ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কৃষিপণ্য রপ্তানি

-

প্রকাশিত: ২০:২৭, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

কৃষিপণ্য রপ্তানি

সম্পাদকীয়

বিপুল জনসংখ্যাধিক্যসহ ক্ষুদ্রায়তনের বাংলাদেশ সীমিত পরিমাণের কৃষি জমিতে কয়েকটি কৃষিপণ্য উৎপাদনে বিস্ময়কর সাফল্য অর্জনে সক্ষম হয়েছে গত কয়েক বছরে। যেগুলোর মিলেছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও। যেমন- ধান-চাল উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়, শাক-সবজিতে চতুর্থ, ফলমূল উৎপাদনে সপ্তম, মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে তৃতীয় এবং ইলিশ উৎপাদনে প্রথম। ডিম, দুধ, ব্রয়লার মুরগিসহ গবাদিপশুর উৎপাদনও ক্রমবর্ধমান।

তবে এ কথাও সত্য যে, প্রতিবছর কোনো কোনো ফসল অনেক বেশি পরিমাণে উৎপাদন হওয়ায় কিছু পণ্য নষ্ট হয়ে যায়। শাক-সবজি, ফলমূল, মাছ ইত্যাদি পচনশীল দ্রব্য বিধায় যথাযথভাবে খাদ্য সংরক্ষণসহ প্রক্রিয়াজাতকরণের অভাবে স্বভাবতই ঘটে থাকে এহেন বিপত্তি। ফলে একদিকে যেমন উৎপাদিত ফসলের অপচয় ঘটে, অন্যদিকে কৃষক প্রায়ই বঞ্চিত হয়ে থাকে উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি থেকে। পরবর্তীতে কৃষক সেই ফসল উৎপাদনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। যেমন- আলু।

প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ আলু উৎপাদন হয় দেশেই। আলু বাঙালির প্রধান খাদ্য নয় বিধায় সংরক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত হিমাগারের অভাবে নষ্ট হয়ে যায়। অধুনা বিদ্যুতের দাম বাড়ায় আলু, ফলমূল, শাক-সবজি সংরক্ষণের খরচও অনেক বেশি বেড়ে গেছে। ফলে স্বভাবতই চাষিদের মাথায় হাত। অনুরূপ লক্ষ্য করা যায় আম, কাঁঠাল, আনারস, ইলিশ মাছসহ কতিপয় কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রেও। এমতাবস্থায় বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি হিসেবে খ্যাত রাশিয়া বাংলাদেশ থেকে আলু, বাঁধাকপি, ফুলকপি ও আম আমদানির ব্যাপারে বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করেছে, যা ইতিবাচক অবশ্যই।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের ইলিশ, আলু ও আম ইতোমধ্যে রপ্তানি হচ্ছে বিশ্বের কয়েকটি দেশে। বিশাল দেশ রাশিয়ায় এসব কৃষিপণ্য রপ্তানির সম্ভাবনা বিপুল। দেশটি ইতোমধ্যে বাংলাদেশে জ্বালানি তেল বিশেষ করে ডিজেল ও গম দিতে সম্মত হয়েছে। সে দেশ থেকে ডিএপি ও পটাশিয়াম সার আমদানিতেও একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হওয়ার কথা রয়েছে শীঘ্রই। রাশিয়া বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির একটি নতুন সম্ভাবনাময় বাজার হতে পারে। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অজুহাতে আপাতত পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকায় পারস্পরিক লেনদেন নিয়ে বিকল্প মুদ্রার চিন্তা-ভাবনা করা যেতে পারে। 
বাংলাদেশের কৃষক যে প্রায়ই ন্যায্য দাম পায় না এ কথা স্বীকার্য। এর অবসানে বর্তমানে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর অন্তত ৩৬টি পণ্যের পাইকারিসহ খুচরা যৌক্তিক দাম বেঁধে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে তা কার্যকর হয়নি এখনো। তাতে সমস্যার সমাধান হবে কিনা, কৃষক ও ভোক্তা স্বার্থ রক্ষিত হবে কিনা, সর্বোপরি মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমবে কিনা সময়ই তা বলে দেবে। অনেকে আবার কৃষিপণ্য মূল্য কমিশন গঠনের প্রস্তাব করেছেন। কাজটি কঠিন এবং সময়সাপেক্ষ হলেও এটি যে কৃষক ও ভোক্তাসহ সবার দাবি তাতে সন্দেহ নেই। 
এর পাশাপাশি নজর দেওয়া আবশ্যক বিভিন্ন ও বহুমুখী খাদ্যশস্য উৎপাদন এবং সংরক্ষণে। সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার হলো সব মানুষের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদেরও উচিত হবে জনসাধারণ ও সরকারকে জিম্মি কিংবা কারসাজি করে নয়, বরং আস্থায় নিয়েই ব্যবসা করা। তদুপরি দেশে ধান-চাল-পাটসহ কৃষিজাত পণ্যের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করার জন্য তৃণমূল থেকে রাজধানী পর্যন্ত একটি আধুনিক ও সমন্বিত বাজার ব্যবস্থা গড়ে তোলা জরুরি ও  অপরিহার্য।  রাশিয়াসহ  বিভিন্ন দেশে শাক-সবজি, ফলমূল রপ্তানি এক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।

×