
ডেঙ্গু রোগীদের প্রাণরক্ষাকারী স্যালাইনের তীব্র সংকট
ডেঙ্গু রোগীদের প্রাণরক্ষাকারী স্যালাইনের তীব্র সংকট। রাজধানীর বাইরে এই সংকট আরও তীব্র। এক প্যাক স্যালাইন পেতে নাভিশ্বাস উঠছে রোগীর স্বজনদের। এ দোকান, সে দোকান ঘুরে পাওয়া গেলেও দাম রাখা হচ্ছে আড়াই-তিন গুণ বেশি। প্রথমে ‘নেই’ বলে মুখ ফিরিয়ে নেয় দোকানি। পরে অনেক অনুনয়-বিনয় করলে গোপন স্থান থেকে এক প্যাক স্যালাইন বের করে বলছেন, ‘দাম কিন্তু অনেক বেশি’। রোগীর কথা চিন্তা করে স্বজনরা বেশি দামেই কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। দোকানিরা বলছেন, সরবরাহ নেই। কোম্পানিগুলো দিচ্ছে না। সে কারণে স্যালাইন নেই। কি কারণে সরবরাহ নেই এর জবাব নেই বেশিরভাগ দোকানির কাছে। ওষুধ প্রশাসন বলছে, ডেঙ্গু রোগী বেড়ে যাওয়ায় স্যালাইনের চাহিদা বেড়েছে। হঠাৎ করে কোনো জিনিসের চাহিদা বেড়ে গেলে সরবরাহে কিছুটা ঘাটতি দেখা দেয়। চেষ্টা চলছে, হয়তো শীঘ্রই সংকট কাটবে। সংকট কাটছে না।
ডেঙ্গু মহামারি এবার বিগত ২৫ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে। এ পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেছে প্রায় এক হাজার মানুষ। গত ২৫ বছরেও এত মৃত্যু দেখেনি মানুষ। দুই লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আক্রান্তের কোনো পরিসংখ্যান নেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাতে। অনিয়ন্ত্রিত ডেঙ্গু এখন শহর ছেড়ে হামলা দিয়েছে গ্রাম-গ্রামান্তরে। প্রতিদিন অসংখ্য রোগী আসছে গ্রাম থেকে। শহরের হাসপাতালগুলোতে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। সময়মতো চিকিৎসা নিতে না পারলে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে রোগীরা। এক ধরনের মৃত্যু শঙ্কা নিয়ে দিনযাপন করছেন দেশের মানুষ। ডেঙ্গুর কার্যকর টিকা এখনো পাওয়া যায়নি। মানুষকে নির্ভর করতে হচ্ছে চিকিৎসার ওপর। হাসপাতালগুলোতে ভিড় বাড়ছে এ কারণেই।
ডেঙ্গু চিকিৎসায় প্রধান উপাদান স্যালাইন। দেশে স্যালাইন উৎপাদন করছে ছয়টি ওষুধ কোম্পানি। এর মধ্যে রয়েছে অপসোনিন, বেক্সিমকো, পপুলার, ওরিয়ন, লিব্রা এবং বিকন। কোম্পানিগুলো স্যালাইনের দাম বাড়ায়নি, কিন্তু চাহিদার তুলনায় উৎপাদন করছে না। ওষুধ প্রশাসন এসব কোম্পানির মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, উৎপাদন বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছেন। ব্যবসার হিসেব নিকাশে তারা উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করেনি। ডেঙ্গু রোগী বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে স্যালাইন সংকট। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার স্যালাইন আমদানির অনুমতি দিয়েছে। বাণিজ্যের হিসাব-নিকাশে চাহিদামতো স্যালাইন আমাদানি না হওয়ায় সংকট কাটেনি। পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর স্যালাইন উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। সময়মতো তাদেরকেও অনুমতি দেওয়া হলে সংকট নিরসনের পথ পাওয়া যেত।
জানা গেছে, ছয়টি ওষুধ কোম্পানিরই আরও বেশি স্যালাইন উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। এখন উৎপাদন বাড়াতে হলে তাদের প্লান্ট সম্প্রসারণ, লোকবল নিয়োগ এবং কাঁচামাল জোগাড় করতে হবে। দ্রুত এসব কাজ করতে গেলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেলে তাদেরকে স্যালাইনের মূল্যও বাড়াতে হবে। বিষয়টি নিয়ে ওষুধ প্রশাসনের সঙ্গে তাদের ফয়সালা হয়নি। ফলে, তারা আর উৎপাদন বৃদ্ধির পথে পা বাড়ায়নি। অভিযোগ রয়েছে, সংকট তীব্র করার লক্ষ্যে কোনো কোনো প্রাতষ্ঠান তাদের নিয়মিত উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে। অর্থের জন্য এমন অমানবিকতা বিশে^র কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না।
