
ঈদের ছুটির ষষ্ঠদিন বৃহস্পতিবারও রাজধানী ঢাকা ছিল অনেকটাই ফাঁকা
পরিবারের সঙ্গে ঈদের ছুটি কাটিয়ে ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছে মানুষ। সরকারি ছুটি আরও দুইদিন আছে। তাই ঢাকায় ফেরাদের বেশিরভাগই বেসরকারি চাকরিজীবী। অন্যদিকে আজও অনেকে নাড়ির টানে ফিরছেন বাড়িতে।
বৃহস্পতিবার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিটি ট্রেন ভর্তি হয়ে ঢাকায় ফিরছে। প্রতিটি ট্রেনে তিল ধারণের জায়গা নেই। করোনার সতর্কতা সত্ত্বেও মাস্কবিহীন গাদাগাদি করে মানুষ ঢাকায় আসছে। একই অবস্থা বাস-লঞ্চেও। মহাখালী, যাত্রাবাড়ী ও সায়েদাবাদেও ঢাকামুখী মানুষের চাপ। সদরঘাটে প্রতিটি লঞ্চ ভিড়ছে যাত্রী বোঝাই হয়ে।
স্টেশন ঘুরে দেখা যায়, আজও অনেকে বাড়ি যাচ্ছেন। নির্ধারিত সময়েই প্রতিটি ট্রেন স্টেশন ছেড়ে যাচ্ছে, ফিরেও আসছে সঠিক সময়ে। তবে যে ট্রেনগুলো ঢাকায় ফিরেছে সেগুলো যাত্রীবোঝাই ছিল, আর ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনগুলোতে যাত্রী অনেকটাই কম দেখা গেছে।
স্টেশনে কথা হয় চাকরিজীবী আবদুল কাইয়ুমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ঈদে অফিসে ডিউটি করতে হয়েছে, ছুটি মেলেনি। এখন ছুটি পাওয়াতে বাড়ি ফিরছি। আরেক যাত্রী সায়েম আহমেদ বলেন, ঢাকায় কোরবানি, পাশাপাশি অফিস নিয়ে ব্যস্ততায় ছিলাম। এখন তা কমতেই বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।
এদিকে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনগুলোতে যাত্রীর পরিমাণ কম হলেও উল্টো চিত্র ঢাকায় ফেরা ট্রেনগুলোর। প্রতিটি ট্রেনই যাত্রীবোঝাই হয়ে ফিরছে। তবে সেবার মান নিয়ে কেউ তেমন কোনো অভিযোগ করেননি।
গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকায় আসা যাত্রী হাসান জয় বলেন, ফিরতে তেমন কোনো কষ্ট হয়নি। তবে আরও কিছুদিন পরিবারের সঙ্গে কাটাতে পারলে ভালো লাগত। যাত্রী মোবারক হোসেন বলেন, ঈদের ছুটি শেষ হয়ে গেছে। অফিস করার জন্য চলে আসতে হলো।
পরিবারসহ ঈদের ছুটি কাটিয়ে ঢাকায় ফিরেছেন মোস্তফা জামান। তিনি বলেন, আনন্দসহকারে গ্রামে ঈদ কাটিয়েছি। তবে চাইলেও তো বেশিদিন থাকা যায় না, কাজকর্ম শুরু হয়ে গেছে। তাই চলে এলাম।
এদিকে যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে স্টেশনে রেলকর্মীদের যথেষ্ট উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। পাশাপাশি দেখা গেছে রেলওয়ে পুলিশকেও।
যাত্রাবাড়ী ও সায়েদাবাদে ঢাকামুখী মানুষের চাপ ॥ ঈদের ছুটি শেষে কর্মস্থলে যোগ দিতে ঢাকায় ফিরছেন প্রিয়জনের সঙ্গে গ্রামে ঈদ করতে যাওয়া মানুষ। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাজধানীর অন্যতম প্রবেশপথ যাত্রাবাড়ী ও সায়েদাবাদ এলাকা ঘুরে ঢাকামুখী মানুষের ভিড় দেখা গেছে। ঈদের পর আজই ঢাকায় ফেরা যাত্রীর চাপ সবচেয়ে বেশি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
যাত্রাবাড়ী-সায়েদাবাদসহ আশপাশের এলাকার সড়ক-মহাসড়কে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যাত্রীপূর্ণ একের পর এক বাস এসে থামছে। বাস থেকে নেমে যাত্রীরা বাসার পথ ধরছেন লোকাল বাস, সিএনজিচালিত অটোরিক্সা, ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা কিংবা ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলে।
যাত্রাবাড়ী-সায়েদাবাদ এলাকা এখন লাগেজ, ব্যাগ, বস্তা বহনকারী গ্রাম থেকে কর্মস্থলে ফেরা মানুষের আনাগোনায় মুখর। অনেককেই গ্রামে কোরবানি দেওয়া গোশত বহন করতেও দেখা গেছে।
পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার ভোর হওয়ার আগে থেকেই দেশের বিভিন্ন গন্তব্য থেকে বিপুল সংখ্যক বাস যাত্রী নিয়ে রাজধানীতে প্রবেশ করতে শুরু করে। এখন পর্যন্ত রাজধানীতে ফিরতে সড়কে যানজট কিংবা বড় কোনো সমস্যার কথা শোনা যায়নি।
বরিশাল ও খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে যাত্রীরা এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে পোস্তগোলা সেতু পার হয়ে জুরাইন, দোলাইপাড়, যাত্রাবাড়ী ও সায়েদাবাদে নামছেন। অন্যদিকে চট্টগ্রাম, সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে যাত্রীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড, মেডিক্যাল, রায়েরবাগ, শনির আখড়া, কাজলা, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ এসে নামছেন।
অনেকেই বাসে এসে সায়েদাবাদে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের ওপর নামছেন। ফ্লাইওভারের ওপরে নামা যাত্রীদের সায়েদাবাদ অংশের ঢাল বেয়ে নিচে নামতে দেখা গেছে।
চাঁদপুর রুটে চলাচল করা পদ্মা এক্সপ্রেসের চালক মো. শাহ আলম বলেন, আজকে যাত্রীর চাপ সবচেয়ে বেশি। পুরো গাড়ি ভরে যাত্রী নিয়ে এসেছি। আগামী কয়েকদিন এ চাপ থাকবে।
গত শনিবার সারাদেশে মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা উদ্যাপিত হয়। ঈদ উপলক্ষে এবার সরকারি কর্মচারীরা টানা ১০ দিনের ছুটি পেয়েছেন। গত ৫ জুন শুরু হওয়া ঈদের ছুটি আগামী ১৪ জুন পর্যন্ত কাটাবেন সরকারি চাকরিজীবীরা।