ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৬ মার্চ ২০২৫, ১২ চৈত্র ১৪৩১

এক সপ্তাহ বন্ধ থাকায় পরিবহন খাতের বিপুল ক্ষতি

সীমিত পরিসরে চালু হয়েছে বাস ও পণ্যবাহী ট্রাক

ইবরাহিম মাহমুদ আকাশ

প্রকাশিত: ২৩:৫০, ২৩ জুলাই ২০২৪

সীমিত পরিসরে চালু হয়েছে বাস ও পণ্যবাহী ট্রাক

কার্ফু শিথিল হওয়ার পর মঙ্গলবার দুপুর ২টায় রাজধানীর ফার্মগেট এলাকার দৃশ্য

কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের সহিংসতা ও কার্ফু জারি থাকায় গত এক সপ্তাহ যাবৎ বন্ধ রয়েছে সারাদেশের গণপরিবহন ব্যবস্থা। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে বাস ও ট্রাকসহ বিভিন্ন পরিবহনে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়েছে। এর ফলে বিপুল পরিমাণ ক্ষতির মুখে পড়ছে পরিবহন খাত। এদিকে  বাস, ট্রেন ও লঞ্চ সার্ভিস বন্ধ থাকায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। তবে মঙ্গলবার থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাহারায় ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-নোয়াখালী, ঢাকা-গাজীপুর ও ময়মনসিংহ মহাসড়কে সীমিত পরিসরে বাস এবং পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল করছে বলে স্থানীয়রা জানান। 
সারাদেশে প্রায় ৪ লাখ বাস ও পণ্যবাহী ট্রাকের মধ্যে বেশিরভাগই বন্ধ রয়েছে বলে সড়ক পরিবহন মালিক পক্ষ থেকে জানানো হয়। তবে ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের সুযোগে সারাদেশে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসী তা-বের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয় সংগঠনের পক্ষ থেকে। পরিবহন মালিক সমিতির পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কোটাবিরোধীদের আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণির সন্ত্রাসী, দুষ্কৃতকারী তথা বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসী দেশের বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগসহ তা-বলীলা চালিয়েছে। বিটিভিসহ রাষ্টীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও গণপরিবহনে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এই সন্ত্রসীরা যেন আর কোনো তা-বলীলা চালাতে না পারে সেজন্য প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মশিউর রহমান রাঙ্গা ও মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ।
এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির যুগ্ম মহাসচিব খন্দকার সামদানী জনকণ্ঠকে বলেন, ‘কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের সুযোগে সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসী তা-বলীলা চালানো হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে পরিবহন খাতের। তবে এখন পর্যন্ত কি পরিমাণ বাস, ট্রাকে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়েছে হয়েছে এর পরিসংখ্যান এখনো তৈরি করা হয়নি। ঢাকার সঙ্গে সারাদেশের যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। সারাদেশে ৪ লাখ বাস-ট্রাকের মধ্যে বেশিরভাগই বন্ধ। তবে মঙ্গলবার থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী সড়কে সীমিত পরিসরে যানবাহন চলাচলা শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি। 
ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষ ॥ এদিকে বাস, ট্রেন, লঞ্চ সার্ভিস বন্ধ থাকায় মহাভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। রাজধানীতে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ভোগান্তির শেষ নেই কর্মজীবী মানুষের। পাশাপাশি গণপরিবহন সংকটের মহাভোগান্তিতে পড়েছেন বিদেশগামী যাত্রীরা। এ ছাড়া অসুস্থ রোগীদের নিয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন পরিবারের লোকজন। অনেকেই চিকিৎসার জন্য ঢাকায় এসে আটকা পড়েছেন। আত্মীয়-স্বজনের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে গ্রামের যেতে পারছেন না অনেকেই। একদিকে আন্দোলনকারীদের সহিংসতা অপরদিকে বিভিন্ন সড়কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষেধাজ্ঞা ও জিজ্ঞাসাবাদের কারণে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন রাজধানীবাসী।

সরেজমিন রাজধানীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, মঙ্গলবার সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কগুলোতে গণপরিবহন ছিলো কম। নগরীর প্রধান প্রধান সড়কে রিক্সা, মোটরসাইকেল, সিএনটি অটোরিক্সা চলাচল করতে দেখা গেছে। তবে কোনো কোনো সড়কে দুপুরের পরে দুই-একটি বাস চলাচল করতে দেখা গেছে। অতি জরুরি প্রয়োজনে যারা ঘর থেকে বের হয়েছেন বিভিন্ন সড়কে তাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে হয়েছে।

সন্তোষজনক জবাব না পেলে তাদের ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। তবে চিকিৎসার জন্য যারা রোগীদের নিয়ে বের হয়েছেন তাদেরও বিভিন্ন সড়কে জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে হয়েছে। বাস-মিনিবাসসহ গণপরিবহন বন্ধ থাকায় রিক্সা ও অটোরিক্সা এখন নগরবাসীর একমাত্র ভরসা হয়ে দাঁড়িয়ে। অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া অভিযোগ করেন যাত্রীরা। তাই অতিদ্রুত এই দুর্ভোগ থেকে পরিত্রাণ চান রাজধানীরবাসী।
সীমিত পরিসরে চলছে আন্তঃজেলা বাস ॥ কোটা সংস্কারের দাবিতে গত বৃহস্পতিবার থেকে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করে আন্দোলনকারীরা। শুক্রবারও তাদের একই কর্মসূচি ছিল। এই কর্মসূচিতে কেন্দ্র করে সারাদেশে জ¦ালাও পোড়ায়, সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ, সরকারি স্থাপনায় আগুন দেওয়াসহ সারাদেশে সহিংসতা ও নাশকতা চালিয়ে আন্দোলনকারীরা। এই নাশকতা ও সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে গত শুক্রবার রাত ১২টা থেকে সারাদেশে কার্ফু জারি করে সেনাবাহিনী মাঠে নামায় সরকার।

গত চারদিন যাবৎ সারাদেশে চলছে কার্ফু। তাই গত এক সপ্তাহ যাবত সারাদেশে বাস, ট্রেন ও লঞ্চসহ সকল গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। এতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে দেশবাসীর। তবে মঙ্গলবার থেকে   ঢাকা-চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে সীমিত পরিসরে বাস সার্ভিস চলাচল করছে বলে স্থানীয়রা জানান।

×