শুধু স্যালাইন কেন, ডেঙ্গু রোগীর পথ্য নিয়েও চলছে অমানবিক কাণ্ড। ডেঙ্গু রোগীকে ডাবের পানি দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। এই সুযোগে ডাবের দাম দ্বিগুণ করে দিয়েছে ব্যবসায়ীরা। ডাবের মূল্য নিয়ন্ত্রণে ভোক্তা অধিকার দপ্তরকে মাঠে নামতে হয়েছে। ফল কিছুই হয়নি। অর্থলিপ্সু ব্যবসায়ীদের কাছে ভোক্তা অধিকারের সীমিত প্রচেষ্টা ব্যর্থ। একই সঙ্গে রাতারাতি বেড়ে গেছে মাল্টা, কমলা, আপেলসহ সকল বিদেশী ফলের দাম। আমদানি মূল্য যাই থাকুক তা খুচরা ক্রেতার কাছে যাচ্ছে দ্বিগুণ দামে। রোগীর পথ্য হিসেবে বেশি দাম দিয়েই মানুষ এগুলো কিনতে বাধ্য হচ্ছে। অনেক দরিদ্র রোগী পথ্য কিনতে না পেরে মনোকষ্টে ভুগছেন। রোগীর মৃত্যু হলে অর্থের অভাবে পথ্য কিনতে না পারার জন্য তাদের মনে তৈরি হচ্ছে অপরাধবোধ। মনের হাহাকার বেড়ে যাচ্ছে বহুগুণ।
রোগীদের জিম্মি করে অর্থ উপার্জনের অমানবিক কাজটি যারা করছেন, তারাও রক্ত-মাংসের মানুষ। স্ত্রী-পুত্র-কন্যা, পিতা-মাতা, ভাই-বোন নিয়ে তাদেরও পরিবার রয়েছে। এই অনৈতিক অর্থ দিয়ে তারা পরিবারের সদস্যদের মুখে খাবার জোগান দিচ্ছেন। বিলাসী জীবনের জন্য কিনছেন গাড়ি-বাড়ি। বৃদ্ধি করছেন ব্যবসার কলেবর। ব্যাংকে জমা হচ্ছে টাকার পাহাড়। তারা কি একবারও ভেবেছেন, অনৈতিকভাবে উপার্জিত এই অর্থে থাকবে ডেঙ্গু রোগে মৃত্যুবরণকারী মানুষের পরিজনের দীর্ঘশ্বাস। কষ্ট পাওয়া রোগার্ত মানুষের অভিশাপ। এই অর্থ কি তাদের জীবনে প্রশান্তি বয়ে আনতে পারবে?
প্রকৃতিক দুর্যোগ, মহামারি কিংবা সমাজিক বিপর্যয়ে মানুষ মানুষের পাশে দাঁড়ায়। সামর্থ্যবানরা অর্থ দিয়ে, কেউ শ্রম বা মেধা দিয়ে বিপন্ন মানুষকে সহযোগিতা করেন। সভ্যতার ইতিহাসে এমনই ঘটেছে এবং ঘটছে। বাংলাদেশের মানুষ খুবই সামাজিক। সমাজবদ্ধ হয়ে তারা বাঁচতে পছন্দ করেন। বিপদে-আপদে, সুখ-দুঃখে মানুষের পাশে দাঁড়ানো বাঙালির অন্যতম একটি ঐতিহ্য। যুগ যুগ ধরে সহযোগিতার এই সংস্কৃতি চালু আছে বাঙালি সমাজে। বন্যা, খরা, মহামারিতে মানুষ দাঁড়িয়েছে মানুষের পাশে। ১৯৮৮ এবং ৯৮ সালে সবাই মিলে ভয়াবহ বন্যা মোকাবিলার ঘটনা উদাহরণ তৈরি হয়েছিল বিশ^জুড়ে। এবার করোনা মহামারির সময়ও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষ দাঁড়িয়েছিল মানুষের পাশে।
সরকার যখন হিমশিম খায় তখন সাধারণ মানুষের সহযোগিতায় দুর্যোগ মোকাবিলা সহজ হয়। বাংলাদেশের মানবিক মানুষের সুখ্যাতি রয়েছে সারাবিশে^। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে তাই বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর এত সুনাম। বিশে^র দুর্যোগ কবলিত দেশগুলোতে দেশের বীর সন্তানরা মানবিক সহায়তার উদাহরণ সৃষ্টি করে চলেছেন। এই বাংলাদেশে আমরা এখন এ কেমন দৃশ্য অবলোকন করছি? যেখানে প্রাণ বাঁচানোর ওষুধ নিয়ে বাণিজ্য হয়। মানুষকে জিম্মি করে আদায় করা হয় অর্থ। এরা কারা? এরা কি বাঙালি জাতির কেউ? এটি কি আমাদের সেই বাংলাদেশ? কিভাবে মানুষ বদলে যাচ্ছে? স্বার্থের কাছে কিভাবে মানুষ সকল নীতি-নৈতিকতা বিসর্জন দিচ্ছে? কোন্ দিকে এগোচ্ছে এই জাতি? আমাদের ভবিষ্যৎ?
