ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৯ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

নির্বাচনী পরিস্থিতি কোন দিকে

নাজনীন বেগম

প্রকাশিত: ২০:৪৫, ৪ ডিসেম্বর ২০২৩

নির্বাচনী পরিস্থিতি কোন দিকে

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সর্বাধিক প্রাধান্য দিয়ে এখন রাজনীতির মাঠ সরগরম

বিএনপির এক অংশ তৃণমূল বিএনপি নামে রাজনীতির মাঠে তাদের কর্মচাঞ্চল্যে এগিয়ে যাচ্ছে, যে খবর এখন দেশজুড়ে আলোচিত। নির্বাচনী সুবাতাস সারাদেশে আনন্দঘন পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। সেইসঙ্গে বিজয়ের মাসে রয়েছে বিজয়ের আনন্দও। স্বাধীনতাকামী বীর বাঙালিরা মুক্তিযুদ্ধে যে অকুতভোয় সংগ্রামে নিজেদের উৎসর্গ করেছিলেন তেমন বিজয়গাথা তো ইতিহাসের অমূল্য সম্পদ। বর্তমানে নির্বাচন পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকবে তা অননুমেয়

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সর্বাধিক প্রাধান্য দিয়ে এখন রাজনীতির মাঠ সরগরম। ইতোমধ্যে নির্বাচনী তফসিলও ঘোষণা হয়ে গেছে। তবে দেশের সব রাজনৈতিক দল এখন অবধি নির্বাচনে না আসায় কিছুটা শঙ্কা থেকে যাওয়াই স্বাভাবিক। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের সমূহ সম্ভাবনায় নির্বাচন কমিশন যথাযথ পদক্ষেপ নিয়ে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে। সেসব খবর নিয়ত উঠে আসছে গণমাধ্যমের সংবাদ পরিবেশনায়। তার মধ্যে শুভ পদধ্বনিতে বিজয় মাস তার আগমন বার্তা জানিয়ে দিচ্ছে। বিজয় কেতন ওড়ার এই সুবর্ণ মাসটি জানান দেয় মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসের রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের এক আগুন ঝরানো পথের বিপন্ন যাত্রা। মুক্তিকামী মানুষের অদম্য সংগ্রাম আর বিপন্ন বাঙালির মরণপণ জীবন বাজি রাখার ইতিবৃত্ত আজও সহিংস এক দাবানল। 
বিএনপি ছাড়া অন্য অনেক দলকে আসন্ন নির্বাচন অর্থবহ করে তুলতে তাদের কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে ব্যস্ত থাকতে দেখা যাচ্ছে। বিএনপির এক অংশ তৃণমূল বিএনপি নামে রাজনীতির মাঠে তাদের কর্মচাঞ্চল্যে এগিয়ে যাচ্ছে, যে খবর এখন দেশজুড়ে আলোচিত। নির্বাচনী সুবাতাস সারাদেশে আনন্দঘন পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। সেইসঙ্গে বিজয়ের মাসে রয়েছে বিজয়ের আনন্দও। স্বাধীনতাকামী বীর বাঙালিরা মুক্তিযুদ্ধে যে অকুতভোয় সংগ্রামে নিজেদের উৎসর্গ করেছিলেন তেমন বিজয়গাথা তো ইতিহাসের অমূল্য সম্পদ। বর্তমানে নির্বাচন পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকবে তা অননুমেয়। বিএনপির একটা বিরাট অংশ এখন অবধি নির্বাচনের বাইরে।

