
বাংলাদেশের ওপর ১৫-২০ শতাংশ শুল্ক আরোপের সম্ভাবনা
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ পহেলা আগস্ট প্রথম প্রহর থেকেই বাংলাদেশ থেকে রপ্তানিকৃত পণ্যের ওপর আরোপিত ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা। ঢাকা এবং ওয়াশিংটনের স্থানীয় সময়ের ব্যবধানজনিত কারণে বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টায় শুরু হবে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। কিন্তু এই রিপোর্ট লেখার সময়ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের শুল্ক সমঝোতার তৃতীয় পর্বের শেষদিনের বৈঠক চলছিল। ফলে ভোর রাতের সিদ্ধান্তটি জানা সম্ভব হয়নি। কাজেই এখনো প্রশ্ন থাকছে শুল্কহার ৩৫ শতাংশই থাকছে না-কি কমছে?
যদিও প্রথম এবং দ্বিতীয় দিনের বৈঠক শেষে ঢাকার প্রতিনিধিরা শেষদিনের বৈঠক থেকে ইতিবাচক ফল আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন। তারা জানান, এজেন্ডা অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ২৯ ও ৩০ জুলাই ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের ওপর আরোপিত শুল্ক কমানো হবে বলেই তারা দেশটির বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) দপ্তরের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ধারণা পেয়েছেন।
শুল্ক যথেষ্ট পরিমাণ কমবে আশাবাদ ব্যক্ত করে বাণিজ্য সচিব গণমাধ্যমকে বলেন, তবে কত হবে তা এখনই বলা সম্ভব হচ্ছে না। বৃহষ্পতিবার আমাদের শেষদিনের মিটিং আছে। বাংলাদেশের জন্য ভালো কিছু হবে বলে আশা করছি। সূত্রমতে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে শুল্কহার ১৫ থেকে ২০ শতাংশের মধ্যে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
জানা যায়, ওয়াশিংটন ডিসিতে বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় দুপুর সাড়ে ১২টায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের বৈঠক শুরু হয়ে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত (বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৩টা) প্রথম দিনের আলোচনা শেষ হয়। দ্বিতীয় দিনের আলোচনা চলে বাংলাদেশ সময় বুধবার সন্ধ্যা সাতটা থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত। ইউএসটিআরের সঙ্গে এ পর্বের শেষদিনের আলোচনা বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত তিনটা পর্যন্ত চলার কথা। এ সময়ের মধ্যে একটা সমঝোতা হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী ঢাকা।
আলোচনায় বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। আরও রয়েছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নাজনীন কাউসার চৌধুরী। বৈঠকে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের শীর্ষ কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের কর্মকর্তারা ভার্চুয়ালি অংশ নিয়েছেন। দ্বিপক্ষীয় এ আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে নেতৃত্বে আছেন সহকারী ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ ব্রেন্ডন লিঞ্চ। সঙ্গে আছেন বাণিজ্য ও শুল্ক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) কার্যালয়ে তৃতীয় দফা বৈঠকে বসার আগেই দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমানো তথা শুল্ক ইস্যুতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন পেতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেশকিছু পণ্য কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ। পাল্টা শুল্ক নিয়ে দরকষাকষির অংশ হিসেবে এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে উড়োজাহাজ, গম, তেল ও তুলা উল্লেখযোগ্য। এছাড়া আরও বেশকিছু পণ্য কেনার চিন্তা-ভাবনাও রয়েছে। আমদানির এসব উদ্যোগকে শুল্ক নিয়ে চূড়ান্ত আলোচনার ‘উদ্দীপক’ হিসেবে দেখছে ঢাকা।
জানা যায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ২ এপ্রিল বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৬০টি দেশের জন্য রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ বা পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিলেন। এর পাঁচদিনের মাথায় ৭ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রকে দুটি চিঠি পাঠায় বাংলাদেশ। ৯ এপ্রিল ট্রাম্প প্রশাসন পাল্টা শুল্ক আরোপ তিন মাসের জন্য স্থগিত করে। গত ৯ জুলাই ছিল তিন মাসের মেয়াদ শেষ হওয়ার শেষদিন।
ঠিক তার আগের দিন ৮ জুলাই ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন করে ঘোষণা দিয়ে জানান, বাংলাদেশের জন্য পাল্টা শুল্কহার হবে ৩৫ শতাংশ, যা কার্যকর হবে ১ আগস্ট থেকে। ভিয়েতনাম ২০ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপিন্স ১৯ শতাংশ, জাপান ১৫ শতাংশ, যুক্তরাজ্য ১০ শতাংশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ১৫ শতাংশ শুল্কহারে সমঝোতা করতে পেরেছে।
প্যানেল হু