
রংপুরের জিআই পণ্যখ্যাত ‘হাঁড়িভাঙ্গা’ আম বাজারে আসতে শুরু করেছে। প্রতি বছর এই আম জুনের ২০ তারিখে আনুষ্ঠানিকভাবে বাজারজাত শুরু হলেও এবার তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে গাছ থেকে আগাম আম পাড়তে শুরু করেছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা। তবে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে আর কয়েকদিন পরে গাছ থেকে আম সংগ্রহের কথা বলা হচ্ছে। তখনই শুরু হবে হাঁড়িভাঙ্গা আমের ভরা মৌসুম। চাষিরা বলছেন, হাঁড়িভাঙ্গা আম পাকলে এটি তিন-চার দিনের বেশি রাখা যায় না। সংরক্ষণের কোনো কার্যকর পদ্ধতিও জানা নেই। যদি এই আম সংরক্ষণের সঠিক প্রক্রিয়া থাকত তাহলে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে প্রচুর পরিমাণে রপ্তানি করা সম্ভব হতো। হাঁড়িভাঙ্গা আম সংরক্ষণের জন্য এ অঞ্চলে একটি বিশেষায়িত হিমাগারের দাবি জানান তারা। হাঁড়িভাঙ্গা আমের উৎপাদন এলাকা মিঠাপুকুর উপজেলার খোড়াগাছ ও ময়েনপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, হাঁড়িভাঙ্গা আম বাজারজাত করা হচ্ছে। স্থানীয় বাজারে বাগান থেকে আম সংগ্রহ করে প্লাস্টিকের ক্যারেটে ভরা হচ্ছে। পরে সেগুলো দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠাচ্ছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। হাঁড়িভাঙ্গার মৌসুমে আমের সবচেয়ে বড় হাট বসে রংপুরের পদাগঞ্জ হাটে। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। পদাগঞ্জের হাটে সকাল থেকেই অটোরিকশা, ভ্যান ও পিকআপে করে আসতে থাকে ক্যারেটে ক্যারেটে আম। অনেককেই হাটের রাস্তায় সাইকেল ও ভ্যানে ক্যারেটে আম নিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আম বেচতে দেখা গেছে। ক্রেতাদের সরব উপস্থিতিতে জমজমাট হয়ে উঠেছে আমের বেচাকেনা।
পাইকারি ব্যবসায়ী আনারুল ইসলাম বলেন, বাগানে আম পরিপক্ক হয়েছে। বাগান মালিকরা তাকে ডেকে আম বিক্রির কথা বলেন। তাই তাদের কাছ থেকে তিনি আম কিনে বিক্রি করছেন। আম চাষি মাইনুল ইসলাম বলেন, এবার আবহাওয়া পরিস্থিতি বিবেচনায় অনেকেই আগেই আম পাড়া শুরু করেছে। আমের আকার বা সাইজ ভেদে প্রতিমণ আম সর্বনিম্ন ১ হাজার ২০০ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৪০০ টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে। হাঁড়িভাঙা আম খেতে সুস্বাদু। একেকটি আম ১৫০ থেকে ৫০০ গ্রাম হয়। খুচরা বাজারে এর দাম আরও বেশি। কাঁচা আমের তুলনায় আবার পাকা আমের দাম কম। এ ক্ষেত্রে গাছ পাকা আম হলে আবার বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। শুধু পদাগঞ্জ হাটেই নয়, হাঁড়িভাঙ্গা আমের প্রধান উৎপাদন এলাকা খোঁড়াগাছ, পাইকারহাট, ময়েনপুর, চ্যাংমারী, বালুয়া মাসুমপুর, কুতুবপুর, গোপালপুর, লোহানীপাড়া, রামনাথপুর, কালুপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় এমন দৃশ্য দেখা গেছে। আম বাগানের মালিক, আমের ফড়িয়া, বাগানের পরিচর্যায় নিয়োজিত ব্যক্তি, মৌসুমি আম বিক্রেতা, অনলাইনে আম বিক্রেতা, পরিবহন ব্যবসায়ী, কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবসায়ী সবাই যে যার মতো করে আম কেনাবেচার জন্য ব্যস্ত সময় পার করছেন। রংপুর শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল সড়ক, সিটি বাজার, লালবাগ, মডার্ন মোড়, ধাপ বাজার, শাপলা চত্বরসহ নগরীর বিভিন্ন হাট-বাজারে উঠতে শুরু করেছে এই আম। হাট-বাজার ছাড়াও পাড়া মহল্লার অলিগলিতে ফেরি করে হাঁড়িভাঙ্গা আম বিক্রি করতে দেখা গেছে। তবে প্রতিবারের মতো এবারও শুরুতেই আমের চড়া দাম চাইছেন বিক্রেতারা। আম ব্যাবসায়ী সাহাবুল ইসলাম জানান, বাজারের উপর দাম উঠানামা করে। পাইকারী হিসেবে ১৭শ মন ( ৪০ কেজি) ও খুচরা ৪৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রংপুরের উপ পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, হাঁড়িভাঙ্গা আমের মাধ্যমে রংপুরের কৃষি অর্থনীতি চাঙা হয়েছে। এ বছর আমগাছে মুকুল কম এলেও আমের আকার ও ফলন ভালো হয়েছে। তবে অতিরিক্ত গরমের কারণে নির্ধারিত সময়ের আগে হাঁড়িভাঙ্গা বাজারে এসেছে। সম্প্রতি হাঁড়িভাঙ্গা আম জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
Jahan