
.
প্রায় তেরো বছর আগের কথা। ২০১০ সালের ১১ আগস্ট দৈনিক জনকণ্ঠে ‘পঁয়ত্রিশ বছর পর’ শিরোনামে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানার একটি আবেগঘন ও মর্মস্পর্শী লেখা প্রকাশিত হয়েছিল। এ লেখাটি পড়তে গিয়ে মনের অজান্তে বারবার ভিজে যায় চোখ। এ লেখাটিতে তিনি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে সংঘটিত ইতিহাসের সবচেয়ে নির্মম ও নৃশংস হত্যাকা-ের পূর্বে সুদূর জার্মানি থেকে বাবা-মা, ভাই-ভাবি ও ছোট ভাই শেখ রাসেলকে যেসব চিঠি লিখেছিলেন, সেই চিঠিসমূহের বর্ণনা ও স্মৃতিচারণ তুলে ধরেছিলেন। ১৫ আগস্টের কালরাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব এবং তাঁদের তিন পুত্র ও দুই পুত্রবধূসহ বঙ্গবন্ধু পরিবারের অধিকাংশ সদস্য নির্মম হত্যাকা-ের শিকার হলেও বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শুধু শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা দেশের বাইরে থাকার কারণে ১৫ আগস্টের নৃশংস হত্যাকা- থেকে বেঁচে যান।
প্রকৃত প্রাপকের কাছে এ চিঠিগুলো পৌঁছেনি, এ চিঠিগুলো পাবার আগেই প্রাপকরা বুলেটের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে শাহাদাতবরণ করেছিলেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার বদৌলতে এবং শেখ রেহানার লেখার মাধ্যমে পঁয়ত্রিশ বছর পর আলোর পাদপীঠে প্রথমবারের মতো এ চিঠিগুলো আসে। দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশিত শেখ রেহানার এই আবেগঘন লেখাটি পড়ে মনে হয়েছিল, এ লেখাটি সকলের পড়া দরকার, এ চিঠিগুলো সম্পর্কে সকলের জানা দরকার, সকলের জানা দরকার কী দুঃসহ স্মৃতি ও অব্যক্ত যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে আছেন দুই বোন দেশরতœ শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। অনেক দিন ধরে লেখাটি খুঁজে পাইনি বিধায় আর এ নিয়ে লেখা হয়ে ওঠেনি। শোকাবহ আগস্টে অবশেষে সেই মর্মস্পর্শী লেখাটি হাতে পেয়েছি এবং সেই লেখার সূত্র ধরেই এই লেখা। পঁয়ত্রিশ বছর পর পাওয়া চিঠিগুলো সম্পর্কে শেখ রেহানা তাঁর লেখায় এভাবেই লেখেন Ñ‘ভাগ্যের কী নিষ্ঠুর খেলা, পঁয়ত্রিশ বছর আগে আব্বা-মা, ভাই-ভাবীদের কাছে যে চিঠি লিখেছিলাম আজ সেই চিঠিগুলো আমাকেই খুলতে হলো। চিঠিগুলো জার্মানি থেকে লেখা। খামের মুখ বন্ধ। ডাকপিয়ন তার মতো করে যথারীতি ডাকবাক্সে রেখে গিয়েছিল। চিঠিগুলো আপা যখন বত্রিশ নম্বর থেকে আমার হাতে এনে দিলেন, কয়েক মুহূর্তের জন্য আমার হাত-পা অবশ হয়ে গিয়েছিল। বুকের ভেতরটা কষ্টে দুমড়ে-মুচড়ে যাচ্ছিল।’ তিনি আরও লেখেন- ‘আমার হাতের লেখা আমাকেই পড়তে হলো। এ চিঠিগুলোর পরিবর্তে যদি সেই প্রাণপ্রিয় মানুষগুলো ফিরে পেতাম। আল্লাহতো কত কিছুই করতে পারেন। আমার যেন কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছিল না। এমন চমকপ্রদ ঘটনা কি কখনও ঘটতে পারে? এত বছর ধরে তো দেখছি, জীবনের একটা বড় সময় চলে গেল। চোখ দুটো এখনও প্রিয়জনদের খোঁজে। দু’চোখের অশ্রু, কষ্ট-অস্থিরতা নিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে দুই বোন সাহস সঞ্চয় করে খামটা খুলে চিঠিগুলো পড়লাম। কিশোরী বয়সে লেখা ঐ চিঠিগুলোয় আমার মনের কথাগুলো তুলে ধরেছিলাম।
ভাবতে ভাবতে চোখ ভিজে আসে। বনে মরহুম রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন রশিদ চৌধুরীর বাসায় বেড়াতে গেলে তাঁর হাতে চিঠিগুলো খামে ভরে দিয়েছিলাম। তিনি এগুলো ঢাকায় বত্রিশ নম্বরের ঠিকানায় পাঠিয়ে দেন। ধুলায় মলিন হয়ে গেছে কাগজের পাতা, লেখার কালিও ঝাপসা। কিন্তু অক্ষরগুলো আমি ঠিকই পড়তে পারলাম।’ শেখ রেহানার এ লেখায় মোট ৭টি চিঠির বর্ণনা পাওয়া যায়, যার মধ্যে ১টি লিখেছিলেন বাবা শেখ মুজিবকে, ১টি লিখেছিলেন মা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবকে, ১টি লিখেছিলেন বড় ভাই শেখ কামালকে, ১টি লিখেছিলেন বড় ভাবি সুলতানা কামালকে, ১টি লিখেছিলেন বড়ভাই শেখ জামাল ও ভাবি রোজীকে এবং ১টি লিখেছিলেন ¯েœহের ছোট ভাই শেখ রাসেলকে। চিঠিগুলোর মধ্যে বাবা, মা ও শেখ রাসেলকে লেখার সুনির্দিষ্ট তারিখ উল্লেখ ছিল এবং বাবা শেখ মুজিব ও বড় ভাই শেখ কামালকে লেখা চিঠির শেষে তিনি নিজের নাম রেহান লিখেছিলেন।
কী ছিল এই চিঠিগুলোতে, কী লিখেছিলেন শেখ রেহানা? চিঠিগুলোতে তিনি লিখেছিলেন তাঁর ভাষায় ‘আব্বা-মায়ের কাছে কত আবদার, বিদেশ যাবার সময় ছোট্ট রাসেলের ফরমায়েশ, নতুন ভাবীদের নিয়ে মজা করব ফিরে এসে। নতুন পরিবেশে যাতে ওদের কোন সমস্যা না হয় আমি দেশে ফিরে সব সমাধান করে দেব।’ তাঁর বাবার কাছে চিঠিতে জার্মানির প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বর্ণনা করতে গিয়ে তাঁর প্রিয় সোনার বাংলা যে কোন অংশে কম নয়, প্রাচ্যের সৌন্দর্যের সঙ্গে তুলনা করা যায় সে কথাও লিখতে তিনি ভুলেননি। আমার খাওয়া-দাওয়া নিয়ে আব্বা বেশি চিন্তা করতেন একথা উল্লেখ করে বাবা মুজিব যাতে চিঠি পড়ে খুশি হন সেজন্য তিনি চিঠিতে লেখেন যে ‘আমি যে লক্ষ্মী মেয়ের মতো সব ঠিকমতো খাচ্ছি সেটাও জানাতে ভুল করিনি।’ মাকে চিন্তা করতে নিষেধ করতে গিয়ে তিনি লেখেন ‘ছোটখাটো সব ধরনের খবর দিয়ে মাকে চিন্তা করতে নিষেধ করেছি। আমি সব ধরনের কাজ করতে পারি, সেটাও লিখেছি। জয় ও পুতুলের জন্য মা যেন কোন চিন্তা না করে। ওরা আমার সব কথা শুনত, তাই যেন চিন্তা না করে।’ স্বপ্নের দেশ প্যারিস যাবার বিষয়েও বড় ভাবিকে চিঠি লেখতে গিয়ে লেখেন, ‘বড় ভাবীকে লেখা স্বপ্নের দেশ প্যারিস যাব জানাতে পেরে একটা রোমাঞ্চ ছিল আমার মনে তখন। তার বিয়ের সময় তোলা রঙিন ছবিগুলো বিদেশে ওয়াশ করে কেমন হয়েছে তাও জানিয়েছিলাম।
কেননা ঢাকায় তখন রঙিন ছবি ওয়াশ হতো না।’ কধৎষংৎঁযব শহরের বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার মনোরম পরিবেশের বর্ণনা জানাতে গিয়ে তাঁর জামাল ভাইকে তিনি লেখেন, ‘জামাল ভাইকে লিখি আমরা যখন কধৎষংৎঁযব শহরের বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছিলাম, এটা দেখে এত মুগ্ধ হই যে, তাকে জানাই, আব্বার যদি টাকা থাকত ও অনুমতি পেতাম তাহলে আমিও এখানে লেখাপড়ার জন্য থেকে যেতাম।’ ‘পঁয়ত্রিশ বছর পর’ শিরোনামে লেখায় শেখ রেহানা লেখেন, ‘ভাগ্যের নির্মম নিষ্ঠুর পরিহাস, আমার বিদেশ থাকার ইচ্ছা পূরণ হলো এমনভাবে যে আব্বা ও মায়ের অনুমতির প্রয়োজন হলো না। পঁচাত্তর থেকে পরবাসেই রয়ে গেলাম। বাবা-মা ছাড়া নিরাপদ ও আনন্দময় আশ্রয় আর কে দিতে পারে? পরবাসে দিন কাটাতে হলো জীবনযুদ্ধ করে। দুঃখ-কষ্ট-বেদনা ও বঞ্চনাসহ কত ধরনের দুর্ভোগ সহ্য করতে হয় তাও জেনে গেছি।’
জার্মানির ইড়হহ, কধৎষংৎঁযব এবং ঞৎরনবৎম থেকে মা, বাবা, বড়ভাই, মেজো ভাই ও ভাবিদের এবং ছোট ভাইকে লেখা চিঠিগুলোর মধ্যে একজন বাঙালী কিশোরী হিসেবে শেখ রেহানা যে আবেগ ও অনুভূতির সঞ্চারণ ঘটিয়েছিলেন তা যে কাউকে নাড়া দেবে, চিঠির মধ্যে শব্দ চয়ন ও অভিব্যক্তিগুলোও হৃদয়ের ভেতর থেকে সাবলীলভাবে উচ্চারিত। আমরা সেই চিঠিগুলোর বর্ণনায় খুঁজে পাব পারিবারিক নিবিড় বন্ধন ও বাঙালীর শাশ^ত ভালবাসার নির্মল অভিব্যক্তি। শেখ রেহানা ১৯৭৫ সালের ১১ আগস্ট তারিখে বন থেকে তাঁর মাকে লিখেছিলেন,’...পুতুলী অনেক কথা বলে। আব্বা ও তুমি কেমন আছ? আমি এখন অনেক কাজ করি। তোমার জন্য অনেক জিনিস কিনতে ইচ্ছে করে। সুন্দর সুন্দর জিনিস।
কামাল ভাইয়ের বিয়ের পর এটাই প্রথম জন্মদিন। সুন্দর একটা প্রেজেন্ট দিও। দুলাভাইয়ের কাজ করে ১ মার্ক পেয়েছি। কালকে বেশি কাজ করলে ৫ মার্ক দেবে।’ ১৯৭৫ সালের ৫ আগস্ট তারিখে কধৎষংৎঁযব থেকে তিনি তাঁর বাবাকে লিখেছিলেন, ‘আব্বা,আমার সালাম নেবেন। আপনি কেমন আছেন। আমরা ভাল আছি। কধৎষংৎঁযব খুব সুন্দর জায়গা। কিন্তু অসম্ভব গরম। গত রবিবার ব্ল্যাক ফরেস্ট গিয়েছিলাম। কিন্তু আব্বা জানেন, রাঙ্গামাটি থেকে খুব একটা পার্থক্য বুঝলাম না। এখানকার লোক খুব ভদ্র ও ভাল। আমি অনেক কাজ করি। দুধ খাই, খাবার ঠিকমতো খাই। আজকে কামাল ভাইয়ের জন্মদিন। দোয়া করবেন। আপনার স্নেহের রেহান।’ বড় ভাই কামাল ভাইকে বন থেকে তিনি চিঠি লিখেছিলেন এভাবে, ‘কামাল ভাই, কেমন আছ? আমি ভাল আছি। ভাবি যা বলে শুনবে। দোয়া কর। স্নেহের রেহান।’ বড় ভাবি সুলতানা কামালকে অনবদ্য ও সাবলীল ভাষায় যে চিঠি তিনি বন থেকে লিখেছিলেন, সেখানেও ছিল একটা সরল সাহিত্যের ছোঁয়া, ছিল ভাবির প্রতি সত্যিকার ভালবাসার বহির্প্রকাশ। ছোট ছোট বাক্যে সুন্দর করে গুছিয়ে তিনি লিখেছিলেন, ‘বড় ভাবি, আমার সালাম নিও। কেমন আছ। তোমাকে আগেও চিঠি দিয়েছি। কালকে বনে এসেছি। এখানে গরম ঢাকার মতো। অবশ্য আজকে বৃষ্টি হয়েছে। তোমার পরীক্ষা কেমন হয়েছে। তোমার ফটোগুলো সুন্দর উঠেছে। আমার ক্যামেরা পুতুলী নষ্ট করে দিয়েছে।
তাই ফটো উঠাতে পারছি না। মন খুব খারাপ। আমরা যে জায়গায় থাকি খুবই সুন্দর। ছোট্ট শহর। বাসা থেকে দোকানের রাস্তাটা ঠিকই চিনে ফেলেছি। তোমার কথা খুব মনে হয়। গতকাল কোলন গিয়েছিলাম। ওটাও খুব সুন্দর শহর। খুব ভাল লেগেছে।... আজকে জাহাজে যাব। মঙ্গলবার আর্মস্টারডাম। তারপর যাব ব্রাসেলস এবং তারপর যাব প্যারিস আমার স্বপ্নের দেশ। দুই বউতে আব্বা-আম্মার সব আদর নিও না। নিচে ঠিকানা দিচ্ছি চিঠি দিও। আমার সালাম নিও। ইতি রেহানা।’ বন থেকে শেখ রেহানা তাঁর জামাল ভাই ও ভাবি রোজীকে চিঠি লিখতে ভুলেননি। তিনি লেখেন, ‘জামাল ভাই ও রোজী, কালকে বনে এসেছি। আজকে কলোনে গিয়েছিলাম। আজ এখানে বৃষ্টি হয়েছে। ডলির বিয়েতে কেমন মজা করলে। চিঠি দিও। চিঠি পেলে খুব খুশি লাগে। তোমার বন্ধুদের সাথে কথা হয়েছে। তারা তোমার বিয়ের গল্প শুনতে চায়। কধৎষংৎঁযব ফিরে তোমাকে ফোন করব। চিঠি দিও। রেহানা।’
সব শেষে যে চিঠিটির কথা বলব তা ১৯৭৫ সালের ৩ আগস্ট আদরের ছোট ভাই রাসেলকে ট্রিবার্গ থেকে শেখ রেহানা লিখেছিলেন, যে চিঠিতে প্রিয় ছোট ভাইয়ের প্রতি হৃদয়ের ভেতর থেকে উচ্চারিত হয়েছে সুললিত ভালবাসার বহির্প্রকাশ। তিনি লিখেছিলেন, ‘রাসুমণি, আজকে আমরা ঞৎরনবৎম গিয়েছিলাম। এটা জার্মানির সবচেয়ে বড় ঝর্ণা। অনেক উপরে উঠেছিলাম। এদের ভাষায় বলে Wasserfalle. আজকে ব্ল্যাক ফরেস্ট গিয়েছিলাম।... পড়াশোনা করো। খাওয়া-দাওয়া ঠিকমতো করবে। মা’র কথা শুনবে। তোমার জন্য খেলনা কিনব। লন্ডনের চেয়ে এখানে অনেক দাম। ছোট্ট ছোট্ট গাড়ি প্রায় দুই পাউন্ড দাম। তুমি ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া ও পড়াশোনা করো। ইতি রেহানা আপা।’
