
ছবি: সংগৃহীত।
পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানিয়েছেন, অচিরেই তিনটি প্লাস্টিক পণ্য নিষিদ্ধের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এর পাশাপাশি পলিথিন শপিং ব্যাগ পুরোপুরি নিষিদ্ধে বিলম্বের কারণও ব্যাখ্যা করেছেন তিনি।
সাম্প্রতিক এক বক্তব্যে তিনি জানান, ছোট প্লাস্টিক বোতল, স্ট্র এবং সসের প্যাকেট নিষিদ্ধের পরিকল্পনা প্রায় চূড়ান্ত। প্লাস্টিক প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলোর সাথেও এ বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, “এতটুকুন বোতল পানি খুলে অর্ধেক ফেলে চলে যাওয়া—এটা শুধু পানির অপচয় নয়, বরং প্লাস্টিকের ভয়াবহ স্রোতের অংশ। এখন তো মায়ের দুধ, গর্ভস্থ শিশুর প্লাসেন্টা, এমনকি রক্তে পর্যন্ত মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া যাচ্ছে।”
তিনি বলেন, বিজ্ঞানীরা গবেষণা করছেন, এসব মাইক্রোপ্লাস্টিক কি মানব মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহে বাধা তৈরি করে কিনা। বিষয়টি নিছক স্বাস্থ্যঝুঁকি নয়, বরং মানব সভ্যতার জন্য হুমকি।
প্লাস্টিক স্ট্র ব্যবহার নিয়ে তিনি প্রশ্ন তোলেন, “একটা স্ট্র দিয়ে কোল্ড ড্রিংকস খেয়ে নিজেকে স্টাইলিশ মনে হয়, অথচ সেই স্ট্র শত বছরেও নষ্ট হয় না। নদীতে গিয়ে মাছ খায়, আপনি সেই মাছ খান—এটাই বাস্তবতা।”
তিনি বলেন, “২০০২ সালে বাংলাদেশ বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করেছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত কাঁচাবাজারে এটি পুরোপুরি কার্যকর হয়নি।” এর পেছনে দুটি মূল কারণ তুলে ধরেন তিনি—একটি হলো জনসচেতনতার অভাব, অন্যটি মানসিকতা। অনেকেই এখনো নিজের ব্যাগ নিয়ে বাজারে যান না। আবার কেউ কেউ সামান্য রক্ত লেগে যাওয়া নিয়ে অস্বস্তি বোধ করেন।
পরিবেশ উপদেষ্টা জানান, পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ কর্তৃপক্ষের সাথে যৌথ উদ্যোগে পাটের ব্যাগ উৎপাদন করা হচ্ছে। এই ব্যাগগুলো সরকার সাবসিডাইজড দামে (৪০ টাকা) সরবরাহ করবে। এতে করে গ্রাহক স্বল্পমূল্যে প্লাস্টিকের বিকল্প পেতে পারেন।
তিনি সুপারশপগুলোর ভূমিকায় সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, তারা নিষেধাজ্ঞা মেনে চলায় সহায়ক হয়েছে। তবে প্রাণসহ অন্যান্য খাদ্যপণ্য কোম্পানিকেও ছোট সস প্যাকেট ও প্লাস্টিক মোড়ক থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
“প্লাস্টিক রাতারাতি বন্ধ করা সম্ভব নয়,” মন্তব্য করে তিনি বলেন, “তবে ধাপে ধাপে আমরা সেই পথেই এগোচ্ছি। বিকল্প ব্যবহার, সচেতনতা এবং সম্মিলিত ইচ্ছাই পারে পরিবেশকে রক্ষা করতে।”
নুসরাত