
ছবি: সংগৃহীত
ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাণিজ্য কমিশনার স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যেকোনো বাণিজ্য চুক্তি “সম্মান ও হুমকিমুক্ত পরিবেশে” হতে হবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউরোপীয় পণ্যের ওপর নতুন করে উচ্চহারে শুল্ক আরোপের হুমকি দেওয়ার পর তিনি এই মন্তব্য করেন।
ট্রাম্প ইউরোপীয় ইউনিয়নের সব পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপের প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, বাণিজ্য আলোচনা খুব ধীর গতিতে এগোচ্ছে। এই শুল্ক ১ জুন থেকে কার্যকর হতে পারে।
এক্স-এ দেওয়া এক পোস্টে ইইউ’র বাণিজ্য কমিশনার মারোশ শেফচোভিচ জানান, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ার এবং বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিকের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, “ইউরোপীয় ইউনিয়ন পুরোপুরি আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে এবং এমন একটি চুক্তি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যা উভয়ের জন্য কার্যকর হয়। ইইউ-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য সম্পর্ক তুলনাহীন, এবং এটি পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে পরিচালিত হওয়া উচিত, হুমকির ভিত্তিতে নয়। আমরা আমাদের স্বার্থ রক্ষা করতে প্রস্তুত।”
এর আগে ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যাল-এ লিখেছেন, “ইউরোপীয় ইউনিয়ন গঠনের প্রধান উদ্দেশ্যই ছিল যুক্তরাষ্ট্রকে বাণিজ্যে ঠকানো। তাদের সঙ্গে আলোচনা করা অত্যন্ত কঠিন।”
তিনি দাবি করেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক ২৫০ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে এবং আলোচনা “কোথাও যাচ্ছে না”। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদিত পণ্যে কোনো শুল্ক আরোপ হবে না, তবে কোনো ইউরোপীয় কোম্পানি যদি বড় বিনিয়োগ করে, তাহলে তিনি নিজের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে পারেন।
ইইউ যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। মার্কিন সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছর ইইউ যুক্তরাষ্ট্রে ৬০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য রপ্তানি করেছে এবং প্রায় ৩৭০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে এপ্রিলের শুরুতে ইইউ পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিল, তবে পরে তা অর্ধেকে নামিয়ে আনে আলোচনার উদ্দেশ্যে। স্টিল, অ্যালুমিনিয়াম এবং গাড়ির যন্ত্রাংশের ওপর শুল্ক এখনও বহাল রয়েছে। ট্রাম্প এবার ওষুধ, সেমিকন্ডাক্টরসহ অন্যান্য পণ্যের ওপরও একই ধরনের শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন।
ট্রাম্প আরও বলেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রিত অ্যাপল ও স্যামসাং ফোনের ওপর ২৫ শতাংশ কর আরোপ করতে পারেন, যা জুনের শেষ নাগাদ কার্যকর হতে পারে। দ্য গার্ডিয়ানের বরাতে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস জানিয়েছে, তার এই ঘোষণার পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের শেয়ারবাজারে পতন ঘটে।
ইউরোপীয় নেতারা এই সিদ্ধান্তে হতাশা প্রকাশ করেছেন। ফ্রান্সের বাণিজ্যমন্ত্রী লঁরা স্যাঁ-মার্তিন এক্স-এ লিখেছেন, “আমরা শান্তিপূর্ণ সমাধানের পক্ষেই আছি, কিন্তু প্রতিক্রিয়া জানানোর প্রস্তুতিও রয়েছে।”
ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তায়ানি সংবাদ সংস্থা আনসাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, তার লক্ষ্য “শূন্য-শূন্য শুল্ক” নীতিতে পৌঁছানো।
নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী ডিক স্কোফ সাংবাদিকদের বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় আগেও আমরা দেখেছি, শুল্ক বাড়তেও পারে, কমতেও পারে। এটাই তাদের কৌশলের অংশ।”
আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মিহায়েল মার্টিন বলেন, ট্রাম্পের প্রস্তাব “অত্যন্ত হতাশাজনক।” এক্স-এ তিনি লেখেন, “এমন উচ্চমাত্রার শুল্ক কেবল দাম বাড়াবে না, এটি বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ও গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক সম্পর্কগুলোর একটিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং বৈশ্বিক বাণিজ্যেও বিশৃঙ্খলা তৈরি করবে। এই পথে যাওয়া মোটেই দরকার নেই। আলোচনা-ই একমাত্র দীর্ঘস্থায়ী সমাধান।”
দ্য গার্ডিয়ান আরও জানায়, ইউরোপীয় পার্লামেন্টের বাণিজ্য কমিটির প্রধান বের্ন্ড ল্যাঙ্গে সতর্ক করে বলেছেন, ইউরোপ পাল্টা পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত। তিনি বলেন, “আমরা চাপের কাছে নত হব না। আলোচনা ব্যর্থ হলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন যথেষ্ট শক্তিশালী প্রতিশোধমূলক শুল্কসহ পাল্টা পদক্ষেপ নিতে, যাতে অর্থনৈতিক ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যায়।”
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
এএইচএ