ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৫ মে ২০২৫, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

শাহবাগে ভারতীয় আগ্রাসন বিরোধী সমাবেশ, জুলাই ঐক্যের সঙ্গে এক মঞ্চে বিএনপি জামায়াত ও এনসিপি

ইসরাফিল ফরাজী

প্রকাশিত: ২১:১১, ২৫ মে ২০২৫; আপডেট: ২১:১২, ২৫ মে ২০২৫

শাহবাগে ভারতীয় আগ্রাসন বিরোধী সমাবেশ, জুলাই ঐক্যের সঙ্গে এক মঞ্চে বিএনপি জামায়াত ও এনসিপি

ভারতীয় ষড়যন্ত্র রুখে দিতে জুলাই ঐক্যের আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশের এক মঞ্চে এসেছেন বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি, গণ অধিকার পরিষদসহ ৮৬টি রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের প্রতিনিধিরা। 

রোববার (২৫ মে) দুপুরে শাহবাগে আয়োজিত এই প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে জুলাইয়ের আহত যোদ্ধাদের দ্রুত চিকিৎসা, শহিদ পরিবারের পাশে দাঁড়ানো, শহিদের স্বীকৃতি, জুলাইয়ের ঘোষণাপত্র ও ভারতসহ সকল বিদেশি শক্তির আধিপত্যের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলা হয়। 

জুলাই ঐক্যের সংগঠক এবি জুবায়েরের সঞ্চালনায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিন উপলক্ষ্যে রণ সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। প্রতিবাদ সমাবেশের উদ্বোধনী ঘোষণা করেন চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে শহিদ হৃদয়ের ভাই মো. আনিস। 

উদ্বোধনী বক্তব্যে জুলাই ঐক্যের সংগঠক মুসাদ্দেক আলী ইবনে মোহাম্মদ বলেন, জুলাই ঐক্য’র নেতৃবৃন্দ জানান, তারা ভারতীয় ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ফ্যাসিবাদী কৌশলে চলমান সরকারকে মেনে নেবেন না। তারা জানান, ‘জুলাই ঐক্য’র শক্তিকে বিভক্ত করে কিছু মহল ‘মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে রাষ্ট্র পরিচালনার চেষ্টা করছে, যা তারা মেনে নেবেন না।

ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ইমরান হুসাইন নুর বলেন, ৯ মাসেও আমরা দৃশ্যমান কোনো সংস্কার দেখছি না। অন্তর্বর্তী সরকারের কথা ছিল গণহত্যার বিচার করা, কথা ছিল সংস্কার করে নির্বাচন করা কিন্তু কিছুই করা হচ্ছে না।  যদি সংস্কারের নামে ধর্ষণ চলে, চাঁদা বাজি চলে তাহলে এই সংস্কারের প্রয়োজন নাই। জুলাইয়ের শহিদ পরিবারের সদস্যরা খেতে পায় না, আহতরা চিকিৎসা পায় না। 

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদী বলেন, সেনাবাহিনীর সঙ্গে যারা সংঘাত তৈরি করতে চায় তারা বাংলাদেশের বন্ধু নয়। তবে যে সব সেনাবাহিনীর সদস্যরা হাসিনাকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছে, ৬২৬ জনকে সেনানিবাসে আশ্রয় দিয়ে ভারত পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছে তাদের বিচার করতে হবে। যেসব সেনাসদস্যরা আমাদের পাশে থেকেছে তাদের পাশে আছে সারা বাংলাদেশ। খুনি হাসিনা যখন ভারতকে একের পর এক করিডোর দিয়েছিল তখন সেনাবাহিনী কোথায় ছিল। যতক্ষণ পর্যন্ত জুলাই গণহত্যার বিচার না হবে, জুলাই ঘোষণাপত্র না দেওয়া হবে ততক্ষণ পর্যন্ত জুলাই চলছে চলবে। 

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে দেওয়া অন্যতম সংগঠক ও কেন্দ্রীয় ছাত্রশিবিরের প্রকাশনা সম্পাদক সাদিক কায়েম বলনে, গত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগ প্রেসক্রিপশনে ভারত আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। পাশাপাশি বিচারব্যবস্থা ধ্বংস করেছে, সকল প্রতিষ্ঠানকেও তারা ধ্বংস করেছে। তাছাড়া এই আওয়ামী লীগ বিনা বিচারে মানুষ মেরেছে, শাপলা চত্বরে আলেমদের হত্যা করেছে, গুম-খুন করেছে। ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে শহিদদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশকে মুক্ত করেছি।

তিনি বলেন, জুলাইয়ের পর আমাদের স্বপ্ন ছিল একটি ইনসাফ ভিত্তিক বাংলাদেশ গড়া। সকল স্টেক হোল্ডারদের সাথে নিয়ে একটি ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ গড়া। কিন্তু আমরা দেখতে পেয়েছি কিছু লোক সেই ঐক্য বিনষ্ট করছে। আমাদের যারা আহত আছে, যারা পঙ্গুত্ব বরণ করেছে তারা এখনো সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছে না। এর চাইতে লজ্জার আর কিছু হতে পারে না।

