ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৪ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

মিরাজের কণ্ঠে দিন বদলের প্রত্যয়

শাকিল আহমেদ মিরাজ

প্রকাশিত: ২২:২৩, ১৩ জুন ২০২৫

মিরাজের কণ্ঠে দিন বদলের প্রত্যয়

.

এশিয়া কাপের ফাইনাল, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনাল, বিশ্বকাপের কোয়ার্টার, র‌্যাংকিংয়ে পাকিস্তান-ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো দলকে ছাড়িয়ে যাওয়া; টাইগার ক্রিকেটে সাফল্যের যত স্মৃতি তার পুরোটাই ওয়ানডে ঘিরে। সেই পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেটেও এখন ধুঁকছে বাংলাদেশ। ২০২৩ বিশ্বকাপে দুটি মাত্র জয়, এরপর জয়হীন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, দ্বিপক্ষীয় সিরিজ মিলিয়ে ২০২৩ সালের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ৪৩ ম্যাচে জয় ১৪টিতে। সবশেষ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর নেতৃত্বে ১৩ ম্যাচে জয় মাত্র চারটিতে। লজ্জাজনকভাবে ১৯ বছর পর র‌্যাংকিংয়ের ১০ নম্বরে নেমে গেছে বাংলাদেশ। কঠিন এই পরিস্থিতিতে অধিনায়কের দায়িত্ব পেলেন মেহেদি হাসান মিরাজ। আসন্ন শ্রীলঙ্কা সফর দিয়েই শুরু হচ্ছে ২৭ বছর বয়সী অলরাউন্ডারের নতুন অধ্যায়। প্রিয় ফরম্যাটে দলকে কক্ষপথে ফেরানোর আশাবাদ শুনিয়েছেন তিনি। বলেছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবালের মতো গ্রেট অধিনায়কের অধীনে খেলার অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চান তিনি, চান শান্ত-লিটনদের সহযোগিতা।
মিরাজকে অধিনায়ক করা হয়েছে এক বছরের জন্য। ২০২৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপ পর্যন্ত হলে ভালো হতো কি না? শুক্রবার সকালে মিরপুরের শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে শুরুতেই এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হন এ অলরাউন্ডার,‘লম্বা সময় (দায়িত্বে) পেলে ভিশন ভালো থাকে। সামনে ওয়ানডে বিশ্বকাপ আছে। যেহেতু দল হিসেবে আমরা এখন একটু সংগ্রাম করছি, তাই বোর্ড হয়ত ভেবেছে এক বছরে একটা জায়গায় দাঁড় করাই দলকে। এরপর হয়ত পরবর্তী ধাপ দেখবে- কন্টিনিউ করবে না কী করবে। এখন সময় এসেছে ওয়ানডে দলকে একটা জায়গায় দাঁড় করানোর। আমাদের দুজন সিনিয়র ক্রিকেটার (মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ) অবসর নিয়েছেন। যারা সুযোগ পাবে তাদেরকে এই জিনিসগুলো বা কারা সুযোগ পাবে, আমার মনে হয় এক বছরের মধ্যে ঠিক করা যাবে।’ জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব অবশ্য আগেও করেছেন মিরাজ। গত বছর শান্তর চোটে প্রথমে আফগানিস্তানের বিপক্ষে শেষ ওয়ানডে, পরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে তিন ওয়ানডে ও দুই টেস্টে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। ওয়ানডেতে জয়ের মুখ দেখেননি ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক। তবে টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে স্মরণীয় সাফল্য পান তিনি,‘একটা পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আমার অধিনায়কত্ব অভিষেক হয়েছিল। শান্ত অধিনায়ক ছিল। ও চোটে পড়েছিল দেখেই ওয়েস্ট ইন্ডিজে আমাকে দেওয়া হয়েছিল। ওই রকম পরিস্থিতিতে একটু কঠিন। কারণ হঠাৎ অধিনায়কত্ব করেছি। আর সেট-আপ ও পরিকল্পনা পুরো শান্তরই ছিল। আমার শুধু মাঠ চালাতে হয়েছে। অবশ্যই ওই চার ম্যাচে আমার অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে। লম্বা সময়ের জন্য পেলে একটু ভালো হয়। দলকে বুস্ট-আপ করা যায়। এখন যেহেতু এক বছরের জন্য পেয়েছি, চেষ্টা করব দলকে সুন্দর একটা জায়গায় দাঁড় করাতে।’
গুঞ্জন উঠেছে বোর্ডের এমন আচমকা সিদ্ধান্ত ভালোভাবে নেননি শান্ত। এমনকি টেস্টের দায়িত্বও ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবছেন তিনি। মিরাজ বলেন,‘আমার মনে হয়, ড্রেসিং রুমে এরকম কোনো প্রভাব পড়বে না। দিন শেষে সবাই দেশের হয়ে ক্রিকেট খেলি। শান্ত ও আমার মধ্যে এগুলো কখনোই কাজ করবে না। ও যখন অধিনায়কত্ব করেছে, আমি অনেক সাহায্য করেছি। আশা করি, সেও আমাকে করবে। ওর সঙ্গে আমার এই কথাই হয়েছে। আশা করি আমার ভেতরেও এই জিনিসটা আসবে না। বাংলাদেশের হয়ে আমরা একসঙ্গে কাজ করব। ওর সঙ্গে ছোটবেলা থেকে একসঙ্গে ক্রিকেট খেলছি। অনূর্ধ্ব-১৫ থেকে একসঙ্গে আছি। আমাদের যে জিনিসটা মনে হয়, অধিনায়ক তেমন ম্যাটার করে না। দল হয়ে খেলাটা গুরুত্বপূর্ণ। ওর সঙ্গে যখনই কথা হয়েছে, দুজনে এটাই আলোচনা করেছি- বাংলাদেশকে কতদূর নিয়ে যেতে পারি। সিনিয়র ক্রিকেটার যারা ছিলেন তারা একটা পর্যায়ে এনেছেন। এখন দায়িত্ব আমাদের।’
মুশফিকুর রহিমের অধিনায়কত্বে টেস্ট, মাশরাফি বিন মুর্তজার নেতৃত্বে ওয়ানডে ও টি২০ অভিষেক মিরাজের। সাকিব, তামিম, মাহমুদউল্লাহর নেতৃত্বেও খেলেছেন,‘অনেক অধিনায়ককে পেয়েছি আমি। এটা আমার জন্য ভালো লাগার বিষয়। তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পেরেছি। যেটা আমি কাজে লাগাতে পারব। এখন আমাদের অবশ্যই দায়িত্ব নেওয়ার সময় এসেছে। আমরা যথেষ্ট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছি, প্রায় ৮-৯ বছর ধরে খেলছি। যারা জুনিয়র আছে তাদের অবশ্যই পারফর্ম করতে হবে, ওই পরামর্শগুলো দেব। আমরা যখন প্রথম দলে ঢুকেছি, বড় ভাইরা আমাদের যেভাবে সাহায্য করেছে, চেষ্টা করব সেভাবে (জুনিয়রদের) সাহায্য করার, ড্রেসিংরুমটা ওভাবে রাখার। যেন যে-ই ড্রেসিংরুমে থাক না কেন, সে যেন অনুভব করে যে, আমি একা নই, আমার সঙ্গে সবাই আছে।’ তিন সংস্করণ মিলিয়ে এখন পর্যন্ত সাকিবের অধিনায়কত্বে সবচেয়ে বেশি ৪১ ম্যাচ খেলেছেন মিরাজ।

প্যানেল

×