শুধু স্যালাইন কেন, সম্প্রতি মানুষকে জিম্মি করে অর্থ আদায়ের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে সকল নিত্যপণ্যে। চাল, পেঁয়াজ, আদা, কাঁচা মরিচ, ডিম এবং আলু নিয়ে শুরু হয়েছে তুঘলকি কাণ্ড। সংবাদপত্রে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী এক শ্রেণির ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট বানিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে সাধারণ মানুষের কষ্টে উপার্জিত অর্থ। বাজারে কোনো পণ্যের সরবরাহে ঘাটতি নেই। সিন্ডিকেটভুক্ত ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি করছে ইচ্ছেমতো। সবাই সব দেখছেন, বুঝছেন। কারও যেন কিছুই করার নেই। সরকারের সকল বিভাগ এদের কাছে অসহায়। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী নিজে সিন্ডিকেটের কাছে অসহায়ত্ব প্রকাশ করছেন মিডিয়ার সামনে। সাধারণ মানুষ বাজারে গিয়ে সরকারের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করছেন।
ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের সদস্য হাতে গোনা। তারা সবাই নিজ নিজ ব্যবসা অঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত। হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যবসা পরিচালনা করছেন সবাই। চাইলে তারা নিজস্ব অর্থে হাজার হাজার দরিদ্র মানুষের মুখে আহার তুলে দিতে পারেন। দায়িত্ব নিতে পারেন তাদের স্বাস্থ্য, শিক্ষার। অনেক সামর্থ্যবান ব্যবসায়ী এই কাজটি করছেন তাদের নিজস্ব পরিমণ্ডলে। অথচ আরেক শ্রেণির ব্যবসায়ী এই দরিদ্র মানুষের রক্ত চুষে অর্থ আয়ের জঘন্য পথ বেছে নিয়েছেন। মানবিকতা-মূল্যবোধ তাদের কাছে তুচ্ছ। কাদের টাকায় নিজের ব্যবসাকে ফুলে ফেঁপে তুলছেন সেই চিন্তা মাথায় নেই তাদের। একবারও কি ভাবছেন কোন্ দরিদ্র লোকের শ্রম-ঘামের টাকা লুট করে তারা নিজেদের আখের গোছাচ্ছেন? পাচার করছেন বিদেশে। দরিদ্র মানুষের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই অর্থ দিয়ে তারা কি তাদের পারিবারিক ও সামাজিক জীবন সুন্দর করতে পারবেন?
সিন্ডিকেট নিয়ে আলোচনা নতুন কিছু নয়। সময় সুযোগ বুঝে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটে ঐক্যবদ্ধ হন। মানুষের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় খাদ্য চাল নিয়ে সিন্ডিকেট প্রতিবছরই সক্রিয় থাকে। ধানের বাম্পার ফলন হলেও তারা তৈরি করেন কৃত্রিম সংকট। শেষ মৌসুমে গত কয়েক বছর ধরে পেঁয়াজের সংকট নিয়মিত হয়ে গেছে। এবার দেখা গেছে কাঁচা মরিচের সিন্ডিকেট। পোল্ট্রি পণ্যের সংকট নিয়ে গত কয়েক বছরে সংবাদ মাধ্যমে শত শত রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। উঠে এসেছে সংকট তৈরির স্বচ্ছ চিত্র। সিন্ডিকেটে এখন গোপন কোনো বিষয় নয়। সর্বশেষ যুক্ত হয়েছে আলু সংকট। এবার আলুর বাম্পার ফলন হয়েছিল এটি পুরনো সংবাদ। বেশি উৎপাদনের কারণে কৃষকরা আলুর মূল্য পায়নি। গণমাধ্যমে এ নিয়ে অনেক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। বাম্পার ফলনের আলু আড়তদাররা কম মূল্যে মজুত করেছে হিমাগারে। এখন আলুর সংকট বাজারে। বিক্রি হচ্ছে পঞ্চাশ টাকা কেজি দরে।
সিন্ডিকেটের কারসাজি নিয়ে প্রচার মাধ্যমের সংবাদ ছাড়াও দেশের সব গোয়েন্দা বাহিনী কাজ করছে। সিন্ডিকেটের সদস্যরা সবার কাছে ‘ওপেন সিক্রেট’। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগে রয়েছে সকল তথ্য। তারাও এই সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি। বাণিজ্যমন্ত্রী নিজে বলেছেন, ‘সিন্ডিকেটের কাছে তারা অসহায়। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া কঠিন কাজ।’ ব্যবস্থা নিলে তারা নাকি বাজার অচল করে দেবেন। মন্ত্রী নিজে একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। ব্যবসার অনেক নাড়িনক্ষত্র তার জানা রয়েছে। তাহলে তিনি কেন এত ভয় পাবেন? এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে সরকারের কাজ কি? সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, দেশের প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব কি? তারা কি সবাই এই সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে থাকবেন? যদি তাই হয়, তবে একটি রাষ্ট্র চলবে কিভাবে?
