
সরকারি দপ্তরে পদবি ও বেতন বৈষম্যকে লালকার্ড দেখিয়েছেন চাকুরীজীবিরা। বাংলাদেশ সচিবালয়ের মতো অন্যান্য দপ্তরে কর্মরত প্রধান সহকারী, উচ্চমান সহকারী, সহকারী ও সমপদগুলোকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদবি বাস্তবায়নসহ বেতন ১০ম গ্রেডে উন্নীতকরণের বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির পরপর ৩ (তিন) বারের সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে আজ শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সরকারি চাকরিতে পদবি ও বেতন বৈষম্য নিরসনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ প্রশাসনিক কর্মকর্তা বাস্তবায়ন ঐক্য পরিষদ আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে লালকার্ড দেখানো হয়েছে।
মানববন্ধনে দেশের সকল দপ্তর, অধিদপ্তর, পরিদপ্তর ও বিভাগসমূহের প্রধান সহকারী, উচ্চমান সহকারী, সহকারী, উচ্চমান করনিক, উচ্চমান সহকারী কাম হিসাবরক্ষক ও সমপদ এবং উক্ত পদগুলোর ফিডার পদের কর্মচারীরা অংশ নেন।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি আবু নাসির খান বলেন, বাংলাদেশ সচিবালয়ের ভিতরে ও বাইরে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের প্রধান সহকারী, উচ্চমান সহকারী, সহকারী ইত্যাদি পদের পদবি ও বেতন স্কেল এক ও অভিন্ন হওয়া সত্ত্বেও তৎকালীন সরকার ১৯৯৫, ১৯৯৭ ও ১৯৯৯ সালের প্রজ্ঞাপন দিয়ে শুধু সচিবালয়ের বর্ণিত পদগুলো আপগ্রেড করে প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদবি পরিবর্তনসহ ১০নং গ্রেডে উন্নীত করে। ফলে সরকারি দপ্তরগুলোর মধ্যে পদবি ও বেতন বৈষম্যের সৃষ্টি হয়।
এর ধারাবাহিকতায় পাবলিক সার্ভিস কমিশন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে বর্ণিত পদগুলোও আপগ্রেড করা হয়েছে, কিন্তু অন্যান্য দপ্তরের বর্ণিত পদবিগুলো অদ্যাবধি পূর্বাবস্থায়ই রয়ে গেছে। তিনি অনতিবিলম্বে এই পদবি বৈষম্যের অবসান চান।
সংগঠনের মহাসচিব মো. বেল্লাল হোসেন পরিচালিত অনুষ্ঠানে বলেন, ইতোমধ্যে সরকার প্রধান সহকারী, উচ্চমান সহকারীর সমস্কেল ও নিম্ন স্কেলের কর্মচারীদের মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, ব্লক সুপারভাইজার, ডিপ্লোমা প্রকৌশলী, নার্স, অডিটর, খাদ্য পরিদর্শক, পুলিশের এসআই ইত্যাদি পদবি আপগ্রেড করায় প্রশাসনিক ক্রমবিন্যাস ভেঙে পড়েছে। নিম্ন শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের উচ্চপদে আসীন করায় পরবর্তী প্রজন্ম উচ্চশিক্ষা গ্রহণে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের নির্দেশনা, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ৩ বারের সুপারিশ এবং ১০ম জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতার এতদবিষয়ে জাতীয় সংসদে বিষয়টি বাস্তবায়নের জন্য অনুরোধ সত্ত্বেও কেন বৈষম্য দূর হচ্ছে না তা আমাদের বোধগম্য নয়। তিনি কর্মচারীদেরকে নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে পদবি ও বেতন বৈষম্য নিরসনের জন্য মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
তিনি আরও বলেন, ১২ আগস্ট ২০২৫ তারিখের মধ্যে দাবি-দাওয়া বাস্তবায়ন কমিটি কর্তৃক নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে ৩০ বছর পূর্বের সৃষ্ট পদবি ও বেতন বৈষম্যটি নিরসন করতে হবে। অন্যথায় অধিদপ্তর, দপ্তর, সংস্থার কর্মচারীরা কর্মবিরতির মতো আরও কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবেন। মানববন্ধনে হাজার হাজার কর্মচারী সরকারি কর্মচারীদের পদবি ও বেতন বৈষম্যকে লাল কার্ড দেখিয়ে প্রতিবাদ করেন এবং অনতিবিলম্বে বৈষম্যমুক্ত সরকার যাতে তাদের দাবি বাস্তবায়ন করেন সে বিষয়ে জোর দাবি জানান।
মানববন্ধনে সরকারি কর্মচারীদের দাবির প্রতি একাত্মতা পোষণ করে শ্রম সংস্কার কমিশনের সদস্য রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশে স্থান ভেদে পদবি ও বেতন বৈষম্য কোনোভাবেই কাম্য নয়। সরকারি দপ্তরে ৩০ বছরের পদবি ও বেতন বৈষম্য দেশের স্বাধীনতা ও উন্নয়নের অন্তরায়। তিনি অনতিবিলম্বে নির্বাহী আদেশে সচিবালয়ের ন্যায় অন্যান্য সকল দপ্তরে এক ও অভিন্ন পদ-পদবি প্রদানের জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।
মানববন্ধনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জাকির হোসেন, লুৎফর রহমান, শাহাদত হোসেন, রবিউল জোয়াদ্দার, এনামুল হক মজুমদার, ইসলাম খান, জাহিদ হোসেন, রোকন উদ্দীন, আজিজ উদ্দিন মিয়াজি, শরীফুল ইসলাম, মিজানুর রহমান, মহসিন মিয়া, মাসুম প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
আফরোজা