তবে ধারণা করা হয়েছিল বিএনপি যদি নির্বাচনে আসে তাহলে তফসিল পুনঃঘোষণা হতে পারে। তবে সে সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। ইতোমধ্যে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় পার হয়ে গেছে। ফলে সঙ্গত কারণে আর কোনো সুযোগ থাকছে না বড় দল বিএনপির নির্বাচনে অংশ নেয়ার। তবে সম্প্রতি কিছু বিএনপি নেতার অন্য ব্যানারে নির্বাচনী প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার খবর অনেককে চমকে দিচ্ছে। বিএনপির অন্যতম বড় নেতা শাহজাহান ওমর আওয়ামী লীগে যোগদানই নয়, প্রার্থিতার আবেদনে ভোটযুদ্ধেও নামছেন। নৌকা প্রতীক নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে নিজের নতুন অবস্থান সংশ্লিষ্টদের বিস্মিত করেছে। 
বিএনপি ছাড়াই বর্তমান দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কোন অবস্থানে যেতে পারে এমন প্রশ্ন অনেকের মনে রয়েছে। তবে দেশে সংঘটিত প্রতিটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন ও বিরোধী পক্ষের মতদ্বৈততা নতুন কোনো বিষয় নয়। গ্রহণ-বর্জনের তিক্ত অভিজ্ঞতায় নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হয় এবং গ্রহণযোগ্যতা পাওয়াও যেন সময়ের ব্যাপার। এ শুধু বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রেক্ষাপট নয়, সারা বিশ্বের। যুগে যুগে দেখা গেছে ক্ষমতাসীন আর বিরোধী পক্ষগুলোর মধ্যে নির্বাচনপূর্বে বিরোধ থাকলেও নির্বাচন পরবর্তীতে তা মীমাংসা কিংবা সমঝোতার মাধ্যমে অনেকাংশে দূর হয়ে যায়। টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে নিয়ে গেছেন উন্নয়নের শিখরে। যা বিশ্বসভায়ও নজর কেড়েছে। এমন অকাট্য বাস্তবতা অস্বীকারের কোনো সুযোগ নেই। 
এবার আমাদের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিদেশী শক্তির নানামাত্রিক মন্তব্য আর আলোচনায় স্বস্তিদায়ক পরিবেশ বিঘিœত হচ্ছে। তবে আশ্বস্তের বিষয় সবকিছু ছাপিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সরকার পতনের আন্দোলন, আগুনসন্ত্রাস আর সহিংস অবস্থার মধ্য দিয়ে নির্বাচন যে গতিময় হয়ে উঠছে তার চেয়ে সম্ভাবনাময় বার্তা তো অন্য কিছু হতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব, দেশপ্রেমের অনন্য দৃঢ়শক্তি আর উন্নয়নের অবধারিত দৃশ্যমান কর্মপ্রকল্পের নজরকাড়া উপস্থাপনে দেশ ও জাতিকে যে সমৃদ্ধ অবস্থানে পৌঁছে দিচ্ছেন সেটা একটি স্বাধীন দেশের অবধারিত শক্তিময়তা তো বটেই।

বঙ্গবন্ধুকন্যা দুই হাত উন্মুক্ত করে জনকল্যাণমূলক কাজের মাধ্যমে বাঙালিকে নানা উপহার দিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমানে দেশে তাঁর সমকক্ষ আর কেউ কি আছেন? জানা নেই। স্বজন হারানোর নির্মম বেদনায় জর্জরিত হয়ে নেতৃত্বশূন্য দলের যেভাবে হাল ধরেছিলেন তা আজো অনন্য বিস্ময়। ১৯৮১ সালে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সময় থেকে এখন অবধি অবিচল দৃঢ় শক্তিতে স্বদেশ আর স্বাজাত্যবোধের নিমিত্ত কাজ করে যাচ্ছেন। তার মধ্যে বহু বিপরীত বিপন্নতা মাথাচাড়া দিতে সময় নেয়নি। 
উন্নয়ন কর্মযোগে পেশিশক্তির উদ্ভাবন সেই অষ্টাদশ শতাব্দীর শিল্প বিপ্লবের যুগ থেকেই। এমন সব অনাকাক্সিক্ষত অশুভ শক্তিকে দমানোও সহজসাধ্য ব্যাপার নয়। কঠোরহস্তে তাও দমাতে কোনোদিকে ফিরেও তাকাননি তিনি। শুধু কি পেশিশক্তি? উদীয়মান নতুন প্রজন্মের ভয়ঙ্কর উত্থানও দেশের সার্বিক পরিবেশের এক অসামঞ্জস্য ফলশ্রুতি। শুধু মানসম্মত উন্নয়ন কর্মযোগই নয়, বর্তমানে আগত নির্বাচনে তেমন অপরাধপ্রবণতা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা পদে পদে। এমন সব সামাজিক অনাচার পুরো আঙিনাকে যে মাত্রায় অসহনীয় করে তোলে তাও এক অবধারিত দুর্যোগ।

মনোবিজ্ঞানী ও সমাজ গবেষকরা বলছেন অপরাধজগৎ এক বিচিত্র সম্মোহনী অপশক্তি। অপত্যাশিত দুরন্ত তা-বের সঙ্গে যারা নির্বিশেষে জড়িয়ে পড়ে তারাও সহজ স্বাভাবিক জীবনবোধে অভ্যস্ত থাকে না। জঘন্যতম অপকর্ম করা ছাড়াও নিকৃষ্টতম দুর্ধর্ষতায় আষ্টেপৃষ্ঠে জড়ানো তরুণরা মুক্তির নিশানাও সেভাবে খুঁজে পায় না। আমরা যদি বলি কিশোর অপরাধ তাহলে বুঝে নিতে হবে ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সের উদীয়মান প্রজন্ম যারা বিভিন্ন সমাজবিরোধী অপকর্মে সম্পৃক্ত থাকে। সেই বয়ঃসন্ধিকাল। শরীর ও মনের এক অবিশ্বাস্য দোলাচল। স্পর্শকাতর, অবিবেচনার অসময় তো বটে।