মন্ত্রী এমন ভয়ের কথা বললেও প্রাধানমন্ত্রী নিজে এটি মানতে রাজি নন। মন্ত্রীর এমন বক্তব্য নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে মন্ত্রী কেন এমন কথা বলেছেন, তার অসহায়ত্বের কারণ তিনি মন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করবেন বলে সাংবাদিকদের আশ্বস্ত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয় পরে মন্ত্রীর কাছে এটি জানতে চেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীকে বাণিজ্যমন্ত্রী কি জবাব দিয়েছেন আমরা জানতে পারিনি। তবে নিশ্চয়ই তিনি মন্ত্রীকে কোনো পথ দেখিয়েছেন, এটি নিশ্চিত। বাণিজ্যমন্ত্রী কি পারবেন সেই পথে হেঁটে এই সংকটের সমাধান করতে?
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের দৃশ্যমান কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে বাজারে অভিযান। অভিযান নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন রয়েছে। ঢাক-ঢোল পিটিয়ে, সংবাদ মাধ্যমকে খবর দিয়ে কাওরান বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী, রাস্তার পাশে ডাবের দোকানদার কিংবা পাড়া মহাল্লার মুদি দোকানে অভিযান চালিয়ে কি কোনো লাভ হচ্ছে? এসব করে মূল্য নিয়ন্ত্রণ কি সম্ভব? খুচরা ব্যবসায়ীরা হয়তো তাৎক্ষণিকভাবে জরিমানা দিয়ে নিজেকে বাঁচিয়ে নিচ্ছেন। পরক্ষণেই তারা সংবাদ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, ‘বেশি দামে পণ্য কিনে কম দামে বিক্রির কোনো পদ্ধতি আমাদের জানা নেই। যেখানে গলদ সেই গোড়ায় যেতে সরকার ভয় পাচ্ছে। অথচ আমাদের ওপর জুলুম চালানো হচ্ছে।’
এ ধরনের অভিযানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কার্যত কোনো ফল বয়ে আনতে পারছে না। উপরন্তু তৈরি হচ্ছে উল্টো প্রতিক্রিয়া। খুচরা ব্যবসায়ীরা তাদের দোকানে এসব পণ্য বিক্রি বন্ধ করে দিচ্ছেন। পণ্য না পেয়ে ক্ষিপ্ত হচ্ছেন সাধারণ ক্রেতা। দোকানি-ক্রেতা মিলে প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সরকারের ওপর।
উল্টো পথে না হেঁটে সরকারকে সঠিক পথ খুঁজে বের করতে হবে। অপ্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা অর্জনে বিদেশ সফর বাদ দিয়ে অর্জন করতে হবে শ্রীলংকার অভিজ্ঞতা। তারা কিভাবে মাত্র আঠারো মাসে সকল বিপর্যয় কাটিয়ে অর্থনীতি চাঙ্গা করতে পেরেছেন? কিভাবে নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছেন আকশচুম্বী দ্রব্যমূল্য? সিন্ডিকেটকে ভয় পেলে চলবে না। প্রধানমন্ত্রী নিজে কাউকে ভয় পান না। নির্বাচন সামনে রেখে নানামুখী আন্তর্জাতিক চাপের মুখেও তিনি দাঁড়িয়ে আছেন মাথা উঁচু করে। তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যদেরকেও সকল ভয়কে জয় করে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। তবেই দূর হবে মানুষের দুর্দশা। সফল হবে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের উন্নত বাংলাদেশ গড়ার চেষ্টা।
লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, জনকণ্ঠ