
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাংবাদিক আশরাফ কায়সারের একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস ঘিরে নতুন করে আলোচনায় আসে—তাহলে কি ৫ আগস্টের আগেই দেশে ফিরছেন তারেক রহমান? বুধবার (১১ জুন) স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, “তিনি লন্ডন থেকে ফিরছেন ৩৬শে জুলাইয়ের আগেই।” এর আগের দিন (১০ জুন) তারেক রহমানের সঙ্গে একটি ছবি শেয়ার করে তিনি লেখেন, “গত ১০ মাসে নেতৃত্বের গুণাবলিতে তিনি দশ ধাপ এগিয়েছেন। চেষ্টা করছেন রাজনীতির নতুন ব্যাকরণের সঙ্গে বিএনপিকে মানানসই করতে।"
এদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান শিগগিরই দেশে ফিরছেন—এমন বার্তাই দিলেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মঙ্গলবার (১০ জুন) গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ ইঙ্গিত দেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, “তারেক রহমান অবশ্যই দেশে ফিরবেন। তিনি খুব শিগগিরই ফিরছেন।” তবে নির্দিষ্ট তারিখ জানাতে পারেননি তিনি।
বিএনপির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রও নিশ্চিত করেছে, ৫ আগস্টের আগেই দেশে ফিরতে পারেন তারেক রহমান। তবে দিন-তারিখ এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
গত ৪ জুন কলকাতার বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের প্রথম সচিব তারিক চয়ন তার ফেসবুক পেজে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের একটি ভিডিও পোস্ট করেন। সেখানে সালাহউদ্দিন বলেন, “উনি খুব শিগগিরই ফিরবেন ইনশাল্লাহ।” উপস্থাপিকার প্রশ্নে ইঙ্গিত দেন, সম্ভবত তিন মাসের আগেই।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পালাবদলের সময় অনেকেই ভেবেছিলেন, তারেক রহমান সেই দিনই দেশে ফিরবেন। ধারণা করা হয়েছিল, বিমানবন্দরে লাখো মানুষের সমাগম হতো। কিন্তু কেন ফিরলেন না, তা নিয়ে রয়ে গেছে প্রশ্ন।
চলতি বছরের ৬ মে খালেদা জিয়া দেশে ফিরলেও, তারেক রহমান তখন ফিরেননি। পরিবর্তে দেশে ফেরেন তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান। তখন দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারেক রহমানও অল্প কিছুদিনের মধ্যেই দেশে ফিরবেন। ইতোমধ্যে জুবাইদা রহমান লন্ডনে ফিরে গেছেন।
তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া সব মামলায় খালাস পাওয়ার পর দেশে ফেরার পথ আরও উন্মুক্ত হয়েছে। ২৮ মে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলাতেও তিনি খালাস পান। ফলে আইনি বাধা আপাতত নেই বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তবে পাসপোর্ট ইস্যুটি এখনো আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। সরকার দাবি করে, তারেক রহমান ও তার স্ত্রী-মেয়ে ২০০৮ সালে পাসপোর্ট ‘সারেন্ডার’ করেছিলেন। বিএনপি এ দাবি প্রত্যাখ্যান করে আসছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে নতুন করে আবেদন করলেই পাসপোর্ট পাওয়া কঠিন হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এখন মূল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে নিরাপত্তা। তারেক রহমানের উপদেষ্টা হুমায়ূন কবির বলেন, “তার দেশে ফেরা অন্তর্বর্তী সরকারের ওপরও কিছুটা নির্ভর করছে। নির্বাচনের রোডম্যাপ ও নিরাপত্তা গ্যারান্টি থাকলেই তিনি ফিরবেন।”
সম্প্রতি শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদ গ্রেফতারের পর তারেক রহমানকে হত্যাচেষ্টার গোপন তথ্য ফাঁস হয়। জানা যায়, পাকিস্তানি পাসপোর্টে লন্ডনে পাঠানো হয়েছিল এক সন্ত্রাসীকে। লক্ষ্য ছিল, জুমার নামাজে যাতায়াতের সময় তাকে হত্যা করা।
তার স্ত্রী জুবাইদা রহমানের জন্যও পুলিশি নিরাপত্তা চেয়ে চিঠি দিয়েছিল বিএনপি। তারেক রহমানের দেশে ফেরার ক্ষেত্রেও নিরাপত্তা ব্যবস্থাই হতে পারে সবচেয়ে বড় শর্ত।
এদিকে আসন্ন শুক্রবার (১৩ জুন) লন্ডনে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠক রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই আলোচনায় নিরাপত্তা ও দেশে ফেরার সময়সূচি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হতে পারে। সরকারের শীর্ষ মহলের উদ্যোগেই এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে বলেও জানায় একাধিক সূত্র।
তিনটি প্রধান বাধা ছিল তার দেশে ফেরার পথে—মামলা, পাসপোর্ট ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। মামলাগুলোর রায় এখন তার পক্ষে। পাসপোর্টও জটিল নয়। নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত হলে তারেক রহমান যে দেশে ফিরছেন, সে বিষয়ে আর সন্দেহ নেই বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
তাদের মতে, বিএনপির রাজনীতিতে আবারও প্রাণ ফিরিয়ে আনতে হলে দলের সর্বোচ্চ নেতার দেশের মাটিতে উপস্থিতি অত্যাবশ্যক। আর তা যদি হয় ৫ আগস্টের আগেই, তবে রাজনীতিতে নতুন মোড় আসতে পারে।
মিমিয়া