ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৮ ভাদ্র ১৪৩১

প্রেস ব্রিফিংয়ে সেনাপ্রধান

সবাইকে নিয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে সক্ষম হব

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:১১, ৮ আগস্ট ২০২৪

সবাইকে নিয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে সক্ষম হব

জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান

সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে। সবাইকে নিয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আমরা এগিয়ে যেতে সক্ষম হব। শিক্ষার্থীরাও সুন্দরভাবে সড়কে কাজ করছে। যারা এ সময় লুটতরাজ করেছেন তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে। একইসঙ্গে দেশবাসীকে গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। বুধবার বিকেল পৌনে ৬টার দিকে সেনা সদরে বিফ্রিংয়ে এ তথ্য জানান সেনাপ্রধান।
পদত্যাগ করে শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার পর তিনদিন দেশে নেই কোনো সরকার। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিয়ে দুইদিন হয়েছে নানা আলোচনা-পর্যালোচনা। দফায় দফায় রাষ্ট্রপতির বাসভবনে হয়েছে বৈঠক। অবশেষে আজ বৃহস্পতিবার রাতে গঠন হতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে এই সরকারের আকার ১৫ জন হতে পারে। 
ব্রিফিংয়ে সেনাপ্রধান বলেন, প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তার সঙ্গে কথা বলে খুব ভালো লেগেছে। আমার কাছে মনে হয়েছে, তিনি অত্যন্ত আগ্রহী কাজটি করার জন্য। আমি আশা করি তিনি আমাদেরকে সুন্দর একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নিতে যেতে সক্ষম হবেন। আমরা এ থেকে উপকৃত হব।
শিক্ষার্থী ও স্বেচ্ছাসেবীরা চমৎকার কাজ করছে উল্লেখ করে ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, যেহেতু এখন ট্রাফিক পুলিশ নেই। তাই শিক্ষার্থীরা সড়কে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। রাস্তা পরিষ্কার করছে। যেসব স্থাপনায় তছনছ করা হয়েছে সেগুলো পরিচ্ছন্ন করছে। আমরা আনন্দিত তারা এই ভালো কাজগুলো চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা তাদেরকে অনুরোধ করব এই কাজগুলো যেন তারা চালিয়ে যায়।
বিভিন্ন জায়গায় এবং ঢাকার বাইরে যে সমস্ত লুটতরাজ ও অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে, সেগুলো প্রতিহত করার জন্য আমি তাদেরকে অনুরোধ করেছিলাম। তারা সে কাজগুলোও করছে। আমি নিশ্চিত, আমরা সবাই মিলে একটি সুন্দর ও স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে আবার ফিরে আসতে পারব।
এ সময় তিনি বলেন, আপানারা জানেন কেয়ারটেকার গভর্নমেন্টের প্রধান হিসেবে আমরা ড. ইউনূসকে নির্বাচন করেছি নিজেদের মধ্যে অনেক আলোচনা করে। সেখানে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি, বিমান বাহিনী প্রধান, নৌ বাহিনী প্রধান ও রাষ্ট্রপতির সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে।

