ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১

দেশবাসীর উদ্দেশে ড. ইউনূসের বার্তা

ভুলের কারণে বিজয় যেন হাতছাড়া হয়ে না যায়

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:০৫, ৮ আগস্ট ২০২৪

ভুলের কারণে বিজয় যেন হাতছাড়া হয়ে না যায়

ড. মুহাম্মদ ইউনূস

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার জন্য মনোনীত অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশবাসীর উদ্দেশে একটি বার্তা দিয়েছেন। এই বার্তায় তিনি বলেছেন, আমাদের কোনো প্রকার ভুলের কারণে আমাদের এই বিজয় যেন হাতছাড়া হয়ে না যায়। আমি সবাইকে বর্তমান পরিস্থিতিতে শান্ত থাকতে এবং সব ধরনের সহিংসতা এবং স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ বিনষ্ট করা থেকে বিরত থাকতে আহ্বান জানাচ্ছি।

চিকিৎসার জন্য বর্তমানে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অবস্থানরত ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে দেশে ফিরবেন। তিনি আসার পর রাত আটটায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শপথ অনুষ্ঠিত হবে। এই পরিস্থিতিতে বুধবার দুপুরে ইউনূস সেন্টারের পক্ষ থেকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের একটি বক্তব্য গণমাধ্যমে পাঠানো হয়। তাতে সরকার পতনের আন্দোলনে নেতৃত্বে দেওয়া ছাত্রনেতাদের পাশাপাশি দেশের আপামর জনসাধারণকে অভিনন্দন জানিয়েছেন তিনি।

ড. ইউনূস বলেছেন, আমি সাহসী ছাত্রদের অভিনন্দন জানাই, যারা আমাদের দ্বিতীয় বিজয় দিবসকে বাস্তবে রূপ দিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং অভিনন্দন জানাই দেশের আপামর জনসাধারণকে, যারা ছাত্রদের এই আন্দোলনে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছেন।
নতুন এই বিজয়ের সর্বোত্তম সদ্ব্যবহার নিশ্চিতে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে শান্তিতে নোবেলজয়ী ইউনূস বলেছেন, আমাদের কোনো প্রকার ভুলের কারণে আমাদের এই বিজয় যেন হাতছাড়া হয়ে না যায়। আমি সবাইকে বর্তমান পরিস্থিতিতে শান্ত থাকতে এবং সব ধরনের সহিংসতা এবং স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ বিনষ্ট করা থেকে বিরত থাকতে আহ্বান জানাচ্ছি।
ছাত্র-দলমতনির্বিশেষে সবাইকে শান্ত থাকার জন্য অনুরোধ জানিয়ে মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আমাদের প্রিয় এই সুন্দর ও বিপুল সম্ভাবনাপূর্ণ দেশটিকে আমাদের নিজেদের ও পরবর্তী প্রজন্মের জন্য রক্ষা করা এবং একে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই এখন আমাদের প্রধান কাজ। একটি নতুন পৃথিবী বিনির্মাণে আমাদের তরুণরা প্রস্তুত। অকারণ সহিংসতা করে সুযোগটি আমরা হারাতে পারি না।
সব ধরনের সহিংসতা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে ইউনূস বলেছেন, ‘সহিংসতা আমাদের সবারই শত্রু। অনুগ্রহ করে শত্রু সৃষ্টি করবেন না। সবাই শান্ত থাকুন এবং দেশ পুনর্গঠনে এগিয়ে আসুন। অনুগ্রহ করে নিজে শান্ত থাকুন এবং আপনার আশপাশের সবাইকে শান্ত থাকতে সহায়তা করুন।’
এদিকে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার এখন বাংলাদেশের সামনে সবচেয়ে বড় বিষয়। যদি তা অর্জন করা না যায়, তা হলে ভারতসহ প্রতিবেশী দেশগুলোতে এর প্রভাব পড়বে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, এখন যেহেতু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে, পরিস্থিতি উন্নতির দিকে মোড় নিয়েছে। এখন দেশকে নিশ্চিত করতে হবে যেন এটার উদযাপন খারাপ পরিণতির দিকে না নিয়ে যায়। উদযাপনের পর সবার ঘরে ফিরে যাওয়া উচিত এবং সবার সকল কাজ যথারীতি করা উচিত। বিক্ষোভকারীদের কারা নিয়ন্ত্রণ করছে এবং তাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে এর পরিণতি কতটা গুরুতর হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা খুব একটা সুখকর পরিস্থিতি হবে না।
ড. ইউনূস বলেন, আপনি যদি বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করেন, তা মিয়ানমারসহ বাংলাদেশের চারপাশে ছড়িয়ে পড়বে এবং পশ্চিমবঙ্গের সেভেন সিস্টার্সের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে। তিনি আরও বলেন, এটি আমাদের চারপাশে এবং মিয়ানমারের সর্বত্র একটি আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত হবে... এবং এটি একটি বড় সমস্যা হবে। কারণ এখানে এক মিলিয়ন রোহিঙ্গা রয়েছে।
এক প্রশ্নের উত্তরে ড. ইউনূস বলেন, দেশে ১৭ কোটি মানুষ আছে, যাদের অধিকাংশই তরুণ; যারা কখনো ভোট দেয়নি। আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে যে, তারা সুখী, আইন মান্যকারী নাগরিক এবং তারা জানে একটি গণতন্ত্র আছে। এই তরুণরা তাদের জীবনে কখনো ভোট দেয়নি। তারা কখনোই ভোট কেন্দ্রে যায়নি, কারণ নির্বাচন কখনোই হয়নি। আমাদের তরুণদের সঙ্গে কথা বলতে হবে।
আপনি কি মনে করেন, এই সময়ে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা আবারও সিস্টেমেটিক হামলার শিকার হতে পারে এমন প্রশ্নের উত্তরে ড. ইউনূস বলেন, গণতান্ত্রিক দেশে তাদের কণ্ঠস্বর থাকবে, তাদের কথা আমলে নেওয়া হবে। ভারতে যেমনটা নেওয়া হয়-সংখ্যালঘুরা ভোট দিয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থী নির্বাচন করতে পারবেন।
উল্লেখ্য, ছাত্র-জনতার ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে সোমবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা। এর পর সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান গণমাধ্যমকে বলেন, রাষ্ট্রপতির পরামর্শে সেনাবাহিনী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করবে। তিনি বিক্ষোভকারীদের দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করার আবেদনও জানান।
পরে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধান এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের বৈঠকের পর নোবেলবিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।

×