সাদিক কায়েম বলনে, আমরা ইন্টেরিম সরকারকে বলবো, যারা গণহত্যা চালিয়েছে, যারা এতে হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতা করেছে, তাদের দ্রুত বিচার করতে হবে। দেশের ধ্বংস হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে রিফর্ম করতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশের মেজর পলিটিক্যাল পার্টিগুলোতে বলতে চাই, জুলাই পরবর্তী বাংলাদেশে একটি প্রজন্ম তৈরি হয়েছে। যারা আর ফ্যাসিবাদকে ভয় পায় না, কাউকে ভয় পায় না। তারা ছাত্রদল করেন না, শিবির করেন না, জামায়েত করেন না। কিন্তু তারা সত্যি বলতে শিখে গেছে। জুলাই বিপ্লবের যে স্পিরিট তা যদি ধারণ না করেন, ফ্যাসিবাদের মতো কাজ করেন, তাহলে খুনি হাসিনার যে পরিণতি হয়েছে আপনাদেরও তা হবে।

জুলাই মাসে প্রাণ হারানো ও আহত আন্দোলনকারীদের আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতেই বাংলাদেশ রাষ্ট্র পরিচালনা করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন জুলাই ঐক্য প্ল্যাটফর্মের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ (আপ বাংলাদেশ)-এর আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ।

আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের মনে রাখতে হবে, আপনারা শহিদ ও আহতদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আছেন। তাই রাষ্ট্র পরিচালনায় তাদের আকাঙ্ক্ষা ও আত্মত্যাগকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।

তিনি বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্র এ জাতির মুক্তির আকাঙ্ক্ষার সনদ হবে। এ ঘোষণাপত্র জারি করতে হবে। আমরা শহিদদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা এবং আহত ও জীবনবাজি রাখা যোদ্ধাদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চাই।

এ সময় তিনি দাবি করেন, নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার হুমকির বিপরীতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

জুনায়েদ বলেন, ৫ আগস্টের মধ্য দিয়ে জুলাই যোদ্ধারা দিল্লির আধিপত্যবাদকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। আজ বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্লোগান হয়ে দাঁড়িয়েছে-‘দিল্লি না ঢাকা? ঢাকা ঢাকা।’ মানুষ আর দাসত্ব মেনে নেয় না, তারা মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। যদি ফ্যাসিবাদের ছায়া আবারও দেখা যায়, জুলাই যোদ্ধারা জীবন দিতে প্রস্তুত রয়েছে ইনশাআল্লাহ।

গণ-অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, ৫ আগস্টে জনগণ রায় দিয়েছে—আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ। তা সত্ত্বেও সরকার চলছে গুটিকয়েক মানুষের কথায়। আমরা চাই একটি নির্বাচনের রোডম্যাপ, আলোচনা ও সংস্কার। তিনি উপদেষ্টা পরিষদের পুনর্গঠন এবং হত্যাকাণ্ডের বিচারসহ প্রয়োজনীয় সংস্কার দাবি করেন।

এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুর রহমান আদিব বলেন, যখনই গণ-অভ্যূত্থানের পর ভারতের আধিপত্য কমে গেল তখনই বিভিন্নভাবে আমাদের মাঝে ফাটল ধরানোর চেষ্টা করা হল। আমরা বলতে চাই বাংলাদেশের প্রতিটি সেক্টর থেকে ভারতীয় আধিপত্যবাদকে উৎখাত করতে হবে। জুলাইয়ের অনেক যোদ্ধারা  আজ ৯ মাস হয়ে গেছে এখন পর্যন্ত বিচারের কোনো অগ্রগতি নেই। আহত পরিবারের সদস্যরা এখনও হাসপাতালে। ২ হাজার শহিদ ছাত্র জনতা শহিদ হওয়ার পরও আমরা এখন পর্যন্ত সংস্কার করতে পারিনি।  আমরা এখনও মাঠে আছি।  ছাত্রজনতা এখনও মাঠ ছেড়ে যায়নি। কোনো কিছু করার আগে শহিদ পরিবারকে জিগ্যেস করেন নির্বাচন আগে নাকি সংস্কার আগে। তার পর সিদ্ধান্ত নিন। 

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি মুহাম্মদ দেলাওয়ার হোসেন বলেন, এই সেই চত্বর, যেখান থেকে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটেছিল। যারা আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের স্বপ্ন দেখছেন, তারা বোঝেন না—এটা আর কখনো সম্ভব হবে না। আমরা ছাত্রজনতার পাশে ছিলাম আছি থাকব। শেখ হাসিনার গণহত্যার বিচারের রোডম্যাপ না আসা এবং সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত আমরা নির্বাচন হতে দিব না। 

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, বিগত সরকার ছিল খুনি সরকার।  শহিদদের তালিকা প্রস্তুত করুন, তাদের পরিবারের খোঁজ নিন।  শাপলা চত্বর ও পিলখানার হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে।  

তিনি বলেন, কাউকে বিচারের বাইরে রাখা চলবে না।  আমাদের মধ্যে আদর্শের ভিন্নতা থাকতে পারে, মতপার্থক্য থাকতে পারে, ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে কিন্তু দিন শেষে ফ্যাসিস্ট সরকার ফিরে আসার বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমরা আর কোনো ভারতীয় দাসত্ব মেনে নেব না, কোনো দেশের দাসত্ব মেনে নেব না। বাংলাদেশের মানুষ বাংলাদেশের মতো চলবে।

রিফাত

×