ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ৭ মাঘ ১৪৩১

১০ ডিসেম্বরের মধ্যে নিজ উদ্যোগে অপসারণ করতে হবে

রেলের সাড়ে ৬ হাজার একর জমি অবৈধ দখলে

ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ

প্রকাশিত: ২২:৩৪, ৫ ডিসেম্বর ২০২৪; আপডেট: ২২:৩৬, ৫ ডিসেম্বর ২০২৪

রেলের সাড়ে ৬ হাজার একর জমি অবৈধ দখলে

.

সারাদেশে রেলওয়ের সাড়ে ৬ হাজার একরের বেশি জমি অবৈধ দখলে রয়েছে। এসব জমি দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে রেলওয়ে। তাই যে সব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের স্থাপনা রেলওয়ে জমির ওপর রয়েছে তা নিজ উদ্যোগে আগামী ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে অপসারণের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছে রেলওয়ের কর্তৃপক্ষ। এই সময়ের পরে রেলওয়ে ভূমিতে অবৈধ দখলমুক্ত  এতে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়। বৃহস্পতিবার রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ভূমি শাখা থেকে এক গণবিজ্ঞপ্তিতে এই নিদের্শনা জানানো হয়।   
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সরকার বাংলাদেশ রেলওয়ের অবৈধভাবে দখলকৃত জমি দখলমুক্ত করার বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সে লক্ষ্যে বাংলাদেশ রেলওয়ের জমিতে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক অবৈধভাবে নির্মিত সকল স্থাপনা বা অবকাঠামো আগামী ১০ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখের মধ্যে নিজ উদ্যোগে অপসারণের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ প্রদান করা হলো। ওই সময়ের পর বাংলাদেশ রেলওয়ের ভূমি অবৈধ দখলমুক্তকরণে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশের রেলওয়ের মোট জমির পরিমাণ ৬১ হাজার ৮২১ একরের কিছু বেশি। এর মধ্যে ৩০ হাজার ২৮৬ একর রেলের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিভিন্ন সময় ৮ হাজার ৪৬৮ একর জমি দখলমুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে ৬ হাজার ৭২৭ দশমিক ৫০৮ একর জমি অবৈধ দখলে রয়েছে। বিভিন্ন সময় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৪ হাজার ৭১৯ একর। উদ্ধার করা জমি আছে ১ হাজার ৬১৮ একর। সবচেয়ে বেশি জমি অবৈধ দখলে আছে পাকশি বিভাগে। পাকশিতে অবৈধ দখলে থাকা জমির পরিমাণ ৫ হাজার ৩৫ একর।
এদিকে রেলয়ের ভূমির সঠিক ব্যবহারের জন্য ২০২০ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ রেলওয়ে ভূসম্পত্তি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা-২০২০ গেজেট প্রকাশ করা হয়। এই নীতিমালার ১৪ নম্বর ধারায় উল্লেখ করা হয়, রেলওয়ে ভূমির সীমানা সংরক্ষণ এবং অবৈধ নির্মাণাদির ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ। বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়ে অ্যান্ড ওয়ার্কস ম্যানুয়েল মোতাবেক সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী, ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (ওয়ে), উর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (আই), স্টেশন মাস্টার, বিভাগীয় ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা বাংলাদেশ রেলওয়ের ভূমির সীমানা সংরক্ষণ এবং অবৈধ নির্মাণাদির ব্যাপারে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। তবে প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট মহাব্যবস্থাপক এ ব্যাপারে আলাদাভাবে সতর্কীকরণ করে রেলের জমিজমা যথাযথ সংরক্ষণ এবং অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ নিশ্চিত করতে নির্দেশনা প্রদান করবেন। এ ক্ষেত্রে কর্তব্য কাজে অবহেলা বা উদ্দেশ্যমূলকভাবে দায়িত্ব পালন না করার জন্য রেলওয়ের দায়ী কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে।
নীতিমালার ১৩ নম্বর ধারায় উল্লেখ করা হয়, প্রতিটি অঞ্চলের প্রধান ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা অঞ্চল পর্যায়ে ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা হিসেবে অবৈধ দখলদার (তালিকা ওয়ারী) উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিভাগীয় ভূসম্পত্তি কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করে (জুলাই-জুন) মাসিক টার্গেট ধার্য করে কর্মপরিকল্পনা প্রস্তুত করে দেবেন এবং তিনি ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা হিসেবে কর্মপরিকল্পনার বাস্তবায়ন সরাসরি তত্ত্বাবধান করবেন। তার অধিক্ষেত্রের আওতায় রেলভূমিতে বিদ্যমান অবৈধ দখলদারদের বিধি মোতাবেক উচ্ছেদপূর্বক রেলভূমি বাংলাদেশ রেলওয়ে তথা সরকারের দখলে আনয়ন করতে হবে।
উচ্ছেদ কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক, প্রধান প্রকৌশলী ও মহাব্যবস্থাপক বিভাগীয় ভূসম্পত্তি কর্মকর্তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করবেন। উচ্ছেদ কার্যক্রমে রেলওয়ে পুলিশ এবং রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করবে। প্রয়োজনে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তা গ্রহণ করতে হবে। প্রধান ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা বিভাগীয় ভূসম্পত্তি কর্মকর্তাদের উচ্ছেদ কার্যক্রমের অগ্রগতি প্রতিবেদন সমন্বিত করে মন্তব্যসহ মহাপরিচালকের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে মাসিক অগ্রগতি প্রতিবেদন প্রেরণ করবেন। মহাপরিচালকের নিকট থেকে প্রাপ্ত প্রতিবেদন যুগ্মসচিব/অতিঃসচিব (ভূমি) পর্যালোচনাপূর্বক সমন্বিত করে উপযুক্ত নির্দেশনার জন্য সচিব, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের নিকট উপস্থাপন করবেন।
এ বিষয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব (আইন-১) মো. আলী আকবর জনকণ্ঠকে বলেন, ‘রেলওয়ে সারাদেশের অবৈধ দখল জমির বিষয়ে একটি গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। আগামী ১০ ডিসেম্বর মধ্যে যারা অবৈধ দখলদার তারা নিজ উদ্যোগে স্থাপনা অপসারণ করবে। এই সময়ের পরে রেলওয়ে পক্ষ সারাদেশে জমি উদ্ধারে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে এবং অবৈধ দখলদারের বিরুদ্ধে মামলাসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

×