ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৩ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

জাতিসংঘ প্রতিবেদনের উদ্বেগজনক তথ্য

আঠারোর আগেই বাংলাদেশের অর্ধেক কিশোরীর বিয়ে

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০১:১১, ১৩ জুন ২০২৫

আঠারোর আগেই বাংলাদেশের অর্ধেক কিশোরীর বিয়ে

আঠারোর আগেই অর্ধেক কিশোরীর বিয়ে

বাংলাদেশে এখনো ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই ৫১ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী প্রতি এক হাজার কিশোরীর মধ্যে ৭১ জন ইতোমধ্যে সন্তান জন্ম দিয়েছে। আফ্রিকার কয়েকটি দেশ বাদে বিশ্বের আর কোথাও এত বেশি বাল্যবিবাহ নেই। এর ফলে কিশোরী গর্ভধারণ, মাতৃমৃত্যু ও শিশু মৃত্যুর হার বাড়ছে। অর্থাৎ বিশ্বজুড়ে যখন প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে অগ্রগতি ঘটছে, তখন বাংলাদেশের অবস্থান সেই উদ্বেগজনকই রয়ে গেছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত জাতিসংঘের জনসংখ্যাবিষয়ক সংস্থার (ইউএনএফপিএ) ‘২০২৫ সালের বৈশ্বিক জনসংখ্যা প্রতিবেদনে’ এই চিত্র উঠে এসেছে। এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্য, মাতৃমৃত্যু, অপ্রত্যাশিত গর্ভধারণ এবং বাল্যবিবাহের মতো বিষয় এখনো গভীর সংকটের জায়গায় রয়ে গেছে।

ইউএনএফপিএর প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিশ্বের বহু নারী এখনো তাদের প্রজনন অধিকার থেকে বঞ্চিত, নিজ ইচ্ছেমতো সন্তান নেওয়ার সিদ্ধান্ত বা পরিবার পরিকল্পনার সুযোগ নেই তাদের। বাংলাদেশে এই বাস্তবতা এখনো প্রবল। দেশের ১০ শতাংশ দম্পতি প্রয়োজনের সময় জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী পান না, যার পরিণতি হিসেবে অনাকাক্সিক্ষত গর্ভধারণ বেড়ে যাচ্ছে। যার পরিণতি পড়ে নারীস্বাস্থ্যের ওপর।
প্রতিবেদনের তথ্যমতে, মাতৃত্বকালীন নিরাপত্তা ও মাতৃমৃত্যুর হার আশঙ্কাজনক। ৭০ শতাংশ নারী সন্তান জন্মের সময় দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মীর সহায়তা পান, অর্থাৎ প্রতি ১০ জনের মধ্যে তিনজন প্রসবকালীন সময়ে অদক্ষ ব্যক্তির হাতে পড়ছেন। মাতৃমৃত্যুর হারও উদ্বেগজনক। প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশে প্রতি এক লাখ সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মৃত্যু হয় ১১৫ জন মায়ের।
প্রতিবেদন আরও জানায়, দেশের ২৩ শতাংশ নারী স্বামীর হাতে নির্যাতনের শিকার হন- এক বছরের ব্যবধানে। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের কাঠামোগত সহিংসতা নারীদের প্রজনন স্বাধীনতা ও জীবনমানকে প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
প্রতিবেদনে একটি তুলনামূলক সাফল্যের উদাহরণ হিসেবে উঠে এসেছে মধ্য আমেরিকার দেশ ডমিনিকান প্রজাতন্ত্রের নাম। ২০১৩ সালে দেশটিতে প্রতি হাজার কিশোরীর মধ্যে গর্ভধারণ করতো ৯০ জন; ২০১৯ সালে তা কমে আসে ৭৭ জনে। সরকারের নীতিগত পদক্ষেপ, সামাজিক বিনিয়োগ এবং ইউএনএফপিএ’র সহযোগিতায় দেশটিতে বাল্যবিবাহ ও কিশোরী মাতৃত্ব কমেছে। বাংলাদেশের জন্য এটি একটি অনুসরণীয় উদাহরণ হতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে এখন গড় আয়ু নারীদের ক্ষেত্রে ৭৭ বছর, পুরুষদের ক্ষেত্রে ৭৪ বছর। এর অর্থ, নারীরা বেশি দিন বাঁচলেও বৃদ্ধ বয়সে জীবনের মান নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। দেশের প্রায় সাড়ে ৭ শতাংশ মানুষের বয়স ৬৫ বছরের বেশি, সংখ্যায় যা ১ কোটিরও বেশি।
এই বয়স্ক জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ অন্যের আয়ের ওপর নির্ভরশীল এবং উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ক্যান্সারসহ নানা দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভোগেন। অথচ এই বয়সীদের জন্য দেশের নীতিনির্ধারণে আলাদা করে কোনো জোরালো পরিকল্পনা নেই। উন্নত দেশগুলোর মতো বাংলাদেশেও এই জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ পরিকল্পনা জরুরি বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।
ইউএনএফপিএ বলছে, বাংলাদেশে এখন প্রজনন হার ২ দশমিক ১-এ নেমে এসেছে, অর্থাৎ প্রতিস্থাপন পর্যায়ে রয়েছে জনসংখ্যা। এই হার বজায় থাকলে জনসংখ্যা স্থিতিশীল থাকবে। অথচ ৫০ বছর আগেও একজন নারী গড়ে পাঁচটি সন্তানের জন্ম দিয়েছেন।

×