ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মুদ্রাস্ফীতি ॥ সহজ পাঠ-কঠিন কাজ

ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর

প্রকাশিত: ২১:০০, ৮ আগস্ট ২০২২

মুদ্রাস্ফীতি ॥ সহজ পাঠ-কঠিন কাজ

মুদ্রাস্ফীতি

২০২২-২৩ সালের সরকারী বাজেট সংসদে অনুমোদিত হওয়ার প্রাককালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা  মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা ও রাখাকে এই অর্থবছরে সরকারের প্রধান কাজ বলে বিবৃত করেছেনগত ৭ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের নবনিযুক্ত গবর্নর দায়িত্ব নেয়ার পর তেমনি মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে এই সময়ে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান কাজ বলে বিশেষায়িত করেছেন২০২১-২২ সালের জুন মাসে দেশে মুদ্রাস্ফীতির হার ৬.১৫% বলে হিসাবকৃত হয়েছেসমকালে এই হার বেড়ে ৭.৪৮% বলে বলা হচ্ছে

১৯৭২ সালে  বাংলাদেশ ব্যাংক স্থাপনের পর দেশের বাণিজ্যে অন্তর্ভুক্ত পণ্যাদির (উদাহরণতঃ চাল, পাট, ফলফলাদি) তকালীন বাজারমূল্য ও দেশের অন্তর্নিহিত সম্পদের পরিমাপে বাংলাদেশের মুদ্রার মজুদ বা সরবরাহ এবং মূল্য স্থির করা হয়অর্থনীতিবিদদের বিশ্লেষণে যে কোন সময়ে মুদ্রার  মজুদের সঙ্গে ব্যাংক ব্যবস্থায় গচ্ছিত চাহিদা- আমানত, ব্যাংকবহির্ভূত ব্যবহারকারীর ভ্রমণ চেক (ট্রাভেলার্স চেক) এবং অন্যান্য চেক দ্বারা ব্যাংক থেকে উঠানো আমানত যোগ করে মোট মুদ্রা সরবরাহের প্রথমাংশ, নামত মুদ্রা-১ (এম ওয়ান) গঠিতমুদ্রা ১ এর সঙ্গে (১) সুদ-আয়কারী সঞ্চয়- আমানত, (২) কর আরোপণীয় ও করমুক্ত সাধারণ ভাবে ব্যবহার্য বাজারী পারস্পরিক তহবিল বা মিউচুয়াল ফান্ড, (৩) বিদেশী ব্যাংকে বাংলাদেশী ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানের গচ্ছিত রাত কাবারী সঞ্চয়ী আমানত, (৪) রাত মেয়াদী চলতে থাকা পুনঃক্রয় চুক্তির আওতাধীন মুদ্রাঙ্ক এবং (৫) মুদ্রা- বাজারে রক্ষিত বা পরিকল্পিত আমানতাঙ্ক সমূহ যোগ করে হিসাব করা হয় মুদ্রা সরবরাহের ২য় অংশ বা মুদ্রা-২ (এম-টু)

মুদ্রা ২ এর সঙ্গে  (১) দেশে গচ্ছিত বৃহ আমানত, (২)  বাংলাদেশীদের বিদেশী ব্যাংকে গচ্ছিত বৃহ আমানতাদি, (৩)  মুদ্রা- বাজারে কার্যরত পারস্পরিক তহবিল (মিচুয়াল ফান্ড) যোগ করে গঠিত হয় মুদ্রা-৩ (এম থ্রি)মুদ্রাস্ফীতির আলোচনায় অবস্থা ভেদে মুদ্রা সরবরাহের উপরোক্ত ৩ উপাদানই বিবেচনীয়উপরোক্ত বিবরণের আলোকে এ কথা স্মর্তব্য যে কোন সময়ে মুদ্রাস্ফীতির হার নির্ভর করে মুদ্রার মজুদ বা স্টকের পরিমাণ কমা বা বাড়ার সঙ্গে তার হস্তান্তর বাড়ার বা কমার গতির যোগফল থেকে প্রকৃত জাতীয় উপাদের পরিবর্তনের হার বাদ দিয়ে অবশিষ্টাংশের ওপরযে কোন অর্থব্যবস্থায় মুদ্রাস্ফীতির এই মৌল উপকরণাদি বাদ দিয়ে তার নিয়ন্ত্রণ করার কৌশল উদ্ভাবন বা প্রয়োগ করা যৌক্তিক বা সম্পূর্ণ হয় নাবাংলাদেশের মুদ্রাস্ফীতি বিশ্লেষণে এই সহজ পাঠ বা সূত্রটি সাধারণ ভাবে মনে রাখা দরকার

