উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান
কোনো পেশিশক্তি কিংবা ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের ওপর ভর করে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়নি বলে মন্তব্য করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। শনিবার রাজধানীতে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে দেশের প্রথম এনার্জি স্টোরেজ সিস্টেম (ইএসএস) যুক্ত সোলার এনার্জি ল্যাবের উদ্বোধন ও ‘দ্য রোল অব স্মার্ট গ্র্রিড ইন দ্য ফিউচার পাওয়ার সিস্টেম’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।
জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতা চর্চা নয়, ছাত্রদের অনুরোধে দায়িত্ব পালন করতে এসেছে। এক হাজারের বেশি তাজা প্রাণ আর ৩০ হাজার আহত মানুষের ত্যাগের বিনিময়ে দায়িত্ব নিয়েছি। সে সময় আমলাসহ বিভিন্ন সিন্ডিকেট দেশের মানুষকে হাতের পুতুলে পরিণত করেছিল। দেশটাকে মানুষের হাতে তুলে দিতে এসেছি।
হুয়াওয়ে-সিইআর ল্যাবটির অর্থায়ন করেছে হুয়াওয়ে। এই উদ্যোগের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো সৌরশক্তি খাতে সক্ষমতা বৃদ্ধি ও মানবসম্পদ উন্নয়ন করা। হুয়াওয়ে, সিইআর ও ইউআইইউ সম্মিলিতভাবে এই খাতের লক্ষ্য পূরণে প্রয়োজনীয় প্র্রশিক্ষণের পাঠক্রম তৈরি করবে। এই পাঠক্রমে নবায়নযোগ্য শক্তির ওপর গবেষণা ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের বিষয়ে অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
অনুষ্ঠানে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ইউএসএস সিস্টেমযুক্ত প্রথম সোলার ল্যাব উদ্বোধনের মাধ্যমে আমরা নবায়নযোগ্য শক্তি খাতে তরুণদের ক্ষমতায়নের জন্য বিশেষ এক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। এই উদ্বোধন বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ এক মাইলফলক। এই যৌথ উদ্যোগ চীনা প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগের মাধ্যমে স্থানীয় প্রতিভা বিকাশের পাশাপাশি ইউআইইউর সেন্টার ফর এনার্জি রিসার্চের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘস্থায়ী সহযোগিতা সম্পর্ক স্থাপনের একটি প্রতিফলন।
হুয়াওয়ে টেকনোলজিস (বাংলাদেশ) লিমিটেডের সিইও প্যান জুনফেং বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি যে, সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে অদূর ভবিষ্যতে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে আসতে বাংলাদেশ এরই মধ্যে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করছে। এই প্রেক্ষাপটে বলা যায়, ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত হুয়াওয়ে ডিজিটাল পাওয়ার বাংলাদেশের গ্রাহকদের জন্য ৬০০ মেগাওয়াটের বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন ডিজিটাল পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণে সহায়তা করেছে।
প্যান জুনফেং বলেন, এর মাধ্যমে ৪৩৭.৫ মিলিয়ন কিলোওয়াট-আওয়ার নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদিত হয়েছে এবং দুই লাখ সাত হাজার ৮৬৭ টন কার্বন নিঃসরণ হ্রাস হয়েছে, যা দুই লাখ ৮৪ হাজার ৪৫০টি গাছ লাগানোর সমতুল্য। আমরা বিশ্বাস করি, হুয়াওয়ে ও ইউআইইউর সেন্টার ফর এনার্জি রিসার্চের যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এই সোলার ল্যাবে শিক্ষার্থী ও পেশাজীবীদের নবায়নযোগ্য জ্বালানি সম্পর্কে শেখার, নিজেদের প্রস্তুত করার এবং এই খাতে অবদান রাখার বিশেষ সুযোগ তৈরি করবে।
ইউআইইউর সেন্টার ফর এনার্জি রিসার্চের (সিইআর) ডিরেক্টর শাহরিয়ার আহমেদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য শক্তির খাত দ্রুত বিকশিত হচ্ছে। আমরা পূর্বাভাস পাচ্ছি যে, সৌরশক্তি ক্রম সাশ্রয়ী হয়ে ওঠার ফলে আগামী বছরগুলোতে তিন হাজার থেকে চার হাজার পরিবেশবান্ধব নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। বর্তমানে এই খাতে দেশে উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখা যাচ্ছে।
নবায়নযোগ্য ও টেকসই জ্বালানির ক্ষেত্রে গবেষণা বৃদ্ধি, দক্ষ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার পাশাপাশি গবেষণা ও উন্নয়নের নীতি প্রণয়নের লক্ষ্যে ২০১০ সালে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে সিইআর প্রতিষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশে পল্লী বিদ্যুতায়নের জন্য প্রায় সব সোলার ডিজেল হাইব্রিড মিনি-গ্রিড ডিজাইন করেছে সিইআর, ইউআইইউ। এছাড়াও আইডিসিওল স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী সোলার পিভি যন্ত্রপাতির সার্টিফিকেশনের জন্য সিইআর বাংলাদেশ সোলার হোম সিস্টেম (এসএইচএস) যন্ত্রপাতির অন্যতম পরীক্ষামূলক প্রতিষ্ঠান। এখন পর্যন্ত এই ল্যাবে ৭৫০টিরও বেশি সোলার পিভি সরঞ্জাম পরীক্ষা করা হয়েছে। এর উদ্ভাবনী গবেষণা কাজের জন্য ইউআইইউর সেন্টার ফর এনার্জি রিসার্চ ২০১৬ সালে জাতিসংঘের মোমেন্টাম ফর চেঞ্জ অ্যাওয়ার্ডসহ আটটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার এবং চারটি জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছে। সিইআরের অধীনে অত্যাধুনিক গবেষণাগারটি নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে পরীক্ষা ও গবেষণা চালিয়ে যাবে।
এই ল্যাব সোলার সিস্টেমের পাশাপাশি এনার্জি স্টোরেজ সিস্টেম (ইএসএস) সরবরাহ করতে সক্ষম, যা শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে শেখার সুযোগ বাড়িয়ে তুলবে।