
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস লন্ডন সফরের সময় লেবার পার্টির এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের সঙ্গে দেখা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। এর আগে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে আলোচনা করতে ড. ইউনূসকে দেখা করার আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি দিয়েছিলেন টিউলিপ। বিবিসির সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস এ তথ্য জানিয়েছেন।
অধ্যাপক ড. ইউনূস বিবিসিকে বলেন যে, অভিযোগগুলি 'আদালতের বিষয়' এবং তিনি জানান বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপর তার আস্থা আছে, যা টিউলিপ সিদ্দিকের বিষয়ে তদন্ত করছে।
টিউলিপের বিরুদ্ধে তার খালা বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে অবৈধভাবে জমি গ্রহণের অভিযোগ আনে দুদক।
লন্ডনে সাবেক ট্রেজারি মিনিস্টার টিউলিপ এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে 'রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার' চালানোর অভিযোগ করেছেন।
একটি চিঠিতে টিউলিপ ইউনুসের সঙ্গে সাক্ষাতের অনুরোধ করেন। তিনি উল্লেখ করেন এই সাক্ষাৎ 'ঢাকায় দুর্নীতি দমন কমিশনের মাধ্যমে তৈরি হওয়া ভুল বোঝাবুঝি পরিষ্কার করতেও সহায়ক হতে পারে।
বিবিসির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূসকে জিজ্ঞাসা করা হয়, তিনি এই সপ্তাহে যুক্তরাজ্যে চার দিনের সফরের সময় সিদ্দিকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন কিনা।
বিবিসির সাথে এক সাক্ষাৎকারে ইউনূসকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে তিনি কি এই সপ্তাহে তার চার দিনের যুক্তরাজ্য সফরের সময় সিদ্দিকের সাথে দেখা করবেন?
ড. ইউনূস বলেন, 'না, করব না, কারণ এটা আইনি প্রক্রিয়া। আমি আইনি প্রক্রিয়ায় বাধা দিতে চাই না। প্রক্রিয়াটি চলতে থাকুক।
টিউলিপ যুক্তি দেখিয়েছেন, বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ তাদের অভিযোগের সমর্থনে কোনও প্রমাণ দেয়নি এবং তার আইনজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
সেসব যুক্তির জবাবে ড. ইউনূস বলেন: 'এটি আদালতের বিষয়। আদালতই সিদ্ধান্ত নেবে মামলা চালিয়ে নেওয়ার মতো যথেষ্ট উপাদান আছে কিনা, অথবা তা বাতিল করার জন্য।'
বাংলাদেশে প্রসিকিউটরদের আরও স্বচ্ছ হওয়া উচিত এবং সিদ্দিককে অপরাধের প্রমাণ দেওয়া উচিত কিনা — এই প্রশ্নের উত্তরে ইউনূস বলেন: 'প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে আমাদের দুর্নীতি দমন কমিশনের উপর আমার পূর্ণ আস্থা আছে এবং তারা সঠিক কাজটিই করছে।'
যদি টিউলিপ সিদ্দিক বাংলাদেশে কোনো অপরাধে দোষী প্রমাণিত হন, তাহলে তার প্রত্যর্পণ চাওয়া হবে কিনা — এই প্রশ্নের উত্তরে বলেন: 'যদি এটি আইনি প্রক্রিয়ার অংশ হয়, তবে অবশ্যই।
এক বিবৃতিতে টিউলিপ সিদ্দিক বলেন, ড. ইউনূস তার সাথে দেখা করতে অস্বীকৃতি জানানোয় তিনি হতাশ।
তিনি বলেন, 'মিডিয়ার কাছে কোনও প্রমাণ ছাড়াই, কাল্পনিক অভিযোগের ভিত্তিতে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, তিনি (ইউনূস) সে প্রতিহিংসার কেন্দ্রে রয়েছেন।'
'যদি এটা প্রকৃত আইনি প্রক্রিয়া হতো, তবে তারা আমার আইনজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগ করত, ঢাকায় এমন এক ঠিকানায় ভুয়া চিঠিপত্র পাঠাত না, যেখানে আমি কখনও থাকিনি।'
'আমি আশা করি তিনি এখন সংবাদমাধ্যমে আমার বিরুদ্ধে অপবাদ দেওয়ার অভ্যাস বন্ধ করার ব্যাপারে গুরুত্ব সহকারে কাজ করবেন এবং আদালতকে এটা প্রমাণ করার সুযোগ দেবেন যে তাদের তদন্তের সাথে আমার কোনও সম্পর্ক নেই - একজন আমি ব্রিটিশ নাগরিক এবং যুক্তরাজ্যের সংসদের একজন গর্বিত সদস্য।'
এই বছরের শুরুতে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর এথিকস অ্যাডভাইজার স্যার লরি ম্যাগনাস টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্তের পর, টিউলিপ সিদ্দিক তার মন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
মিমিয়া