মোটা দাগে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে হলে এই প্রেক্ষিতে ত্রিবিধ পদক্ষেপ গ্রহণীয়এক, মুদ্রার মজুদ বা স্টক স্থিতিশীল রাখা এবং সম্ভব হলে কমানোদুই, মুদ্রার মালিকানার পরিবর্তন বা গতি  সাধারণ জনগণের প্রত্যাশা সংরক্ষিত করে স্থিতিশীল রাখাতিন, প্রকৃত জাতীয় উপাদ (ন্যাশনাল ইনকাম) বাড়ানো কিংবা ন্যূনপক্ষে স্থিতিশীল রাখা

২০২২-২৩ অর্থবছরের অনুমোদিত বাজেট অনুযায়ী বিদেশ থেকে প্রাপ্তব্য অনুদানসহ সরকারের রাজস্বপ্রাপ্তি প্রাক্কলিত হয়েছে ৪ লক্ষ ৩৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকায়এর বিপরীতে সরকারের ব্যয় অনুমোদিত হয়েছে ৬ লক্ষ ৭৮ হাজার ৬৫ কোটি টাকায়২০২২-২৩ সালে প্রক্ষেপিত বাজেট ঘাটতির পরিমাণ এই হিসাবে মোট ২ লক্ষ ৪১ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা বা মোট জাতীয় (ন্যাশনাল ইনকাম) উপাদের ৫.৪%এই ঘাটতির ৯৫ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা বিদেশ থেকে নিট ঋণ অবয়বে, দেশীয় ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ২ লক্ষ ৬ হাজার  ৩৩৪ কোটি টাকার ঋণ রূপে এবং ব্যাংক ব্যবস্থা বহির্ভূত উস (উদাহরণত জাতীয় সঞ্চয় সার্টিফিকেট বিক্রয়) থেকে ৪০ হাজার ১শত কোটি টাকার ঋণ নিয়ে মেটানো হবে বলে প্রস্তাব করা হয়েছে

উপরোক্ত উসাদি হতে আহরিত আয়ের বিপরীতে এই অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে বরাদ্দ অনুমোদিত হয়েছে ২ লক্ষ ৫৯ হাজার ৬১৭ কোটি টাকাসবচেয়ে বেশি উন্নয়ন বরাদ্দ হয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ ক্ষেত্রে, মোট বরাদ্দের ২৫%উন্নয়ন বাজেটের ১০% জ্বালানি ও বিদ্যুত খাতে, ১৮.৬% শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে, ৬.২% কৃষি খাতে, ৭.২% স্বাস্থ্য খাতে, ৬.২% সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ খাতে বরাদ্দ করা হয়েছে (দ্রষ্টব্যঃ পরিকল্পণা মন্ত্রণালয়, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী ২০২২-২০২৩)

সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে যে, দেশে এই জুলাইতে মূল্যস্ফীতির পরিমাণ ৭.৪৮%এ স্থিতীয় হয়েছে যা গেল জুন মাসে ছিল ৭.৫৬%২০১৩ সালে মূল্যস্ফীতির পরিমাণ ছিল ৭.৮৫%বর্তমান মূল্যস্ফীতির মধ্যে খাদ্যের মূল্যস্ফীতি ৮.১৯% এবং খাদ্যবহির্ভূত ক্ষেত্রে ৬.৩৯%সাধারণ মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে এবং অর্থব্যবস্থার স্থিতিশীলতার প্রয়োজনে এই অঙ্কের মুদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য এখনই সুচিন্তিত, সমন্বিত ফলপ্রসূ পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজনএই প্রয়োজন মেটাতে হলে মুদ্রাস্ফীতির উল্লেখিত সূত্র অনুযায়ী মুদ্রা সরবরাহ কমাতে হবে, মোট জাতীয় উপাদন বাড়াতে হবে কিংবা উত্তমতর সমন্বিতভাবে এই দুই পদক্ষেপই নিতে হবেমুদ্রা সরবরাহ কমাতে হলে প্রক্ষেপিত বাজেট ঘাটতি (২৪১৭৯৩ কোটি টাকা) কমাতে হবে