‘পঁয়ত্রিশ বছর পর’ শিরোনামে লেখায় শেখ রেহানার লেখার শেষ অংশটুকু পড়লে চোখ থেকে ফোঁটা ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। পাহাড়সম ভারী কয়েকটি বাক্যের শোকার্ত উচ্চারণ বুকের ভেতর প্রবলভাবে নাড়া দেয়, হৃদয়ে শুরু হয় রক্ত ক্ষরণ। তিনি লেখেন, ‘এ চিঠির অক্ষরগুলো যেন আমার মনের সঙ্গে কথা বলে। মনে মনে ভাবি, মা কি উত্তর দিত। দেশে ফিরলে কত কথা শুনতে চাইত। আব্বা কি উপদেশ দিতেন। ভাই ও ভাবিরা কত মজা করে উত্তর দিত। রাসেল খেলনা পেলে কি পরিমাণ খুশি হতো! এখন এ চিঠিগুলো আমার কাছে তাদের স্মৃতিময় সম্পদ। এ বড় কষ্টের, এ বড় বেদনার।’ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে ইতিহাসের সবচেয়ে নৃশংস ও জঘন্যতম হত্যাকান্ডে বাবা-মা, তিন ভাই, দুই ভাবিসহ অনেক নিকটতম আত্মীয়স্বজনকে হারিয়ে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা অশ্রুসিক্ত বেদনা নিয়ে বেঁচে আছেন আপনজন ও আত্মীয়স্বজনদের নানা স্মৃতি ও স্মৃতিচিহ্ন ঘিরে। সব হারিয়ে এই বেঁচে থাকায় ক্ষণিকের জন্যও কি কোন সুখ আছে? আছে শুধু যন্ত্রণা আর কান্নার ধারা। তবুও থেমে নেই শত্রুপক্ষ, প্রতি পদে পদে মৃত্যু আশঙ্কা আর ষড়যন্ত্রের নীলনক্সা।
সব আঁধার আর ষড়যন্ত্র ভেদ করে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা আজও বাঙালী জাতির আলোকবর্তিকা হয়ে আলো ছড়াচ্ছেন আর আমাদের পথ দেখাচ্ছেন। সব ভেদাভেদ ভুলে আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী আমাদের তাঁদের দেখানো পথেই হাঁটতে হবে। প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে যে বাংলাদেশ আজ বিশ^ দরবারে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, সেই বাংলাদেশের মর্যাদা সমুন্নত রাখতে হবে। বিশেষ করে করোনা দুর্যোগ এবং রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলমান যুদ্ধের কারণে বিশ^ অর্থনৈতিক মন্দার সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশেও কোন কোন মহল দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে, সেই ষড়যন্ত্র সম্পর্কে জনগণকে সজাগ করতে হবে। কী পেলাম কী পেলাম না সেটা বড় কথা নয়, বড় কথা হলো বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যার মতো কষ্টের পাথর বুকে চেপে বাংলাদেশকে ষড়যন্ত্র ও দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষা করা।
লেখক : প্রফেসর ও সভাপতি, আইন বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়