ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১২ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২

শাহাদাতবার্ষিকীতে সংহতি সমাবেশে বক্তারা 

আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আবরার অগ্রগামী সৈনিক

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:৩৩, ৭ অক্টোবর ২০২৪

আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আবরার অগ্রগামী সৈনিক

আবরার ফাহাদের ৫ম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে সোমবার শাহবাগে ছাত্র-জনতার সংহতি সমাবেশ

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) তড়িত প্রকৌশল বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের ৫ম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে নানা কর্মসূচি পালিত হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সোমবার দিনভর বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও সামাজিক সংগঠনের আয়োজনে এসব কর্মসূচি পালিত হয়। এ সময় আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানান আয়োজকরা।  
সোমবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে আবরার ফাহাদের শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে নিরাপদ বাংলাদেশ চাই প্ল্যাটফর্মের আয়োজনে ছাত্র-জনতার সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী, ঢাবি শাখা ছাত্র শিবিরের সভাপতি সাদিক কায়েম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক  হাসনাত আবদুল্লাহ, একতার বাংলাদেশের মুখপাত্র তাহমিদ আল মুদাসসির চৌধুরী, বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের আব্দুল ওয়াহেদ, এবি পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সভাপতি আবু সাদিক কায়েম বলেন, শহীদ আবরার আমাদের জাতীয় সার্বভৌমত্বের প্রতীক। তিনি আধিপত্যবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অগ্রগামী সৈনিক। ফ্যাসিস্ট হাসিনা গত ১৬ বছরে বাংলাদেশকে ভারতের কলোনিতে পরিণত করেছিল। ফ্যাসিস্ট সরকার সাংস্কৃতিক গোলামি, রাজনৈতিক নিপীড়নের মাধ্যমে আমাদের শোষণ করেছে। যারা এসবের বিরুদ্ধে কথা বলেছে তাদের নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে, অনেককে জীবন দিতে হয়েছে। 
তিনি বলেন, গত ১৬ বছর বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছে ছাত্রশিবির। প্রতিটি ক্যাম্পাসে শিবিরের নেতাকর্মীদের ওপর আক্রমণে অনেকে শহীদ হয়েছে। আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মী পঙ্গুত্ববরণ করেছেন। শুধু তাই নয়, আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলার পর স্বৈরাচারের দোসররা আবার আমাদের বিরুদ্ধেই মামলা দিয়েছে। আবরার ফাহাদের শহীদ ও ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের পর আমরা আমাদের মৌলিক অধিকার ফিরে পেয়েছি। আমরা কথা বলা ও প্রকাশ্য রাজনীতি করার সুযোগ পেয়েছি। এ সময় তিনি শহীদ আবরার ও জুলাই বিপ্লবে শহীদদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের ওপর অটল থাকার জন্য সবাইকে আহ্বান জানান। 
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে বলতে শোনা যায়, তারা আওয়ামী লীগকে ক্ষমা করে দিয়েছে। আমরা বলতে চাই, গত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগ যেসব অপরাধ করেছে, মানুষের গলা চেপে ধরেছে, আইন আদালতকে নিজের মতো বানিয়েছে, মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে, শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করেছে, আগামী ১০০ বছর জেল খাটলেও তাদের শাস্তি পূর্ণ হবে না। তিনি আরও বলেন, আপনারা যদি কখনো দেশে ফিরতে চান আপনাদের প্রত্যেকের বিচার নিশ্চিত করে ছাত্র-নাগরিক সিদ্ধান্ত নিবে আপনারা দেশে থাকতে পারবেন কি-না। 
ছাত্র-নাগরিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে ২৪ পরবর্তী বাংলাদেশ যতদিন থাকবে ততদিন এ দেশে ফ্যাসিবাদের দোসর, লাঠিয়াল বাহিনী ও সহযোগীদের পুনর্বাসন হবে না। আপনারা টুপ করে এ দেশে ঢুকে যাবেন এই আশা বাদ দিয়ে দেন। 
হত্যাকা-ে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়ে আবরার ফাহাদের বাবা বলেন, আমার ছেলেকে আজকের এই দিনে দীর্ঘ ৫ ঘণ্টা অত্যাচারের পর হত্যা করা হয়েছিল। আমার ছেলে অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলেছিল বলেই তাকে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা হত্যা করে। আমি চাই যারা আমার ছেলের হত্যায় জড়িত ছিল তাদের সর্বোচ্চ বিচার নিশ্চিত করা। তাদের শাস্তি যেন কমানো না হয়। প্রশাসনের কাছে দাবি জানাব, ভবিষ্যতে যেন আমার ছেলের মতো কাউকে জীবন দিতে না হয় সেজন্য প্রশাসনের সতর্ক থাকা উচিত। 
এদিন দুপুরে আবরার ফাহাদের শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে নিরাপদ ও মুক্তবুদ্ধি চর্চা গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাসের দাবিতে ঢাবি ক্যাম্পাসে মৌন মিছিল ও স্মরণ সভা করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। মিছিলটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শুরু হয়ে কার্জন হল, দোয়েল চত্বর হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে। এ সময় আবরার ফাহাদ স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। ঢাবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন বলেন, আবরার ফাহাদ ছিলেন দেশপ্রেমিক ছাত্র, যাকে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা নির্মম নির্যাতনের মাধ্যমে শহীদ করে। আমরা তার স্মরণে মৌন মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করেছি। আমরা এর মাধ্যমে নিরাপদ ও মুক্তবুদ্ধি চর্চার গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাস চাই যেখানে রাজনীতি হবে শিক্ষার্থীবান্ধব ও সহনশীল এবং এখানে কোনো শিক্ষার্থী নির্যাতনের শিকার হবে না।
এদিকে জুলাই বিপ্লবের অন্যতম নায়ক আবরার ফাহাদ বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম। সোমবার রাজধানীর হাতিরপুলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিবিরের কার্যালয়ে শহীদ আবরার ফাহাদের স্মরণে এক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। এ সময় তিনি বলেন, আধিপত্যবাদ ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে কথা বলার ফলে শিবির ট্যাগ দিয়ে ফ্যাসিবাদের সন্ত্রাসী বাহিনী ছাত্রলীগ কর্তৃক রাতভর নির্যাতনে শহীদ হন আবরার ফাহাদ। দুঃশাসন, নির্যাতন, নিপীড়নের মাধ্যমে আমাদের এই জাতিকে নিঃশেষ করা হয়েছে। এর ফলেই আধিপত্যবাদ ও ফ্যাসিবাদবিরোধী চেতনা ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং নিপীড়নের বিরুদ্ধে মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। তারই বহিঃপ্রকাশ আজকের নতুন বাংলাদেশ। ধারাবাহিক অনেক ঘটনার মধ্য দিয়েই জুলাই বিপ্লবের প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে। এর অন্যতম নায়ক শহীদ আবরার ফাহাদ।

×