ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিদেশে কর্মসংস্থান

প্রকাশিত: ২১:২৯, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

বিদেশে কর্মসংস্থান

.

দেশে ডলারের তীব্র সংকট চলছে দীর্ঘদিন ধরেই। তারপরও সুবাতাস বইছে প্রবাসী আয়ে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, এই ডলার সংকটের মধ্যেই চলতি বছরের জানুয়ারিতে ১৯৫ কোটি ৮৮ লাখ ডলারের রেমিটেন্স এসেছে। এর আগে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে রেমিটেন্স এসেছিল ১৬৯ কোটি ডলার। রেমিটেন্সের প্রবাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকারের নানা পদক্ষেপের মধ্যে বৈধভাবে ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিটেন্স পাঠাতে কর্মীদের উৎসাহিত করা; অধিক কর্মী পাঠানো উল্লেখযোগ্য। অধিক রেমিটেন্স পাঠাতে উৎসাহিত করার জন্য প্রবাসী ওয়েজ আর্নারদের জন্য সরকার কর্তৃক বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এবং বিশেষ নাগরিক সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা করেছে। প্রতিবছর ‘আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস’সহ দূতাবাসের সব অনুষ্ঠানে প্রবাসী বাংলাদেশীদের বৈধ পথে রেমিটেন্স পাঠানোর জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে দূতাবাসের ওয়েবসাইট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিয়মিত প্রচার চালানো হচ্ছে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে রেমিটেন্সের কোনো বিকল্প নেই এবং তা আনতে হবে বৈধ পথে।  
সরকারের নেওয়া কিছু পদক্ষেপের ফলে ২০২২ সালে রেকর্ডসংখ্যক প্রায় ১১ লাখ ১৩ হাজার ৩৭৪ কর্মীর বিদেশে কর্মসংস্থান হয়েছে। এই ১১ লাখ ১৩ হাজার ৩৭৪ কর্মীর মধ্যে নারী কর্মীর সংখ্যা এক লাখ ৫ হাজার ৪৬৬ জন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি আরও জানান, সরকারি রিক্রুটিং এজেন্সি বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেডের (বোয়েসেল) মাধ্যমে ২০২২ সালে ৬১৫ জন পেশাজীবী এবং ১৭ হাজার ৯৭৮ জন দক্ষ কর্মীসহ মোট ১৮ হাজার ৫৯৩ জন কর্মী বিদেশে কর্মসংস্থান লাভ করেছে। বর্তমানে ১৬৮টি দেশে শ্রমশক্তি রপ্তানি করা হচ্ছে। সরকার মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রিক শ্রমবাজার নির্ভরতা কমাতে চায়। সে জন্য পূর্ব ইউরোপ ও পূর্ব এশিয়ার নতুন কিছু দেশে শ্রমিক রপ্তানি চেষ্টা চলছে। বাংলাদেশ একটি উচ্চ রেমিটেন্সপ্রাপ্ত দেশ। বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারির পরও ২০২০-২০২১ এবং ২০২১-২০২২ অর্থবছরে প্রাপ্ত রেমিটেন্স যথাক্রমে ২৪ দশমিক ৭৭ এবং ২১ দশমিক ০৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ ছাড়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার ৪৯৩ দশমিক ২৬ মিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স অর্জিত হয়েছে।
প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো অর্থে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি যেমন ঘটেছে, তেমনি বেঁচে আছে তাদের ওপর নির্ভরশীল লাখ লাখ পরিবার। পরিতাপের বিষয়, এই শ্রমিকদের অভিবাসন প্রক্রিয়াকে এখনো পুরোপুরি নিরাপদ করা যায়নি। অবসান হয়নি তাদের দুর্ভোগ ও বঞ্চনার। সন্দেহ নেই, এক্ষেত্রে মূল সমস্যা হচ্ছে অশিক্ষা ও অদক্ষতা। একজন অভিবাসী এখনো তার ন্যায্য প্রাপ্য ও অধিকার সম্পর্কে জানেন না। জায়গা-জমি বিক্রি করে সর্বস্বান্ত হয়ে, এমনকি ধার করেও বিদেশে যাওয়ার জন্য দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে প্রতারিত হচ্ছে অনেকে। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অন্যতম প্রধান খাত প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স। প্রবাসীদের টাকায় লেগে আছে তাদের শ্রম-ঘাম, অশ্রু ও দীর্ঘশ্বাস। এই শ্রমিকদের জীবনকে নিরাপদ ও স্বস্তিকর হোক- এই প্রত্যাশা।

 

×