
ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় বহু শিক্ষার্থী হতাহত হয়েছেন। রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থীর জীবন নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে একটি রহস্যময় গুজব ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকে। ‘অ্যানোনিমাস মেইন পেজ’ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে এই গুজব ছড়ানো হয় বলে দাবি সাইবার বিশেষজ্ঞদের।
বিমান বিধ্বস্ত: হৃদয়বিদারক ট্রাজেডি
সোমবার (২১ জুলাই) দুপুর ১টার পর বিমান বাহিনীর একটি এফটি-সেভেন বিজিআই প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান উত্তরার মাইলস্টোন কলেজের একটি ভবনে বিধ্বস্ত হয়। মুহূর্তেই ভবনে আগুন ধরে যায়। এ সময় ভবনের ভিতরে বহু শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল, যাদের অনেকেই হতাহত হন।
ভবিষ্যদ্বাণী করে স্ট্যাটাস? রহস্যময় পোস্ট ভাইরাল
এই মর্মান্তিক ঘটনার আগের দিন (২০ জুলাই) ‘অ্যানোনিমাস মেইন পেজ’ নামক একটি ফেসবুক পেজ থেকে একটি স্ট্যাটাসে বলা হয়, “একটি বিদ্যালয়ের বিল্ডিং ধসে পড়বে, অনেক শিশুর প্রাণহানি ঘটবে। দুর্বল রক্ষণাবেক্ষণের কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটবে।”
পরদিন উত্তরার ঘটনায় অনেকেই এই স্ট্যাটাসের সঙ্গে বিমান বিধ্বস্তের ‘যোগসাজশ’ খুঁজে পান। পেজটি পরবর্তীতে দাবি করে, তারা আগেই সতর্ক করেছিল। একই দিনে আরও একটি পোস্টে বলা হয়, “বাংলাদেশে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে একটি হোটেল বা হাসপাতালে বোমা বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।”
এসব পোস্ট মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে পড়ে, জনমনে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। অনেকে মনে করতে থাকেন, ঘটনাগুলোর পেছনে হয়তো কোনো আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র বা পরিকল্পিত হামলার ছায়া রয়েছে।
সতর্কতা ও ফাঁস: পেছনে স্ক্যামার চক্র
তবে দ্রুতই এই রহস্যের জট খুলে ফেলেন বাংলাদেশি সাইবার বিশেষজ্ঞরা। Probfly IT-এর প্রতিষ্ঠাতা আবদুল্লাহ আল ইমরান জানান, এটি মূলত অনলাইন বেটিং ও জুয়ার সাইট পরিচালনাকারী একটি স্ক্যামিং পেজ। তার টিম ও সহযোগী শুভ মিলে এই পেজের প্রকৃত পরিচয় উদঘাটন করে জানান— পেজটি পরিচালনা করছে চারজন ব্যক্তি, যাদের মধ্যে দুইজন নাইজেরিয়ান ও একজন আমেরিকান। এরা সবাই আন্তর্জাতিক স্ক্যাম চক্রের সদস্য।
ইমরান বলেন, “তারা গত রোববার এক মনগড়া ভবিষ্যদ্বাণী পোস্ট করে। দুর্ঘটনার পর সেটিকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের পেজে হাজার হাজার ফলোয়ার বাড়ায় এবং পরবর্তী পোস্টগুলোতে আরও গুজব ছড়িয়ে জনমনে ভয় সৃষ্টি করে।”
তবে সাইবার টিমের পদক্ষেপে পেজটির পরিচালকদের আইডি দ্রুত ডিঅ্যাক্টিভেট করে দেওয়া হয়, ফলে পেজটিও এখন আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
ফ্যাক্টচেক: এটি অ্যানোনিমাস নয়
আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এএফপির বাংলাদেশের সাবেক ফ্যাক্টচেক সম্পাদক কদরুদ্দিন শিশির জানান, এই পেজের সঙ্গে ‘অ্যানোনিমাস হ্যাকার গ্রুপ’-এর কোনো সম্পর্ক নেই। অ্যানোনিমাস-এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে এই ফেসবুক পেজের কোনো উল্লেখ নেই।
তিনি আরও বলেন, “এই পেজ মূলত অনলাইন জুয়া প্রমোটের কাজে ব্যবহৃত হয়। তারা পোস্ট ভাইরাল হওয়ার পর বাংলাদেশের বিষয়ে একের পর এক বিভ্রান্তিকর পোস্ট দিতে থাকে, শুধু ফলোয়ার বাড়িয়ে অনলাইন বেটিংয়ে মানুষকে জড়াতে।”
সতর্ক বার্তা: গুজব নয়, সত্য তথ্য ছড়ান
সাইবার বিশেষজ্ঞ ও গণমাধ্যমকর্মীরা সবাই এ বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। জনগণের প্রতি বার্তা— “ভিত্তিহীন গুজবকে প্রশ্রয় না দিয়ে, সত্য তথ্য যাচাই করে ছড়ান। অনলাইন স্ক্যাম ও গুজবের ফাঁদ থেকে নিজে নিরাপদ থাকুন, দেশকেও নিরাপদ রাখুন।”
শেখ ফরিদ