এর ফলশ্রুতিতে আমরা সর্বসম্মতভাবে ড. ইউনূসকে প্রস্তাব দিয়েছি। তিনি এখন আমাদের চিফ অ্যাডভাইজার। তিনি বৃহস্পতিবার দুপুর নাগাদ দেশে এসে পৌঁছাবেন। আমি তাঁকে রিসিভ করতে যাব। আমরা তাঁকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব।
অনেক ধরনের গুজব চলছে উল্লেখ করে সেনাপ্রধান বলেন, আমি জনগণকে আহ্বান করব এ ধরনের গুজবে যেন কান না দেয়। আমরা একটা চমৎকার পরিবেশে সুন্দরভাবে সবাই মিলে কাজ করে যাচ্ছি। আমার সেনাবাহিনী নিয়ে বিভিন্ন সেনানিবাসে বিভিন্ন কিছু হচ্ছে এমন গুজব ছড়ানো হচ্ছে। এসবে আপনারা কান দেবেন না। গুজব ছড়াতেও কেউ সাহায্য করবেন না। কোনোকিছু নিশ্চিত না হয়ে এসব খবর দেওয়া থেকেও আপনারা বিরত থাকবেন।
পুলিশের পুনর্গঠন নিয়ে কাজ চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পুলিশ প্রধান নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমি নিশ্চিত যে পুলিশের মনোবল আবার ফেরত আসবে। পুলিশ প্রফেশনাল ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হবে। আমি আপনাদের সকলকে নিশ্চিত করতে চাই, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনী সর্বদা জনগণের সঙ্গে আছে ও থাকবে। এবং আমরা সবার সঙ্গে মিলে কাজ করে যাব। আমরা সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে পৌঁছাতে পারব বলে আমি বিশ^াস রাখি। একইসঙ্গে দায়িত্বপূর্ণভাবে সংবাদ পরিবেশনের জন্য গণমাধ্যমের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
শপথ গ্রহণের বিষয়ে তিনি বলেন, অনেকের থেকে প্রস্তাব ছিল, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন বিকেলে করার। কিন্তু যেহেতু ড. ইউনূস দুপুরে আসবেন। সে কারণে শিডিউল টাইট হয়ে যাবে। যে কারণে আমরা রাত আটটায় এটি করতে পারি। এখানে ৪শ’ জনের মতো উপস্থিত থাকবেন বলেও তিনি জানান।
দেশের নিরাপত্তায় সেনাপ্রধান আগেই দায়িত্ব নিয়েছিলেন। এরপরও বিভিন্ন জায়গায় ডাকাতি ও লুটতরাজ হচ্ছে। সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে সেনাপ্রধান বলেন, আমি রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে সাহায্য করার কথা জানিয়েছিলাম। তারাও আমাদেরকে সাহায্য করার আশ^াস দিয়েছিলেন। এরপরও কিছু ঘটনা ঘটেছে। তবে এই মুহূর্তে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসছে।
পুলিশ এখন ডিউটিতে নেই জানিয়ে তিনি বলেন, পুলিশের একটি বড় ফোর্স যেটার অভাব সৃষ্টি হয়েছে। এই অভাব সেনাবাহিনীর স্ট্রেন্থ দিয়ে পূরণ করা সম্ভব না। এরপরও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। হাজার হাজার মানুষকে সমস্যা থেকে আমরা উদ্ধার করেছি। বহু পুলিশকে আমরা রেসকিউ করেছি।

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিমানবন্দর, কূটনীতিক পাড়া, সচিবালয়, তাদের আবাসনের জায়গা, বিচারপতি ও তাদের ভবনসহ নানা স্থাপনায় আমার নিরাপত্তা দিচ্ছি। সারাদেশেই আমাদের টহল চলছে। এরপরও যেটা হয়েছে তার জন্য আমি দুঃখিত ও বিব্রত। পুলিশ পুনর্গঠন হয়ে যাবে ও মাঠে নেমে যাবে তখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। আমি একটি কথা বলতে চাই, যারা এ ধরনের কাজে জড়িয়েছে, তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে। আমরা আনসার ভিডিপিকে মাঠে নামিয়েছি। শিক্ষার্থীরা সাহায্য করছে, আমার যত ফোর্স আছে তারা সব ডিপ্লয়।
সেনাপ্রধান বলেন, রাজনীতিবিদরা আমাকে দায়িত্ব নিতে বললেন। আমি ছাড়া কেউ দায়িত্ব নেওয়ারও নেই। যদি কোনো ব্যর্থতা থাকে তার দায়-দায়িত্বও আমার। আমি আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। খুব কম সময়ের মধ্যে একটি স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে এসেছে। আমাদের আরেকটু সময় দিন আমরা সবকিছু সম্পূর্ণ স্বাভাবিকে নিয়ে আসব।

×