ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

ব্যক্তি ও রাষ্ট্রের দায়

আরিফুল ইসলাম আকাশ

প্রকাশিত: ২১:০৭, ২৯ নভেম্বর ২০২৩

ব্যক্তি ও রাষ্ট্রের দায়

মানব কল্যাণ বলতে স্রেফ বুঝি খাবারের চাল থেকে ভিখারিনীকে দুমুঠো চাল

আজকাল আমরা মানব কল্যাণ বলতে স্রেফ বুঝি খাবারের চাল থেকে ভিখারিনীকে দুমুঠো চাল দেওয়া কিংবা পথেঘাটে চলার পথে জীর্ণ শীর্ণ, লিকলিকে গঠনের ব্যক্তি সাহায্যের জন্য হাত বাড়িয়ে দিলে তাকে টাকাপয়সা দেয়া। মানবকল্যাণ শব্দটা আমরা যতটা মামুলি আর সস্তা অর্থে ব্যবহার করি, আসলে বিষয়টা এত মামুলি, সস্তা না। এটা আমাদের হৃদয়ের মণিকোঠায় লুকিয়ে থাকা মনুষ্যত্ববোধ থেকে উৎসারিত এক উৎসৃষ্ট। আমাদের মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) বলেছেন, ওপরের হাত সব সময় নিচের হাত অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। নিচের হাত মানে যে মানুষ হাত পেতে দান গ্রহণ করছেন, আর ওপরের হাত মানে দাতা যে হাত তুলে ওপর থেকে অনুগ্রহ বর্ষণ করছেন। মানবকল্যাণ বলে বুঝে থাকি এটি রাষ্ট্রযন্ত্রের কাজ।

যেহেতু রাষ্ট্র সর্বাত্মক ক্ষমতার অধিকারী, অধিকন্তু যে ধরনের রাজনীতি রাষ্ট্রের পেছনে সক্রিয় তাও এত সর্বব্যাপক যে তা যদি মানবিক বোধসম্পন্ন না হয়, তা হলে মানব কল্যাণ অর্থে আমরা যা বুঝি তা এ পরিস্থিতিতে মোটেও বাধামুক্ত হতে পারে না। এবং তার বাস্তবায়ন একরকম অসম্ভব বললেই চলে। রাষ্ট্রের দায়িত্ব শুধু প্রশাসনিক কার্যকাঠামো পরিচালনা নয়, জাতিকে আত্মমর্যাদাসম্পন্ন করে তোলাও রাষ্ট্রের এক বৃহত্তর দায়িত্ব। যে রাষ্ট্র অন্যের নিকট হাত পেতে অনুগ্রহ প্রার্থনা আর চাটুকারিতাকে দেয় প্রশ্রয়, সে রাষ্ট্র কিছুতেই আত্মমর্যাদাসম্পন্ন নাগরিক সৃষ্টি করতে পারে না। মানুষকে মানুষ হিসেবে এবং মানবিক-বৃত্তির বিকাশের পথেই বেড়ে উঠতে হবে আর তার যথাযথ ক্ষেত্র রচনাই মানব কল্যাণের প্রাথমিক  সোপান। সে সোপান রচনাই সমাজ আর রাষ্ট্রের দায়িত্ব।

একজন সুবিধাবাদী নাগরিক মানবকল্যাণ বলতে শুধু রাষ্ট্রের ওপর দায় ফেলে নিজে গা ঢাকা দিয়ে থাকাকে বুঝে। আসলে মানব কল্যাণ রাষ্ট্রের পাশাপাশি প্রত্যেক নাগরিকেরও নৈতিক কর্তব্য। আজকাল একদল মানব কল্যাণের নামে নিজের মার্কেটিং প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেগুলোতে। আসলে এগুলো যারা করছেন তিনি/তারা যে শূন্য মনুষ্যত্ব সম্পন্ন তারই বহির্প্রকাশ। মানুষের মনুষ্যত্বকে বাদ দিয়ে স্রেফ তার জৈব অস্তিত্বের প্রতি সহানুভূতিশীল এ ধরনের মানব কল্যাণ কিছুমাত্র ফলপ্রসূ হতে পারে না।

এ হেন মানব কল্যাণের কুৎসিত ছবি দেখার জন্য দূর-দূরান্তে যাওয়ার প্রয়োজন নেই, আমাদের আশপাশে, চারদিকে তাকিয়ে দেখলেই হয়। বলাবাহুল্য, মানব কল্যাণ বিচ্ছিন্ন কিংবা খণ্ডিত কোনো ব্যাপার নয়। গুটিকয়েক ভিখিরি বিদায় কিংবা কিছু সংখ্যক অভাবগ্রস্তের অভাব মোচন মানবিক সমস্যার দিক দিয়ে স্রেফ ছেঁড়া কাপড়ে তালি দেওয়া। সত্যিকার মানব কল্যাণ মহৎ মনুষ্যত্বের ফসল।
নলছিটি, ঝালকাঠি থেকে

×