
ছবিঃ সংগৃহীত
বরগুনার আমতলীতে গত ১১ দিনে বজ্রপাতে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। তিনজনই নিহত হয়েছে মাঠে কাজ করতে গিয়ে। মাত্র ১১ দিনের ব্যবধানে বজ্রপাতে এতো প্রাণহানির ঘটনায় কৃষক ও সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। আকাশে মেঘ দেখলেই তারা আতঙ্কিত হয়ে উঠছেন। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে সরকারিভাবে উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাতে আমতলী উপজেলা গুলিশাখালী ইউনিয়নের ষোলহাওলা গ্রামের নিজাম মুসুল্লির ছেলে জসিম মুসুল্লি (৩৮) ও তার ছেলে রিয়াদ মুসুল্লি রাতে মাঠ থেকে বাদামের আটি নিয়ে বাড়ী ফেরার পথে ভারী বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত হয়। ওই বজ্রপাতে কৃষক জসিম মুসুল্লি মারা যায়। এ ঘটনার আট দিন আগে গত ২৯ এপ্রিল বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার কুকুয়া ইউনিয়নের পশ্চিম চুনাখালী গ্রামের মোসলেম গাজীর মেয়ে পোলেনুর বেগম মাঠ থেকে ডালের আটি নিয়ে বাড়ী ফেরার পথে ভারী বৃষ্টিপাতের সঙ্গে বজ্রপাত হয়। ওই বজ্রপাতে তার শরীর জ্বলসে ঘটনাস্থলেই তিনি নিহত হয়।
এ ঘটনার দুইদিন আগে গত ২৭ এপ্রিল বেলা ১০ টার দিকে উপজেলার আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের আলগী গ্রামের বশির হাওলাদারের ছেলে রিপন হাওলাদার মাঠে গরু চরাতে যায়। ওই সময় ভারী বৃষ্টিপাতের সঙ্গে বজ্রপাত হয়। ওই বজ্রপাতে যুবক রিপনের শরীর জ্বলসে ঘটনাস্থলেই নিহত হয়।
গত ২৭ এপ্রিল থেকে ৮ মে পর্যন্ত ১১ দিনে তিনজন কৃষক বজ্রপাতের নিহতের ঘটনায় কৃষক ও সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। মেঘের গর্জন শুনলেই কৃষকরা আতঙ্কে মাঠ থেকে সরে আসছেন। তারা মাঠে কাজ করতে যেতে ভয় পাচ্ছেন। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে সরকারিভাবে উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানিয়েছেন কৃষক জাফর ঘরামী ও আফজাল শরীফ।
কৃষক হক মৃধা বলেন, ‘আমরা খুবই আতঙ্কে আছি। মাঠে কাজ করতে যেতে ভয় হয়। গত ১১ দিনে তিনজন কৃষকের বজ্রপাতে প্রাণহানী ঘটেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ বছরের মত এমন বজ্রপাতের প্রাণহানি আগে হয়নি।’
বেসরকারী সংস্থা নজরুল স্মৃতি সংসদ (এনএসএস) এর নিবাহী পরিচালক পরিবেশবিদ অ্যাডভোকেট শাহাবুদ্দিন পান্না বলেন, ‘ঘন বজ্রপাত পরিবেশ বিপর্য়য়ের অন্যতম কারন। এ বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেতে হলে সরকারি ও বেসরকারিভাবে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। মানুষকে সচতন করে তুলতে হবে। বিশেষ করে বেশী বেশী করে তাল গাছ রোপন করতে হবে। কেননা তালগাছই বজ্রপাত রোধে মুখ্য ভুমিকা পালন করছে। তিনি আরো বলেন, ‘কৃষকদের সচেতন করতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে উদ্যোগ নিতে হবে।’
আমতলী উপজেলা নিবাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) তারেক হাসান বলেন, ‘মার্চ-এপ্রিল-মে এই তিন মাসে বজ্রপাত বেশি হয়। বজ্রপাতের সময়টাতে যতটা সম্ভব সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বিশেষ করে বৈশাখ মাসে উপজেলার বেশিরভাগ কৃষকরা রবি শস্য ও বোরো ধান তোলায় ব্যস্ত থাকেন। সেজন্য এই সময়টাতে বজ্রপাতে মৃত্যুটা বেশী হয়।’ তিনি আরো বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলো আবেদন করলে তাদের আর্থিকভাবে সহায়তা করা হবে।’
আরশি