বাজেটের ঘাটতি কমাতে হলে সরকারের আয় বাড়াতে এবং ব্যয় কমাতে হবেআয় বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রশাসনিক ও বাণিজ্যিক রাজস্ব বাড়াতে মনোযোগ দিতে হবেসমকালীন বাজেটে প্রশাসনিক রাজস্বের পরিমাণ ৭৯২০ কোটি এবং বাণিজ্যিক রাজস্বের পরিমাণ ২০৬১৮ কোটি টাকা হবে বলে ধরা হয়েছেযথার্থ পর্যালোচনা ও পুনবীক্ষণের ভিত্তিতে এই আয় ২০% বাড়ানো সম্ভব ও যুক্তিসঙ্গত বলে ধরা যায়বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে সরকারের প্রশাসনিক ও বাণিজ্যিক রাজস্ব বাড়ানো হয়নি বললেই চলেআয়কর আরোপণ সুসংহত ও আদায়ের ফাঁকফোকর বন্ধ করে, মূল্য সংযোজন কর পুনঃবিন্যাসের মাধ্যমে উপাদনশীলতা বাড়িয়ে ও বিলাসী দ্রব্য সামগ্রীর ব্যবহার বা অবক্ষয় কমিয়ে, মাদক শুল্ক বাড়িয়ে, ভূমিকর সুবিন্যস্ত করে এবং স্ট্যাম্প বিক্রয় এর হার (নন জুডিসিয়াল) বাড়িয়ে সরকারের মোট আয় ৪৫০,০০০ কোটির ওপরে ফলপ্রসূ মাত্রায় উন্নীত করা যায়

যে পরিমাণে এই আয় বাড়বে সে পরিমাণ সরকার কর্তৃক গৃহীতব্য ঋণাঙ্ক কমবেবাংলাদেশ ব্যাংক বড় বড় ব্যবসা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানে ঋণপ্রবাহ না বাড়িয়ে কিংবা কু ও সন্দিগ্ধ রেয়াতী ঋণের প্রবাহ কমিয়ে, জাতীয় সঞ্চয় প্রকল্প অধিকতর বিস্তৃত করে এক্ষেত্রে উসারণীয় মুদ্রা-১ এ অন্তর্ভুক্তীয় ঋণ কমিয়ে আনতে পারেএকই সঙ্গে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উপাদন ক্ষেত্রে (যেখানে উপাদন কম সময়ে বাড়ানো যায়) বিনিয়োগ ও ব্যাংক ঋণ প্রবাহ বিস্তৃত করে মুদ্রাস্ফীতির রোধকরণে পদক্ষেপ নেয়া যায়সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ক্ষেত্রে ব্যাংক ঋণ বাড়ানো ও সুদের হার কমানোর যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে, তা এই প্রেক্ষিতে ইতিবাচক হয়েছে বলা চলে

একই সময়ে বৃহ ঋণখেলাপীদের অনুকূলে ঢালাওভাবে নমনীয় ও কোমল পরিশোধন নীতি বাস্তবায়নের যে পদক্ষেপ সম্প্রতি নেয়া হয়েছে তা মুদ্রাস্ফীতি কমানোর অনুকূলে নয় বিবেচনা করে সংশোধন করতে হবেসার্বিকভাবে ব্যাংক ব্যবস্থা যাতে উন্নয়ন অনুকূল ও মূল্যস্ফীতি প্রতিকূল প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোয় অববায়িত হয়, তার লক্ষ্যে একটি ব্যাংকিং কমিশনের মাধ্যমে দেশেলভ্য প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতাসমূহ কার্যশীলমুদ্রা নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে কাজে লাগাতে হবে

