নাইকো দুর্নীতি মামলা থেকে খালাস
প্রায় ১৮ বছর আগে দায়ের করা নাইকো দুর্নীতি মামলা থেকে খালাস পেলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ আটজন।
বুধবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক রবিউল আলমের আদালত এ আদেশ দেন। বিচারক তার পর্যবেক্ষণে বলেছেন, রাজনৈতিক কারণে এবং হয়রানি করার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ অপর আসামিদের জড়িত করা হয়েছে।
খালাস পাওয়া অন্য আসামিরা হলেন- সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দীন সিদ্দিকী, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সিএম ইউসুফ হোসাইন, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, বাগেরহাটের সাবেক সংসদ সদস্য এমএএইচ সেলিম ও নাইকোর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ।
গত বছরের ১৯ মার্চ খালেদা জিয়াসহ আট আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন বিচারক শেখ হাফিজুর রহমান।
চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। মামলায় ৬৮ সাক্ষীর মধ্যে ৩৯ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন আদালত। ১৩ ফেব্রুয়ারি আসামিদের আত্মপক্ষ শুনানি, যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের তারিখ ঠিক করেন।
বুধবার বেলা ১১ টা ২৪ মিনিটে রায় ঘোষণা করতে বিচারক এজলাসে ওঠেন। বিচারক বলেন, প্রশ্ন হতে পারে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে কীভাবে আসামির আত্মপক্ষ শুনানি করা হচ্ছে? ডিএলআরের ১৭ থেকে ২১ পর্যন্ত এ বিষয়ে বলা আছে। কোনো আসামি আইনজীবীর মাধ্যমে হাজিরায় থাকলে তার অনুপস্থিতিতে আত্মপক্ষ শুনানি করা যায়। আবার রায়ও দেওয়া যায়। সেই অনুযায়ী রায় দেওয়া হচ্ছে।
পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেছেন, একই ধরনের মামলা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেও ছিল। যেহেতু এ মামলা চলে নাই, তবুও এ মামলার ফুল ট্রায়াল হয়েছে। আসামি সেলিম ভূঁইয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এর আগে তিনি চারদিনের রিমান্ডে ছিলেন। তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদায় করা হয়। পরে অবশ্য তা প্রত্যাহারের আবেদন করা হয়।
সেখানেও বলেছেন তাকে শারীরিক, মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে।
বিচারক আরও বলেন, মামলা তেজগাঁও থানার, কিন্তু খালেদা জিয়াকে রাখা হয় গুলশান থানায়। সেখানে নির্যাতনের পর অসুস্থ হয়ে পড়লে, তাকে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। প্রসিকিউশনের পক্ষকে ডিনাই করছে। তাদের এটা জানাও নাই। রেকর্ডে দেখা গেছে, তাকে যে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল, বহির্বিভাগের টিকিটও আছে। তাকে বাইরে থেকে ওষুধও কিনে দেওয়া হয়, এর রসিদও আছে।
বিচারক তার পর্যবেক্ষণে বলেন, সেলিম ভূঁইয়াকে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। সে কারণে এই ১৬৪কে ট্রু বলার সুযোগ নাই। গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, কাশেম শরীফসহ অন্যদের জড়িত করার জন্য জোরপূর্বক এ ১৬৪ গ্রহণ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, কানাডীয় প্রতিষ্ঠান নাইকোর সঙ্গে ‘অস্বচ্ছ’ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতি ও দুর্নীতির অভিযোগে ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে এ মামলা করেন দুদকের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম। পরের বছর ২০০৮ সালের ৫ মে যে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়, তাতে রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতি করার অভিযোগ আনা হয় আসামিদের বিরুদ্ধে।
মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমদ ও সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন এবং বাপেক্সের সাবেক সচিব মো. শফিউর রহমান মারা যাওয়ায় অভিযোগ গঠনের সময় তাদের নাম মামলা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
