাশা। শিক্ষা ব্যবস্থার যে কোনো পরিবর্তন শহরের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি প্রত্যন্ত অঞ্চলের কোমলমতি শিশুরাও কিভাবে মানিয়ে নেবে, সেটাও ভাবতে হবে।