ভালো-মন্দের বোধ থাকে না ন্যায়-অন্যায়ের চেতনাও বিলুপ্তির পথে। সব মিলিয়ে অসহ্য অস্থিরতার এক আপৎকাল। যে কোনো পরিবেশ পরিস্থিতিতে তাদের কাজে লাগানোর অপশক্তিও সমাজের মূল শিকড়ে গেঁথে থাকে। নির্বাচনের মতো প্রতিযোগিতামূলক কর্মসূচিই নয়, বরং হার-জিতের হিসাব-নিকাশে বিভিন্ন অপশক্তিকে কাজে লাগানো নির্বাচনী অপতৎপরতা। 
আমরা এখন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের আধুনিক প্রযুক্তির আঙিনায় নিজেদের সমৃদ্ধ করে যাচ্ছি। নতুন প্রযুক্তি দেশ ও জনগণকে অনেকখানি এগিয়ে দেয় সেটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। তবে পাশর্^প্রতিক্রিয়া হিসেবে বিপরীত আবহ তৈরিতে সিদ্ধহস্ত বলে সেই অষ্টাদশ শতাব্দীর শিল্প বিপ্লব থেকে আওয়াজ তোলা হচ্ছে। শুধু চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়াই নয়, বরং ২০২০ সালের করোনা দুর্ভোগও দুনিয়াজোড়া যে অস্থিরতার প্রকোপ তৈরি করে তার দাম আজও গুনছে বিশ^বাসী। সঙ্গত কারণে ২০২২ সালের অন্তিমলগ্নে বিশ^জুড়ে যে অর্থনৈতিক মন্দা তাও এক অসহনীয় ক্রান্তিকাল। সেখান থেকে সর্বতোভাবে মুক্তি পাওয়া আজও প্রায় অসম্ভব। বাংলাদেশও তেমন দুর্বিষহ অবস্থা পাড়ি দিচ্ছে।
সামনে নির্বাচন। পরিবেশ পরিস্থিতি নিয়ে ভাবনার অন্ত নেই সাধারণ মানুষের। আরও এক ব্যাধি দেশকে অস্থিরতায় নিমজ্জিত করে যাচ্ছে, তা হলো ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব। ডেঙ্গুর আক্রমণে বাংলাদেশ এখন চরম অস্বস্তির মধ্যে। মশাবাহিত রোগটি নির্মূলের সর্বোত্তম উপায় সংশ্লিষ্ট এডিস মশাকে চিরতরে বিলীন করে দেয়া। সেখানে ঘাটতি আর গাফিলতি দৃশ্যমান হচ্ছে। সময়মতো এবং কার্যকর উপায়ে মশা নিধন অভিযান সেভাবে দৃশ্যমান হচ্ছে না। এমন তথ্য বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে উঠে আসছে। হরেক বিপন্নতার মাঝেও বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়ন অভিগামিতায়। শস্য-শ্যামল সবুজ বাংলা আজো তার চিরায়ত ঐতিহ্য ধরে রেখে ধনে, ধান্যে পুষ্পে সারাদেশকে নজরকাড়া করে রেখেছে।

বাংলাদেশে আজ কোনো প্রত্যন্ত অঞ্চলেও মঙ্গা বলতে যা বোঝায় তার ছিটে-ফোঁটাও নেই। তার মধ্যে অব্যাহতভাবে চলছে বিএনপির হরতাল, অবরোধের মতো লাগাতার কর্মসূচি। রাস্তাঘাটে মানুষের চলাফেরার সময় নিত্য নিয়ম করে যানবাহনে আগুন দিচ্ছে। ব্যক্তিগত এবং জাতীয় পর্যায়ের সম্পদহানি মোটেও মঙ্গলজনক নয়। সব সন্ত্রাসী যে ধরা পড়ছে না তা কিন্তু নয়। অনেককে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হচ্ছে। শাস্তি দিয়ে জঘন্য অপরাধের নির্মূল হয় না। পাশাপাশি চাই দেশাত্মবোধ, সর্বজনের প্রতি মায়া-মমতা। আসন্ন নির্বাচনকে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে দেওয়া আমাদের সকলের  সচেতন দায়বদ্ধতা। প্রত্যেক নাগরিকের তা আমলে নেয়া জরুরি।
লেখক : সাংবাদিক

×