ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে রাজনৈতিক দল, তিন বাহিনী প্রধান, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের বৈঠকের পরিপ্রেক্ষিতেই সিদ্ধান্ত

জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৩:১৪, ৬ আগস্ট ২০২৪

জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা

জাতীয় সংসদ ভবন চত্বর পরিষ্কার করছেন শিক্ষার্থীরা

প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর তিন বাহিনীর প্রধান ও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এই সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি মঙ্গলবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করেছেন। 
বঙ্গভবন থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, তিন বাহিনী প্রধান, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের বৈঠকের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে সংসদ বিলুপ্ত করা হয়েছে। 
রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন জানান, বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া ১ জুলাই ২০২৪ হতে ৫ আগস্ট ২০২৪ পর্যন্ত বিভিন্ন মামলায় আটককৃতদের মুক্তি দেওয়া শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেকে মুক্তি পেয়েছে। 
এর আগে বিকেল তিনটার মধ্যে জাতীয় সংসদ ভেঙে না দিলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এক ভিডিও বার্তায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম এই ঘোষণা দেন। এ সময় তার সঙ্গে আরও দুই সমন্বয়ক আসিম মাহমুদ ও আবু বাকের মজুমদার উপস্থিত ছিলেন। 
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে সোমবার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের পর দেশ ছেড়ে ভারতে যান শেখ হাসিনা। তার পদত্যাগের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার টানা ১৫ বছরের শাসনামলের অবসান হয়। শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর দেশ পরিচালনার জ্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে সোমবার বিকেলে বঙ্গভবনে তিন বাহিনীর প্রধানদের উপস্থিতিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

যা আছে সংসদ ভেঙে দেওয়ার সার-সংক্ষেপে ॥ সংসদ ভেঙে দেওয়ার আগে আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিভাগের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) ড. হাফিজ আহমেদ চৌধুরী এ সংক্রান্ত সার-সংক্ষেপ উপস্থাপন করেন। এতে বলা হয়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়। ৩০ জানুয়ারিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র প্রদান করে দেশ ত্যাগ করেন।
সার-সংক্ষেপে বলা হয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৪৮ (৩) অনুচ্ছেদে (সংলাপ-১) বিধান রয়েছে যে, ‘এই সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদের (৩) দফা অনুসারে কেবল প্রধানমন্ত্রী ও ৯৫ অনুচ্ছেদের (১) দফা অনুসারে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্র ব্যতীত রাষ্ট্রপতি তাঁহার অন্য সকল দায়িত্ব পালনে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কার্য করিবেন; তবে শর্ত থাকে যে, প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে আদৌ কোনো পরামর্শদান করিয়াছেন কিনা এবং করিয়া থাকিলে কি পরামর্শ দান করিয়াছেন, কোনো আদালত সে সম্পর্কে কোনো প্রশ্নের তদন্ত করিতে পারিবেন না’।
সার-সংক্ষেপের তৃতীয় অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখে পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করায় মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক তাঁর সঙ্গে পরামর্শ গ্রহণের কোনো সুযোগ নেই। তাই সাংবিধনিক সট মোকাবিলা, জনস্বার্থ, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক জীবন যাতে বিপদের সম্মুখীন না হয় সে জন্য মহামান্য রাষ্ট্রপতি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৪৮ (৩) অনুচ্ছেদের অধীন তাঁর বিচক্ষণতা/সহজাত ক্ষমতা প্রয়োগ করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভাঙ্গিয়া দিতে পারেন।

এতে আরও বলা হয়, রুলস অব বিজনেস, ‘১৯৯৬ এর সিডিউল ফোর (সংলাপ-২) এর অধীন জাতীয় সংসদ ভাঙ্গিয়া দেওয়ার বিষয়টি মহামান্য রাষ্ট্রপতির নিকট উপস্থাপন সংসদ সচিবালয়ের কর্মপরিধিভুক্ত। যেহেতু তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলা করা প্রয়োজন, সেহেতু রুলস অব বিজনেস, ১৯৯৬-এর রুল ৩৩ (সংলাপ-৩) এর আওতায় জনস্বার্থে, মহামান্য রাষ্ট্রপতি অনুচ্ছেদ ৩-এ বর্ণিত অবস্থাধীনে সমীচীন বিবেচনায় রুল অব বিজনেস ১৯৯৬ এর সিডিউল ফোর-এর ব্যতিক্রম সদয় অনুমোদনপূর্বক দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভাঙ্গিয়া দেওয়ার লক্ষ্যে মহামান্য রাষ্ট্রপতি বিজ্ঞপ্তি জারি করতে পারেন। অনুচ্ছেদ ৪ এর প্রস্তুাব মহামান্য রাষ্ট্রপতির সানুগ্রহ বিবেচনা এবং অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হলো।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এই সার-সংক্ষেপে স্বাক্ষরের মাধ্যমে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করেন।

×