ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৯ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

জনসম্পদ রপ্তানি

প্রকাশিত: ২০:২৭, ৪ ডিসেম্বর ২০২৩

জনসম্পদ রপ্তানি

সম্পাদকীয়

বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশীদের মাতৃরাষ্ট্রে পাঠানো অর্থ বা রেমিটেন্স দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। জনশক্তি রপ্তানিতে বাংলাদেশের স্থান বরাবরই প্রথম সারিতে। বিশ্বের ১২০টি দেশে ১ কোটির বেশি বাঙালি কর্মরত রয়েছেন। বর্তমানে বৈশ্বিক সংকটপূর্ণ কালেও চলতি বছর বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানি আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত ১২ লাখ ৪ হাজার কর্মী বিদেশে গেছেন। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ১১ লাখ ৩৫ হাজার। বাংলাদেশের জনশক্তির বেশিরভাগই মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে রপ্তানি হয়ে থাকে। এবছর আরেকটি ইতিবাচক বিষয় হলোÑ ইতালি এবং যুক্তরাজ্যের মতো গন্তব্যেও রেকর্ডসংখ্যক লোক পাঠানো হয়েছে।
তবে বিদেশে জনশক্তি রপ্তানি ঊর্ধ্বমুখী হলেও সে তুলনায় বাড়ছে না রেমিটেন্স। গত দুই অর্থবছর ধরে রেমিটেন্স আয় ২২ বিলিয়ন ডলারের নিচেই স্থবির রয়েছে। জনশক্তি রপ্তানি এবং রেমিটেন্সের মধ্যে বিরাজমান অসমতার পেছনে দায়ী কারণগুলোর মধ্যে স্বল্পদক্ষ পেশার ব্যাপকতা, অর্থ স্থানান্তরের জন্য অবৈধ চ্যানেল (হুন্ডি) ব্যবহার অন্যতম। হুন্ডি হলো একটি নীতিবহির্ভূত এবং দেশের আইন দ্বারা নিষিদ্ধ অপ্রাতিষ্ঠানিক অর্থ হস্তান্তর ও স্থানান্তর ব্যবস্থা। এতে করে আয়কর রেয়াত পাওয়া যায় না। বরং বৈধ উপার্জন অবৈধ হিসেবে চিহ্নিত হয়। অর্থ পাঠানো ও অর্থপ্রাপ্তি হয় ঝুঁকিপূর্ণ।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যায়। ফলে, অর্থনীতির ক্ষতি হয়। এ সব কারণেই জনশক্তির রপ্তানি সন্তোষজনক থাকা সত্ত্বেও অর্থনীতিতে তার সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। অবৈধভাবে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আসা উন্নতির অন্যতম অন্তরায়। দেশের জনশক্তি সহজলভ্য এবং রপ্তানিও হচ্ছে যথেষ্ট। সেই সঙ্গে তাল মিলিয়ে যেন রেমিটেন্সের প্রবাহ বৃদ্ধি পায়, সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া আবশ্যক।
দেশের যেসব নাগরিক জীবিকার তাগিদে বিদেশে পাড়ি জমান, তাদের বেশিরভাগই অশিক্ষিত বা অর্ধশিক্ষিত। ফলে, আর্থিক লেনদেন বা দেশে অর্থ পাঠানোর ক্ষেত্রে তাদের কাছে যে উপায় তুলনামূলক সহজ মনে হয়, তারা সেটিই অবলম্বন করেন। সেটি হতে পারে হুন্ডি। শিক্ষা কম থাকায় দেশের অর্থনীতি নিয়ে তারা খুব বেশি চিন্তিত নয়। হুন্ডির পরিবর্তে যদি ব্যাংকিং খাত ব্যবহার করে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আসতে শুরু করে, তাহলে একদিকে সেই অর্থের আয়কর রেয়াতসহ পাওয়া যাবে এবং বিনিয়োগ সহজে হবে। একই সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়বে। সেক্ষেত্রে প্রথম পদক্ষেপ নিতে হবে সরকারকে। ব্যাংকিং ব্যবস্থার সরলীকরণ করতে হবে।

যেসব পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে ব্যাংকিং খাতে বৈদেশিক মুদ্রা দেশ আসে, সেগুলো সহজ করতে হবে। যাতে একজন প্রবাসী প্রত্যন্ত গ্রামে বসবাসরত পরিবারের কাছে তার কষ্টার্জিত আয় সহজে পাঠাতে পারে। ব্যাংকিং ব্যাবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি প্রবাসীগণ যেন সেই সুবিধা ভোগ করতে পারেন, সেজন্য তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করতে হবে। যেসব দেশে জনসম্পদ বেশি রপ্তানি হয়, সেসব দেশের সঙ্গে সর্বাগ্রে ব্যাংকিং খাতের সহজ সমন্বয় করতে হবে। রপ্তানিকৃত জনশক্তির বিপরীতে যথাযথ রেমিটেন্স পেতে হলে অর্জিত অর্থ সম্পর্কে নাগরিকদের নিজেদের সচেতন হতে হবে! এর পাশাপাশি ব্যাংকিং ব্যবস্থার উন্নতি করে সরকারকে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করতে হবে।

×