আয় বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সরকারী ব্যয় কমালে মুদ্রাস্ফীতির চাপ কমাবেএই লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারী ব্যয় কমানোর লক্ষ্যে কম প্রয়োজনীয় প্রাত্যহিক ব্যয় পরিহার বা সীমিতকরণ এবং উন্নয়ন প্রকল্প কাটছাঁট করা ও ক্ষেত্র বিশেষে তাদের বাস্তবায়ন প্রলম্বন করার নির্দেশ দিয়েছেন (দ্রষ্টব্য: জনকণ্ঠ জুলাই ২৬, ২০২২)একই প্রেক্ষাপটে মেগা প্রকল্পের অর্থায়ন সীমিত ও প্রলম্বিত করার জন্য বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন (দ্রষ্টব্য : ডঃ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ডেইলী স্টার, জুলাই ২২, ২০২২ইং)

এই ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ সুচিন্তিত ও সুফল বাহকঅধিকাংশ মেগা প্রকল্প মূলত দেশের অবকাঠামো প্রসারণের জন্য অনুমোদিত ও বাস্তবায়নাধীনএর মধ্যে বেশি সংখ্যকের বাস্তবায়ন প্রায় শেষ পর্যায়েএসব মেগা প্রকল্প এই পর্যায়ে বাদ দেয়া কিংবা ধীরগতিতে বাস্তবায়ন করা অযৌক্তিক মনে হয় অবশ্য নতুন মেগা প্রকল্প এই পর্যায়ে না নেয়াই সমীচীন হবেএই প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রকল্প এবং টেলিটকের ৫জি পর্যায়ে উন্নয়ন বাস্তবায়ন স্থগিত করা উত্তম সিদ্ধান্ত বলে বিবেচ্য

সমকালে মুদ্রাস্ফীতি নিরোধে প্রসারমান কৃষি উপাদন সবচেয়ে বেশি কার্যক্ষম হবে বলে মনে হয়। (বৃহত্তর কৃষি ক্ষেত্রের বিনিয়োগে মস্য ও প্রাণী সম্পদ খাত অন্তর্ভুক্ত)সৌভাগ্যত কৃষি ক্ষেত্রে উপাদন বেড়ে সাম্প্রতিক কালে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম তেমন বাড়তে দেয়নিবৃহত্তর কৃষি ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ বা বাজেট প্রক্ষেপিত উন্নয়ন বাজেটের ৬.২% থেকে বাড়িয়ে মোট ১০% এ উন্নীতকরণ জাতীয় উপাদের বা আয়ের স্থিতিশীলতা অর্জন করে এবং এ পরিমাণ বাড়ার লক্ষ্যে যথা প্রয়োজন বিনিয়োগ প্রযুক্ত করে মুদ্রাস্ফীতির তাপর্যমূলক অংশ বা উপকরণাদি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়

কৃষি খাতের উপাদন বাড়লে সরকার ও ব্যাংক ব্যবস্থাপ্রসূত আয় প্রবাহের বিপরীতে সাধারণ জনগণ কর্তৃক লভ্য বা ক্রয়যোগ্য জাতীয় উপাদ বেড়ে মূল্যস্ফীতির চাপ কমাবে এবং সাধারণ জনগণকে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রীর উচ্চমূল্য উসারিত কষ্ট থেকে পরিত্রাণ দেবেস্বাস্থ্য খাতে প্রক্ষেপিত ব্যয় মোট উন্নয়ন বাজেটের ৭.২% থেকে ৯.২% ভাগে বাড়িয়ে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে উন্নয়ন বাজেটের ১৮.৬% সুসমন্বিত করে এই দুই ক্ষেত্রে মূল্য বৃদ্ধির কষ্টকর প্রভাব থেকে সাধারণ মানুষকে সুরক্ষা দেয়ার পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন ও সম্ভবস্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাত থেকে উসারণীয় সেবার পরিধি ও মান বাড়িয়ে সার্বিকভাবে দেশজ উপাদের পরিমাণ বাড়ানো যায়একইক্রমে সাধারণ মানুষদের জন্য এই দুই ক্ষেত্রের সেবা উসারিত উপাদ অধিকতর পরিমাণে লভ্য করেএই প্রেক্ষিতে এই দুই ক্ষেত্রে ইতোমধ্যে অনুমোদিত বাজেট বরাদ্দ কমানো সঠিক হবে না বলে মনে হয়বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতে দীর্ঘ মেয়াদে ফল দেয়া কতিপয় প্রকল্পের বাস্তবায়ন এই অর্থবছরে ধরে রাখার সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যেই গৃহীত হয়েছেএই খাতের দৃশ্যমান শ্লথব্যবস্থাপনা ইতোমধ্যে বিনিয়োগকৃত জনসস্পদ ইপ্সিত মাত্রায় ব্যবহৃত হওয়ার পথে বিঘœ সৃষ্টি করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে

এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংস্কার সাধন করে বিদ্যুত ও জ্বালানির অভাবে জাতীয় উপাদ বাড়ানো যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় তার দিকে জরুরী দৃষ্টি দিতে হবেব্যক্তি খাতে উপাদনীয় বিদ্যুতের বিপরীতে সরবরাহ না পেয়েও বিদিত উপাদন ক্ষমতার জন্য মূল্য দেয়ার সিদ্ধান্ত পুনঃমূল্যায়িত করা প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছেবিদ্যুত ও জ্বালানি খাতের ইপ্সিত সুব্যবস্থাপনা জাতীয় উপাদ বাড়িয়ে এবং মু-১ ও মু-৩  কমিয়ে মূল্য বাড়ার প্রতিকূলে প্রতিরোধ সৃষ্টি করতে পারে।  প্রধানমন্ত্রী এই প্রেক্ষিতে বলেছেন যে, দেশের জ্বালানি খাতের ইপ্সিত ব্যবহার তথা উপাদ বাড়ানোর প্রতিকূলে এখনও কোন অনতিক্রমণীয় বাধা বা অশনিসঙ্কেত দেখা দেয়নিতথাপিও আমাদেরকে আগ থেকে ও সুসমন্বিতভাবে বিদ্যুত ও জ্বালানি ক্ষেত্রে আমাদের কার্যক্রম সুচারুভাবে এগিয়ে নিয়ে মুদ্রাস্ফীতির চাপকে পরাজিত করতে হবেবিদ্যুত উপাদন ও সরবরাহ স্থিতিশীল না হলে বা প্রয়োজন অনুযায়ী না বাড়লে গুরুত্বপূর্ণ কৃষি ও শিল্প উপাদন ব্যাহত হয়ে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়িয়ে দিতে পারে

বৃহত্তর কৃষি ক্ষেত্রে উপাদ বাড়ানোর সঙ্গে দেশের রফতানি আরও এবং দ্রুততর বেগে বাড়ানো সামগ্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হবেতৈরি পোশাক, ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রপাতি, ঔষধপত্রাদি ও বিদেশে শ্রমিক পাঠানো বাড়াতে হবেএসব রফতানির বিপরীতে প্রাপ্ত নিট বিদেশী মুদ্রা ভিন্নতর ইপ্সিত ক্ষেত্রে উপাদন অব্যাহত রাখা ও উপাদন বাড়ানোয় সহায়ক হবেখাদ্য পণ্যাদি, মাছ, প্লাস্টিক পণ্যাদি, ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী, তৈজসপত্রাদি, সাইকেল ইত্যাদি অপ্রচলিত পণ্যের রফতানি দেশের কৃষি ও শিল্প ক্ষেত্রে বৃহপাদন অব্যাহত রাখতে বা বাড়াতে এবং এই প্রক্রিয়ায় অর্জিত বিদেশী মুদ্রার লভ্যতা বাড়িয়ে বৃহ শিল্পে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল ও মূলধন দ্রব্যাদি আমদানি অব্যাহত রাখবে এবং ফলত দেশের অভ্যন্তরে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক হবে

রফতানিপ্রসূত বিদেশী মুদ্রা যাতে মূল্যের অধিমূল্যায়ন (আমদানির ক্ষেত্রে) এবং অধঃমূল্যায়ন (রফতানির ক্ষেত্রে) এবং হুন্ডি প্রক্রিয়ায় লোপাট না হয় এবং সার্বিকভাবে অর্থধৌতকরণ প্রক্রিয়ায় হারিয়ে না যায় তার দিকে যথার্থ দৃষ্টি দেয়া আবশ্যিক হবে

 

          লেখক : সংসদ সদস্য, সাবেক মন্ত্রী

×